‘দুই দেহে, এক প্রাণ!’ রূপকথার গল্পে বা ভালোবাসা প্রকাশে এরকম লাইন তো শোনাই যায়! একদেহে দুই প্রাণের অস্তিত্বের কথা শুনে যে-কেউ অবাক হতে বাধ্য। বাস্তবে রয়েছে এমন দুই জমজ বোনের গল্প। অবিশ্বাস্যভাবে একই শরীরে যুক্ত দু’বোনের বসবাস প্রায় ২ যুগ ধরে।
অ্যাবি হেনসেল এবং ব্রিটনি হেনসেল- ১৯৯০ সালের ৭ মার্চ মিনেসোটায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাদের জন্মের পর ডাক্তাররা অবাক হয়ে যান। কারণ এই প্রথম তারা দুই শিশুর যুক্ত অবস্থায় জন্মের সাক্ষী হয়েছিলেন। তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক কম ছিল। গড়ে ১ লাখ ৮৯ হাজার শিশুর মধ্যে ১টি ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা দেখা যায়। তাদের মধ্যে ১১% জমজ শিশু বেঁচে আছেন।
অ্যাবি ও ব্রিটনি’র শারীরিক গঠন ডাক্তারদের অবাক করে। তাদের শরীরের উপরের অংশে পৃথক অভ্যন্তরীণ অঙ্গ রয়েছে। অর্থাৎ, তাদের হৃদয় ও পাকস্থলি দু’টি করে। তবে নিম্নাংশ একত্রিত। তারা একই ব্যথা অনুভব করে। একজনের যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা যায়, অন্যজনেরও তাই। তারা ‘ডাইসেফালিক প্যারাগাবাস টুইনস’ নামে পরিচিত।
‘হেনসেল সিস্টার্স’-এর সবকিছুই অবাক করার মতো। একই শরীরে যুক্ত হওযার পরও দু’জনের শরীরের তাপমাত্রা ভিন্ন। যেন কোনো অদৃশ্য রেখা তাদের শরীরে পার্থক্যের দাগ কেটেছে। দু’বোন একত্রে তাদের সব দৈনিক কাজ করে। ছোট থেকেই তারা শরীরের নড়াচড়ার ক্ষেত্রে টিমওয়ার্ক করে এসেছেন। সাঁতার, দৌড়ানো, চুল আঁচড়ানো, এমনকি গাড়ি চালানোর সময় শরীরের দু’পাশ নিয়ন্ত্রণ করেন দু’জন।
শরীর এক হলেও, পৃথক দুই সত্ত্বার পছন্দ একদম বিপরীত। তাদের পোশাক, খাদ্য, শখ- সব পছন্দেই ভিন্নতা। ব্রিটনি উচ্চতা ভয় পায়, কিন্তু অ্যাবি পায় না। অ্যাবির বিজ্ঞানভিত্তিক জিনিসপত্র পছন্দ, অন্য দিকে ব্রিটনির পছন্দ শিল্প-সংস্কৃতি। এমনকি তারা আলাদাভাবে পরীক্ষা দিয়ে পৃথক ড্রাইভিং লাইসেন্সও বানিয়েছে।
বিবিসির সাক্ষাৎকারে ব্রিটনি ও অ্যাবি জানিয়েছেন, তারা একত্রে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে যান। তবে এখানেই তাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। নতুন কোথাও গেলে লোকজন তাদের ছবি তোলে। অদ্ভুত আচরণ করে, যা মোটেই ভালো অনুভূতি দেয় না।
তাদের বান্ধবী এরিন জুনকানস্ জানান, ভ্রমণের সময় তিনি দু’বোনের যত্ন নেন। বিশেষ করে লোকজনের ভিড়ে যেন ওরা সুরক্ষিত থাকে, সেই খেয়াল রাখেন। মানুষের অভিব্যাক্তি ও ছবি তোলা থেকে আড়াল করে রাখেন। তবে এসব ঘটনা তারা দু’বোন ভালোভাবেই সামলে নেয়। ভয়ে তারা কাবু হয় না।
তাদের মা পেটি বিবিসিকে জানান, অন্য মায়েদের মতো তারও ইচ্ছা, সন্তানরা সুখে থাকুক। জীবনে যে সিদ্ধান্তই নিক, তারা যেন সুস্থ থাকে। অনেকেই এই দু’বোনের কাহিনী জানতে আগ্রহী। কম বয়সেই হেলসেন বোনেরা জনগণের নজরে আসেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে তারা প্রথম সাক্ষাৎকার দেন। ‘লাইফ ম্যাগাজিন’-এর কভারে তাদের ছবি ছাপা হয়েছিল।
২০০২ সালে তারা “জয়েনড্ ফর লাইফ” ডকুমেন্টরীর অংশ হন। ‘অ্যাবি এন্ড ব্রিটনি’-এপিসোডে তাদের জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়। বর্তমানে তারা চাকরি করছেন। সেইন্ট মেরি’স আর.সি. প্রাইমারি স্কুলে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর পার্ট টাইম গণিত শিক্ষক তারা।
শিশুদের সাথে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লেগেছে। এখন সবকিছু অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে। নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন ব্রিটনি ও অ্যাবি। তাদের আলাদা বেতনও দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান তাদের শিক্ষকতার বেশ প্রশংসা করেন।
তথ্যসূত্র: টিপস্ এন্ড ট্রিকস