সমুদ্রের ভয়ংকর প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হাঙ্গর। তীব্র গতি ও ধারালো দাঁতের এই জলজ মাংসাশী প্রাণীকে ভয় পায় সবাই। দক্ষিণ আফ্রিকার কোস্টাল সিটির কেইপ টাউনে, সারাবছর হাঙ্গরের সাথে ‘বাঁচা-মরা’র লড়াই চলতে থাকে। ৪ বছর পর প্রথমবার বিশাল সাদা হাঙ্গরদের ফের দেখা মিলল।
একসময় শিকারী মাছদের প্রায়ই এই এলাকায় দেখা যেত। সাঁতারুদের উপর প্রাণ-নাশকারী হামলার নানা কাহিনীও রয়েছে। আত্মরক্ষার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াযুলু-নাটাল প্রদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পদক্ষেপ নিয়েছিল। যেমন জাল বা হুকের মাধ্যমে টোপ ফেলা হতো। তবে, এতে কচ্ছপ ও ডলফিনরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। এতে ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ আন্তর্জাতিক সংস্থা’ তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা জনজীবন ও হাঙ্গর উভয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আগ্রহী।
১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি পেশাগত দল এই অঞ্চলে নজর রাখছেন। হাঙ্গরের অবস্থান নির্ণয়কারী দলের প্রধান সারাহ্ ওয়ারিস তাদের পরিকল্পনা জানিয়েছেন। তারা মানুষ-হাঙ্গরের নেতিবাচক মিথষ্ক্রিয়া প্রতিরোধ করতে চান। যেন সমুদ্র উপভোগ এবং সামুদ্রিক জীবের সুরক্ষার ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়।
সংরক্ষণকারীরা ‘গ্রেট হোয়াইটদের’ আগমনে খুশি। হাঙ্গরদের অনুপস্থিতিতে পানির পরিবেশ নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। আশেপাশের পাহাড় থেকে ৫টি সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে থেকে তারা হাঙ্গরের ওপর নজর রাখে। কোনো প্রাণী নজরে এলে, রেডিও-র মাধ্যমে সহকর্মীদের খবর দেওয়া হয়।
আক্রমণকারী হাঙ্গর দেখলে তারা বিপদসংকেত পাঠায়। তখন জনগণদের সরিয়ে নেওয়া হয়। সাদা পতাকা দেখালে, দর্শনার্থীদের দ্রুত সমুদ্র থেকে উঠে আসার নির্দেশ রয়েছে। ডেনিস চিকোডজে চলতি মাসে সাদা পতাকা প্রদর্শনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ভ্রমণকারীদের আরও সতর্ক করতে চান।
প্রতিদিন সকালে এই দলের উদ্দেশ্য ফিশ হোয়েক বিচের নিরাপত্তা রক্ষা। এজন্য তারা একটি অনন্য পথ খুঁজে বের করেছে। তারা ৩৫০ মিটার (১,১৪৫ ফুট) দূরত্ব অবধি জাল দিয়ে উপসাগর ও সমুদ্রতল এলাকা ঘেরাও করেন। সন্ধ্যায় তা তুলে ফেলা হয়। এই পদ্ধতি বেশ ভালো কাজ করছে। একসময় এখানে কোমড়-পানিতেও হাঙ্গরের আক্রমণ হতো।
মিস ওয়ারিসের মতে হাঙ্গরের কামড় প্রচন্ড ব্যথাদায়ক। জাতির মধ্যে একটি আতংকজনক পরিবেশেরও সৃষ্টি করে। গতবছর ২বার হাঙ্গরের হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে তাদের ডাকার পর থেকেই তাদের এই কার্যক্রম গুরুত্ব সহকারে শুরু হয়। এতদিনে তারা প্রায় ৭০ টির বেশি সাদা হাঙ্গর দেখতে পেয়েছে।
প্লেটেনবার্গ তীরে ‘কিমন কিকি বিসোগনো’ নামের একজন সাদা হাঙ্গর দ্বারা নিহত হয়েছিলেন। তিনি বহুবছর ধরে অসহায় মানুষদের সাহায্য করতেন। পাশাপাশি বন্ধু ডিয়েগো মিলেসির সাথে একটি রেস্তোরা চালাতেন। মিলেসি, কিকির ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করেন। হাস্যোজ্জ্বল আর হৃদয়বান কিকি‘র জীবনের অংশ হওয়ায়, তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, এর আগে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তারপরই সতর্ক কার্যক্রমের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তাহলে হয়তো কিকি সাবধান হতো এবং জীবিত থাকতো। এই ঘটনা থেকে তিনি সকলকে শিক্ষাগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। “ফারদিনান্দো’স পিজ্জা”য় কিকি‘র সম্মান প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কেইপ টাউনের কাছাকাছি আরেকটি ক্ষতিবিহীন হাঙ্গর সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্থানীয় সমুদ্র জীববিজ্ঞানী ডাক্তার সারা আন্দ্রেওতি, এর দায়িত্বে রয়েছেন। পানির নিচে নকল বন তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো হাঙ্গররা অপছন্দ করে। হাঙ্গরদের দূরে রাখতে এখানে দীর্ঘ চুম্বকের ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হাঙ্গরের নাক ও চোখের কাছে সংবেদনশীল অঙ্গ রয়েছে। যা চুম্বকের কাছাকাছি এলে বৈদ্যুতিক অনুভূতির মাধ্যমে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এটি কেবল হাঙ্গরদের ক্ষেত্রেই কার্যকর। অন্যান্য সামুদ্রিক জীব সহজেই এটি পাড় করে যেতে পারবে। আপাতত দ্বীপে পরীক্ষা চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরই সুরক্ষা ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি কার্যকর হবে। তবে, দর্শনার্থীদেরও সাবধান থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি