৩০০ টাকার দুটি পাঞ্জাবিতে নিপুণ হাতের কাজ করে শুরু করেছিলেন উদ্যোক্তা জীবন। সংসার সামলে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন সুলতানা আক্তার কল্পনা (৫০)।
সাহস নিয়ে ভয়কে জয় করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। পর্যায়ক্রমে একাধিক কর্মী নিয়ে কাজে এগিয়ে যাওযায় কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেকেরই।
বিভিন্ন সংস্থা থেকে সুযোগ পেয়েছেন প্রশিক্ষণের। তার মধ্যে অন্যতম একটি প্রশিক্ষণে পানা দিয়ে জুতা তৈরি করে ভাগ্য বদলেছে তার। জলজ উদ্ভিজ পানাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন আকৃতির জুতা তৈরি করে দেশের বাহিরেও জায়গা করেছিলেন বেশ। কিন্তু করোনা বয়ে আনে তার এই সাফল্যে অভিশাপ। তবুও থেমে নেই তিনি। বর্তমানে পাটকে কাজে লাগিয়ে কাজ করতে চান নারীদের নিয়ে। তার পণ্য শুধু দেশেই নয়, বাহিরেও ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। জুট শিল্পের মাধ্যমেই কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে চান তিনি। তবে এজন্য প্রয়োজন বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা। সেই সহযোগিতার অভাবেই পিছিয়ে পরতে দেখা যায় অনেক উদ্যোক্তাদের।
একটা সময় রাজনীতিকে ভালোবেসে বিশেষ করে পল্লী বন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে শ্রদ্ধা করে রাজনীতিতে পদচারণা তার। একটা সময় স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সকলের উৎসাহে সাহস নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলেন ১ নং মমিনপুরে চেয়ারম্যান পদে। ২০২১ সালে ১০ হাজার ৯২৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন তিনি। এভাবেই এগিয়ে চলছেন উদ্যোক্তা সুলতানা।
শুধু পেশার দিকে নয়, লেখাপড়াতেও রয়েছে তার ব্যতিক্রমী গল্প। জলঢাকা কিশোরগঞ্জ জেলায় তার জন্ম। ১৯৮৮ সালে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। পরে লেখাপড়া নিয়ে তার কাছের একজন মানুষ তাকে ব্যঙ্গ করে 'আন্ডার ম্যাট্রিক' পাশ বলায় ক্ষোভ নিয়ে আবারও শুরু করেন লেখাপড়া। সেই ক্ষোভ সাফল্য বয়ে এনে এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি।
তার মেধার পরিচয়ে প্রতিবেশীদের বিভিন্ন বিচার কিংবা সম্মানের জায়গায় নিজের অবস্থান করে নিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান থাকাকালীন নিজ দায়িত্বে উন্নয়ন করায় প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। এমনকি উপজেলা নির্বাচনও করেছিলেন। ৯ হাজার ঊর্ধ্ব ভোট পেয়ে পরাজিত হলেও হাল ছাড়েননি। আগামী দিনের সফলতার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি।
তিনি বর্তমানে শাহাদাত ফার্মে ইনচার্জ হিসেবে আছেন। আগামীতে উপজেলা নির্বাচন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তিনি। শুধু উপজেলাতেই নয়; সংসদে বসারও ইচ্ছে তার।
বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি জড়িত আছেন অপরাজিতা সংস্থার সদর উপজেলা নেটওয়ার্কের সভাপতি হিসেবে। এছাড়াও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে যুক্ত আছেন তিনি।
অপরাজিতা প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণের মধ্যে যোগাযোগ ও দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণসমূহ:
ইউনিয়ন পরিষদে নারী প্রতিনিধির দায়িত্ব-কর্তব্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ, নারীর নেতৃত্ব বিকাশ ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানাদি এবং তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ, ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কমিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য-বিভিন্ন নারী নেটওর্য়াকের সাথে সভা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নারী উন্নয়ন ফোরামের সাথে সভা, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে মত বিনিময় সভা, নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সরকারি সেবা প্রদানকারীদের সাথে মতবিনিময় সভা, বিষয়ভিক্তিক বিশেষজ্ঞদের সাথে সভা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন বিষয়ে জন প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দল ও নারীদের সংলাপেও প্রভাব রেখেছেন৷
অপরাজিতা সংস্থা নিয়ে সুলতানা বলেন, নারীদের নিয়ে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছেন অপরাজিতা। এই সংস্থা আমাদেরকে কথা বলতে শিখিয়েছেন। আগে কথা বলতে পারতাম না। বর্তমানে জনসম্মুখে যুক্তি দেখিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলতে পারি সাহস নিয়ে। আইন, নিয়ম, শিখেছি অপরাজিতা সংস্থা থেকে। এই সংস্থাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
রংপুর সদর উপজেলায় জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন কমিটির সহ সভাপতি হিসেবে নিরলস প্রচেষ্টায় রাজনীতির মাঠে অবদান রাখছেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন মানবিক কাজেও অংশ নিচ্ছেন তিনি।
তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজনীতিতে নারীদের এগিয়ে আসাটাই প্রমাণ করে নারীর ক্ষমতায়ন। এক সময় নারীরা ঘরের বাহিরে পা রাখতে পারতো না। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে তাদের ক্ষমতায়, নারীদের অধিকার আদায়ে তারা সচেষ্ট। শুধু নারীর ক্ষমতায়ণ চাইলেই হবে না, দক্ষতা ও নিজেকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারলে তবেই সফলতা বয়ে আনবে। অতীতের তুলনায় বর্তমান চিত্র বদলে গেছে। আশা করছি নারীরা নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে আগামীতেও সফল হবে তারা। একজন নারী হয়ে নারীদের এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।