৫২ বছরের রাজত্ব হস্তান্তর: নতুন বছরের উপহার-রাজা ‘ফ্রেড্রিক’ 

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-01-01 16:37:51

কোনো ধুমধাম অয়োজন নয়। থাকবে না, কোনো মুকুট প্রদানের আনুষ্ঠানিকতাও। তবুও দীর্ঘদিন পর, নতুন রাজাকে গ্রহণ করে নেওয়ার উৎসবে মাতবে ডেনমার্কবাসী। নতুন বছর ২০২৪ এর শুরুতেই অভিষেক হবে নতুন রাজার।

২০২৩ সালের শেষ দিন, গতকাল রাতে এই খবর প্রকাশ পায়। স্বয়ং রানী ঘোষণা দিয়েছেন, সিংহাসন ত্যাগ করার।

রাজ্যের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে। নতুন রাজা হতে চলেছেন, যুবক বয়সে ‘পার্টি প্রিন্স’ খ্যাত রাজকুমার ফ্রেড্রিক। প্রতিবার নতুন বছরের প্রাক্কালে, ডেনমার্কের রানী মার্গারেট জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। এবার বক্তৃতার পাশাপাশি, তিনি মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা তোলেন। তার সাথে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার গুরুত্বের কথাও বলেছিলেন। সেখানেই ডেনমার্কের রাজ্য এবং ভবিষ্যতের এই আসন্ন পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

টেলিভিশনের মাধ্যমে এই ঘোষণা পৌঁছে যায় জনগণের কাছে। সেখানে রানী জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪ জানুয়ারি পদত্যাগ করবেন তিনি। ৫২ বছর আগে, এই দিনেই রাজ্যের ভার গ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা রাজা ৯ম ফ্রেডেরিক ১৯৭২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকেই সিংহাসনের দায়িত্ব তার কাঁধে এসেছিল। ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘতম ‘রাজদায়িত্ব বহনকারী ব্যক্তি’ তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৮৩ বছর।


৫৫ বছর বয়সী রাজকুমার ফ্রেডরিক। ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকে “পার্টি প্রিন্স” হিসেবে পরিচিত ছিলেন্। কিছু বছর পর তার প্রতি এই মনোভাব পরিবর্তন হতে শুরু করে। ১৯৯৫ সালে আরহাস ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি।

আগামি ১৪ জানুয়ারি নতুন রাজবংশীয় হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত হচ্ছেন। তার অভিষেকে কোন আনুষ্ঠানিক মুকুট পরানোর আয়োজন হবে না। কেবল “কোপেনহেগেনের অ্যামালিয়ানবার্গ” দুর্গ থেকে তার রাজকার্যে যোগদানের ঘোষণা দেওয়া হবে। তিনি ডেনমার্কের রাজা এবং দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে স্থান গ্রহণ করবেন। গ্রিনল্যান্ড এবং ফ্যারো আইল্যান্ডের মতো, ডেনমার্কেরও সাংবিধানিক রাজতন্ত্র এটি ।

রাজকুমার ফ্রেড্রিক প্রথম ডেনিশ রাজ পরিবারের সদস্য, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করেছেন। পড়াশোনা করার সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডে ছিলেন। সেখানে “ফ্রেডেরিক হেনরিকসেন” ছদ্মনামে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে তিনি ডেনমার্কের নৌবাহিনীতে কাজ নেন। সিংহাসনে বসার পর, তিনি দেশের কাজে লেগে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নিজেকে দুর্গে আটকে রাখতে চান না।

২০২৩ সালের প্রথম দিকে, রানি মার্গ্রেথের পিঠে অস্ত্রোপচার করা হয়। তারপরেই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন তিনি। তার মতে, এখনই সঠিক সময় ক্ষমতা হস্তান্তরের। এত বছর ধরে তাকে সমর্থনের জন্য ডেনিশ নাগরিককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রানী।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ‘মেটে ফ্রেডেরিকসেন’ রানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি রাজ্যের জন্য আজীবন উৎসর্গ করেছেন। অনেক নাগরিক আশা করেছিলেন, রানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিংহাসনে থাকবেন।


ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে, তাদের রানী দ্বিতীয় মার্গারেটকে তুলনা করেন ডেনমার্কবাসী। তাদের কাছে কুমার ফ্রেড্রিক, ব্রিটেনবাসীর কাছের রাজা ৩য় চার্লসের মতো । এই দুই দেশের রানীর মধ্যেও বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। ২০২২ সালে ডেনমার্কের রানী, বিট্রেন অধিপতি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন। 

রানী মার্গারেট অনেক বছর আগেই, রানী এলিজাবেথের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, তিনি কখনো রানী হবেন বলে আশা করেননি। যখন মার্গারেট ১৩ বছর বয়সী, তখন ডেনমার্কে নারীদের সিংহাসন গ্রহণের আইন হয়। তিনি প্রয়াত ব্রিটিশ রাণীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তার থেকেই জীবনকে জাতির জন্য উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন ডেনমার্কে রানী।

ইউরোপ জুড়ে অন্যান্য রাজকীয় পরিবারের মতো, ডেনিশ রাজপরিবার তাদের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছর কুমার ফ্রেডরিকের ছোট ভাই রাজকুমার জোয়াকিমের সন্তানদের রাজকীয় উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়। যা স্বাভাবিকভাবেই রাজপরিবারে বিভেদের সৃষ্টি করে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

এ সম্পর্কিত আরও খবর