বিশ্বের শীতলতম পাঁচ দেশ

বিবিধ, ফিচার

হেলাল নিরব, কন্ট্রিবিউটর | 2023-09-01 22:36:36

শীতের শুরুতে বেশ কয়েক দিনের হাড়কাপানো ঠান্ডা আর সারাদিনের টুপটাপ বৃষ্টিতে আমাদের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছিল। এখনো সারা দেশব্যাপী চলছে কম-বেশি শৈত্য প্রবাহ। শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় নানা ধরনের শীতকালীন অসুখ-বিসুখেও পড়ছে অনেকে।
তবে পৃথিবীর এমনও অনেক দেশ আছে যেখানে বছরের প্রায় সময়ই তাপমাত্রা অসহ্য পর্যায়ের ঠান্ডা থাকে। সারাদিনে সূর্যের মুখ দেখাও একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে বরফ। তেমনই পাঁচটি চরম পর্যায়ের শৈত্য আবহাওয়া পূর্ণ দেশের কথা থাকছে।

অ্যান্টার্টিকা

অ্যান্টার্টিকা পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত একটি দক্ষিণতম মহাদেশ। এটি সম্পূর্ণ দক্ষিণ মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। ১৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ এ মহাদেশে জনসংখ্যা মাত্র পাঁচ হাজার জনের মতো। ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র  ০.০০০০৪ জন! এ অবস্থার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়, সেখানের শীতলতম ও শুষ্কতম পরিবেশ। এখানে তাপমাত্রার সর্বনিম্ন রেকর্ড -৮৯ ডিগ্রী (-১২৯ ফারেনহাইট)! বছরে স্বাভাবিক সময়েও তাপমাত্রা থাকে -৬৩ ডিগ্রি (-৮১ ফারেনহাইট)! এমন শীতল আবহাওয়ার কারণে এ মহাদেশকে শীতল মরুভূমিও বলা হয়। এখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মিলি মিটার! এ মহাদেশে পেঙ্গুইন, সিল, বিভিন্ন শৈবাল এবং তুন্দ্রা উদ্ভিদ এমন চরম তাপমাত্রায়ও ‘সারভাইব’ করে। মজার বিষয় হলো এ মহাদেশের কোনো নিজস্ব বাসিন্দা নেই। বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা করার জন্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দেশের জনগণ। আরো অবাক করা সত্য হলো, এটাই একমাত্র মহাদেশ, যেখানে কোনো দেশ বা দেশের কোনো রাজধানী নেই!

কাজাখস্তান

পৃথিবীর নবম বৃহত্তম ও স্থলবেষ্টিত সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র কাজাখস্তান। রাশিয়া থেকে স্বাধীনতা লাভ করা কাজাখস্তানের আয়তন ২.৭ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। তবে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৫.৯৪! মাত্র ১ কৌটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার এই আপেলের দেশে রাশিয়ার চেয়েও বেশি শীত পড়ে। ভৌগলিক অবস্থান, বৈরী আবহাওয়া ও অনবরত তুষারপাতের ফলে জনজীবন প্রায়ই স্থবির হয়ে পড়ে। ৭০ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে শীতের প্রকোপে প্রায়ই মৃত্যু ঘটে অনেক বাসিন্দার।

রাশিয়া

রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম শীতল দেশ। এখানে বছরে  মাত্র  দুই মাসের জন্য সূর্যের মুখ দেখতে পাওয়া যায়। আর প্রায় সারাবছরই হিম শীতল ও শৈত্য আবহাওয়া থাকে। গরমকালেও এখানে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে -১০ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। বৈচিত্র্যহীন এ অঞ্চলে আর্কটিক বরফাচ্ছন্ন, উচ্চভূমি এবং সারাদিন শৈত্য প্রবাহ চলার কারণে এখানে জীবনযাপন বেশ কষ্টকর। রাশিয়ার প্রায় অঞ্চলই বছরের ৮ মাস বরফাচ্ছন্ন এবং ১০ মাস শৈত্য প্রবাহ থাকে। এখানকার সাইবেরিয়ায় সারাদিনই শৈত্য প্রবাহ ও প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়তে থাকে। বিশাল এই রাশিয়া, পৃথিবীর স্থলভাগের আট ভাগের ১ ভাগ হলেও এমন ঠান্ডা আর প্রতিকূল পরিবেশের কারণে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৮.৪ জন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে হিটলারের নাৎসী বাহিনীর কামান-গোলা এখানকার তীব্র ঠান্ডায় অকেজো হওয়ার ফলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন /রাশিয়া সহজেই জার্মান সেনাদের পর্যদুস্ত করতে পেরেছিল। মজার বিষয় হলো, রাশিয়ায় গা গরম করতে গরম পোশাক পরার পাশাপাশি ভদকা (নেশা পানীয়) খাওয়া হয়।

গ্রিনল্যান্ড

পৃথিবীর বৃহৎ দ্বীপ রাষ্ট্রের মাঝে গ্রিনল্যান্ড অন্যতম। উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মাঝের এই দ্বীপ দেশটি ডেনমার্ক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। গ্রিনল্যান্ড/ সবুজ ভূমি নাম হলেও সেখানকার শীতকাল/ শৈত্য প্রবাহের কারণে পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন, ধূসর সাদা! ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার মতো সূর্যের দেখা পাওয়া যায়। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ, কালো চাদরের মতো জড়িয়ে রাখে এ দেশকে। এমন প্রতিকূল পরিবেশ হওয়ায় এখানকার বিশাল আয়তনে মাত্র ৫৭,১০০ লোকের বাস। অবাক করা বিষয় হলো, নীল জলরাশির এ বিশাল দ্বীপ দেশটির প্রায় ৯০ ভাগ জায়গাই পুরো বরফে ঢাকা!

কানাডা

উত্তর আমেরিকার উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির এ দেশটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। কানাডার কথা বললেই ভেসে ওঠে এক অসহ্য ঠান্ডা দেশের কথা। এখানের জলবায়ু হালকা ভ্যাপসা ঠান্ডা, ভিজে কুয়াশা এবং শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা, বরফাচ্ছন্ন ও শুষ্ক তুষারপাত দ্বারা আবৃত থাকে। এ বিশাল দ্বীপ বহুল রাষ্ট্রে বছরের ৮ মাসই বরফাচ্ছন্ন থাকে। রাশিয়ার জলবায়ুর মতো শৈত্য প্রবাহ ও হিম শীতল আবহাওয়া হলেও মানুষের বসবাসের জন্য অতটা অনুকূল নয়। এমন বৈরী জলবায়ুর জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ দেশ হয়েও জনসংখ্যা মাত্র সাড়ে তিন কোটি। ঘনত্বের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গকিলোমিটারে মাত্র ৩.৯২ জন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর