কালের বিবর্তনে ঐতিহ্যবাহী ঝাঁকিজাল ফেলে মাছ ধরার প্রচলন বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিন্তু বাঙালির এক সময় মাছ ধরার মূল উপকরণ ছিল এই ঝাঁকিজাল। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন খাল, ডোবা-নালা দখল নিয়ে ভরাট করায় মাছ ধরার সুযোগ একেবারে সংকুচিত হয়ে এসেছে। ফলে ঝাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরার দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়েনা।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনূর রহমান বলেন, ঝাঁকিজালে মা মাছ ও পোনা মাছ তুলনামূলক কম আটকায়। পেশাদার জেলেরা ঝাঁকিজাল ব্যবহার করলে জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলাসহ চলনবিলে পানি শুকিয়ে গেছে। বিলের মধ্যকার কাটা গাংয়ে জেলেদের পাশাপাশি সখের বশে বেশকিছু লোকজন ঝাঁকিজাল ফেলে মাছ ধরছে। অনেকের জালে সরপুঁটি, বেলে, টাকি, মিরকা, রুই, কাতল, কাকিলা, কই, বাইন, টেংরা, মাগুর, শিং, পাবদা, বোয়াল ও শোল মাছ ধরা পড়ছে।
চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল গ্রামের জেলে আমির হোসেন, কালাম মিয়া ও জসিম উদ্দিন বলেন, বিলের পানি কাটা গাংয়ে নেমে এসেছে। প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে ঝাঁকিজাল ফেলে। চলনবিল এলাকার খাল, ডোবা-নালা দখলমুক্ত করা গেলে সারা বছর জলাশয়ে পানি থাকবে। সব সময় মাছ পাওয়া যাবে।
এদিকে পাশ্ববর্তী রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া গ্রাম থেকে আশা আয়নাল, পাসান ও হাবিব ঝাঁকিজাল দিয়ে মাছ ধরতে এসেছে। তারা বলেন, রায়গঞ্জ উপজেলা তাড়াশ উপজেলার চেয়ে উঁচু এলাকা। বড় বন্যা হলে পানির দেখা মেলে। তাছাড়া রায়গঞ্জের জলাশয়গুলো দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। মাছ ধরতে ভালো লাগে। এজন্য চলনবিলে এসেছেন।
তারা আরও জানান, ঝাঁকিজাল বাংলাদেশের মাছ ধরার কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঝাঁকিজালের উপরের প্রান্তে সরু রশি বাঁধা থাকে। জালের নিচের দিকে লোহার ছোট ছোট কাঠি যুক্ত করা হয়। যাতে পানিতে জাল ফেললে তাড়াতাড়ি ডুবে যেতে পারে। মাছ ধরার সময় খালের পাড় থেকে রশিটি হাতে রেখে জাল পানিতে ছুড়ে মারা হয়। পরে রশি ধরে টেনে জাল তোলা হয়।
অপরদিকে তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভুয়াগাঁতী আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, সলঙ্গা আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, খালকুলা আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, মহিষলুটি আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, ওয়াপদা বাঁধের দুই পাশের খাল, কুন্দইল আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, বারুহাস আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, দেশীগ্রাম আঞ্চলিক সড়কের দুই পাশের খাল, ভদ্রাবতী নদীর এক পাশের খাল, করতোয়া নদী ভরাটসহসহ অসংখ্য গ্রামীণ সড়কের দুই পাশের খালের দখল নিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তারা সরকারি খালের জায়গা ভরাট করে বসবাস করছেন। অনেকে খালের মধ্যে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক বলেন, রানীহাট সড়কের দুই পাশের খাল পুনঃখনন করার জন্য প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে দখলমুক্ত করে খনন কাজ করা হবে। অন্যান্য খালগুলোও পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করে খনন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মসগুল আজাদ বলেন, বর্ষা মৌসুম জুড়ে মা মাছ ও পোনা মাছ বাঁচাতে কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী জাল ও বাদাই জাল ব্যবহারকারী জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এখন সুফল পাচ্ছেন জেলেরাই। ঝাঁকিজালের ব্যবহার বাড়ানো গেলে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।