বছরের শেষ মুহূর্তে বিশ্ব নতুন বছরের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতে ১২টায় পৌঁছাতেই, আতশবাজিতে আকাশ আলোকিত হয়। সারা বিশ্বের মানুষ ২০২৪ এর জানুয়ারিকে স্বাগত জানাতে একত্রিত হয়। সমৃদ্ধ এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় ২০২৪ কে স্বাগত জানায় সকলে।
৩১শে ডিসেম্বর রাতেই বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে জড়ো হয় সবাই। উপহার আদান-প্রদান, জমকালো ভোজ, পার্টি এবং আরও অনেক আয়োজন করা হয়। কিন্তু ১ জানুয়ারি কেন ইংরেজি নতুন বছর উদযাপন করা হয়? জানুন এর ইতিহাস-
চলতি বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানুয়ারিকে প্রথম মাস ধরা হয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে বছর শুরু হতো। যেমন ২৫ মার্চ, ২৫ ডিসেম্বর। রোমানরা এই ধারায় পরিবর্তন আনেন।
তখন রোমান ক্যালেন্ডারের মতে বছর মার্চ মাসে শুরু হতো। আর বছর হতো ৩৫৫ দিনে। বছর শেষ হতো ৩০৪টি দিন দিয়ে। শীতকালকে তারা মাস বিবেচনা করতো না। রোমুলাসের উত্তরসূরি রাজা নুমা পম্পিলিয়াস প্রায় ৭১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস যোগ করেছিলেন বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। এর ফলে ক্যালেন্ডারটি একটি আদর্শ চন্দ্র বছর অর্থাৎ ৩৫৪ দিন পূর্ণ করে।
এরপর ক্ষমতায় আসেন রোমান স্বৈরশাসক, জুলিয়াস সিজার। তিনি এই প্রচলিত দিনপঞ্জিকা পদ্ধতি পরিবর্তন করেন। রোমান দেবতা “জানুস”কে সম্মান প্রদর্শন করতে মাসের নাম “জানুয়ারি “ রাখা হয়। এর দেবতাকে সব কিছুর শুরুর দেবতা হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে মার্চ এসেছে তাদের যুদ্ধের দেবতা মার্স-এর নামানুসারে। জানুসের দুটি মুখ রয়েছে। যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ এবং অতীত- দুই দিকেই নজর রাখতে পারেন তিনি। সেই থেকেই ১ জানুয়ারিকে বছরের ১ম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রথমে, ১৬ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইউরোপে এই পদ্ধতি তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এরপর ইউরোপে খ্রিস্টধর্ম প্রবর্তনের প্রবণতা বাড়ে। তখন থেকে ২৫ ডিসেম্বর যীশুর জন্মদিন হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারপর পোপ গ্রেগরি জুলিয়ানের তৈরি করা ক্যালেন্ডারে, ১ জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন বিবেচনা করা শুরু হয়।
ধারণা করা হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২ হাজার অব্দে, অথবা ৪ হাজার বছর আগে প্রাচীন ব্যাবিলনে নতুন বছর উদযাপন শুরু হয়।, সাধারণত মার্চের শেষের দিকে, ব্যাবিলনীয়রা নতুন বছর উদযাপন করত। তারা বিষুব এর পরে ১ম অমাবস্যা অনুযায়ী হিসাব করতো। “আকিতু” নামক একটি অনুষ্ঠান পালন করতো তারা। যেখানে ১১ দিন ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন হতো।
তবে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে কিছু ত্রুটি ছিল। এতে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ সংক্রান্ত কিছু ভুল গণনা ছিল। সমস্যা সমাধানে কিছু পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে উঠে।জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন এবং প্রতিস্থাপন করতে চালু করা হয় বর্তমানের গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারটি। এটি ১৫৮২ সালের অক্টোবরে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি দ্বারা সংশোধিত এবং প্রবর্তিত হয়। অধিবর্ষের সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আবার ১ জানুয়ারিকে নতুন বছরের শুরু হিসেবে পুনরুদ্ধার করে।
প্রসঙ্গত, নতুন বছর মানে শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টানোই নয়। এর সাথে জীবনে একটা বছর এগিয়ে যাই আমরা। এটি নতুন সুযোগ জীবন শুরু করার। বিশ্বজুড়ে নতুন আশার প্রতীক, ১ জানুয়ারি। যা মানুষকে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং নতুন সুযোগ সন্ধানে উৎসাহিত করে।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস