গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক সময়ের সবথেকে জনপ্রিয় খেলা হা-ডু-ডু। তবে শুধু জনপ্রিয় খেলা নয় এটি বাংলাদেশের জাতীয় খেলাও বটে আর এখন সেটা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। সাধারণত গ্রামের কাচা রাস্তায়, মাঠ, বাগানে বা খোলা স্থানে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে দেখা যেত এ হা-ডু-ডু খেলা।
কিন্তু কালের আবর্তনে সেই খেলা এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। আধুনিক খেলা এবং যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততার কাছে হেরে গেছে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এ খেলাটি। যুবকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক শক্তিতে। সেই কারণে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য, উৎসব বা বিশেষ দিবস উদযাপনও।
এখন আর কোনো উৎসবে বা বিশেষ দিবসে এ খেলার আয়োজন হয় না। তাই নতুন প্রজন্ম জানে না এ খেলা সম্পর্কে। ভুলতে বসছেন অন্যরাও। তাই নতুন করে খেলোয়াড়ও তৈরি হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিশেষ দিন বা উৎসবে গ্রামে গ্রামে জমজমাভাবেই হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হতো। চারদিকে বিরাজ করতো আনন্দ-উচ্ছ্বাস। হা-ডু-ডু খেলার আয়োজনকে ঘিরে গ্রামজুড়ে চলতো মাইকিং প্রচার-প্রচারণা। দূর-দুরান্ত, পাড়া-মহল্লা থেকে শত শত মানুষ গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় হা-ডু-ডু খেলা দেখতে আসতেন। জমজমাট ছিল এ আয়োজন। রঙিন কাগজ ও পতাকায় সাজানো হতো খেলার মাঠ ও আশেপাশের এলাকা। তাই তো কালিগঞ্জের মথুরেশপুর ইউনিয়নে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জাতীয় হা-ডু-ডু খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজয় দিবস উপলক্ষে। তারা এই বিশেষ দিনে বা উৎসবে গ্রামে গ্রামে জমজমাভাবেই হা-ডু-ডু খেলা ধরে রেখেছে বলে জানান।
হাডুডু খেলায় যে দুটি দল অংশগ্রহণ করেন- মথুরেশপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেবাশীষ ঘোষ বাবুর নেতৃত্বে (খাজাবারিয়া উজয়মারি) বনাম ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য জিএম আব্দুল জলিল (প্যানেল চেয়ারম্যান ২) এর নেতৃত্বে দুদলী গ্রামের বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে মনোমুগ্ধকর খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। এবং খেলাটি উপভোগ করেন কালীগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার দর্শক।
স্থানীয় মানুষজন জানান, গ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে হা-ডু-ডু খেলাটি। জনপ্রিয় খেলাটি আবার ফিরিয়ে আনা দরকার। তাহলে গ্রাম বাংলার এ খেলাটি প্রাণ ফিরে পাবে।
এ ব্যাপারে খাজাবাড়িয়া উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মমিনুর রহমান বলেন, 'গ্রামীণ ঐতিহ্যের হা-ডু-ডু খেলাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গ্রামে এখনও প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছেন। এ খেলাটি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা এই উদ্যোগটা নেই। আমাদের খাজাবাড়িয়া উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে আমরা প্রতিবছরই কাবাডির আয়োজন করব। আমাদের এ গ্রামীণ ঐতিহ্যের হা-ডু-ডু খেলাটি ধরে রাখতে হবে। তাহলে আমরা পরিচয় করিয়ে দিতে পারব এই প্রজন্মকে এই খেলার সাথে' ।