শুরু হয়েছে ইরি-বোরো ধানের মৌসুম। ইতিমধ্যে ইরি-বোরো আবাদে কৃষকরা শুরু করেছে জমি প্রস্তুতের কাজ। লক্ষ্মীপুরে দলবেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা। ধানের চারা রোপনও শুরু হয়েছে। ছোট ছোট ধানের চারায় ধীরে ধীরে ক্ষেতগুলো সবুজ হয়ে উঠছে। শীতকে উপেক্ষা করে চাষিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে নরম হাতের স্পর্শে বীজ তলা থেকে ধানের চারা তুলতে দেখা গেছে গ্রামের মেয়ে-বউদের।
জানা গেছে, পরিপূর্ণ শীতের মাস মাঘের শুরুতেই লক্ষ্মীপুরে ইরি-বোরো ধানের চাষাবাদ করা হয়। এবার আবহাওয়া ভালো হওয়ায় পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকে কৃষকরা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে শুরু করেছে। এখন তারা মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদেরকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। ফসলি ক্ষেতে হাল চাষ করা হচ্ছে। আবার অনেকে মাঘের মাঝামাঝি সময়ে ধানের চারা রোপণ করবেন। তারা এখন থেকেই জমি প্রস্তুত করে রাখছেন।
সদর উপজেলার চর রমনী, শাকচর, ভবানীগঞ্জ, লাহারকান্দিসহ কয়েকটি এলাকায় কৃষকদেরকে ফসলি জমি প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। আবার অনেকে বীজতলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ এ চারাগুলো নিজেদের চাষ করা জমিতেই রোপণ করছেন। আবার অনেকে চারাগুলো অন্যত্র বিক্রি করবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাষাবাদ নিয়ে জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায়ও কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) সকালে সদর উপজেলার আবিরনগর ও দক্ষিণ কালিরচর গ্রামের তালপট্টি এলাকা গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ দেওয়া হচ্ছে। দুই নারী তাদের ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করছেন। তার একটু অদূরে ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধও চারা তুলছেন। এর পাশেই একটি ক্ষেতে কয়েকজন কৃষক দলবেঁধে ধানের চারাগুলো রোপণ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবার লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় ২৭ হাজার ৪১৭ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে উপশি জাতের ১৯ হাজার ৬৬৬ ও হাইব্রিড ৭ হাজার ৭৫৩ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এ ধান পাঁকতে প্রায় ৫ মাস সময় লাগে। আগামী জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে ফসল কাটা হবে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে কয়েকজন কৃষক জানায়, ছোটবেলা থেকেই কৃষি চাষাবাদ করে আসছি। কৃষি কাজ করেই তাদেরকে জীবকা নির্বাহ করতে হয়। ধানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ করেন তারা। বিভিন্ন সময় তাদেরকে লোকসান গুণতে হয়েছে। ধান উৎপাদন হলেও কম দাম হওয়ায় তাদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া চাষাবাদ করতে গিয়ে তারা সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
কৃষক আমির হোসেন চাষি বলেন, আমি এসএসসি পাশ করেছি। সংসারে অভাব অনটনের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে প্রায় ৬ বছর আমি কৃষি কাজ করে আসছি। এখন ভালোই লাগে চাষাবাদ করতে। এখন ইরি আবাদ শুরু করেছি। প্রতিবছর মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে চাষাবাদ শুরু করি। এবার আবহাওয়া ভালো হওয়ায় তাড়াতাড়ি চারা রোপণ করা হচ্ছে।