দরিদ্র ঘরের সন্তান মিশু খাতুন। বয়স প্রায় ১৪ ছুঁইছুঁই করছে। অদম্য ইচ্ছে ও শক্তি থাকায় কিছুতেই দমাতে পারছে না মিশু খাতুনকে। পিতা-মাতা মিশুকে বিয়ে দিতে চাইলেও সে বিয়েতে বসতে একদম নারাজ। কারণ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাবা-মায়ের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে চায় মিশু খাতুন।
মা বাবার দুঃখ কষ্ট ঘোচাতে প্রয়োজন হয় অর্থের। সেই অর্থাভাবে শেষ পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষার দ্বারপ্রান্তে থেকেই হয়তো ফিরে আসতে হবে মেধাবী ছাত্রী মিশু খাতুনকে।
কলেজ ছাত্রী মিশু খাতুনের বাড়ি গাইবান্ধার সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের বিষ্ণপুর গ্রামে। তার পিতা মিনু ব্যাপারী পেশা একজন দিনমজুর ও মাতা রাশেদা বেগম সাংসারিক কাজের পাশাপাশি বাঁশের উপকরণ তৈরি করে বিক্রি করেন।
মিশু খাতুনের মা রাশেদা বেগম বলেন, বর্তমানে গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজের এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত মিশু। ছয় শতক বসতভিটা ছাড়া আমার কোনও সম্পত্তি নেই। কষ্টের সংসারে বহুবার তার পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়ে কিছুতে রাজী নয়। এ কারণে বাধ্য হয়ে এখনো তার পড়াশোনা চালু রেখেছি।
অভাবের সংসারে তার ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে এবার মার সাথে সাথে সকাল বিকাল বাঁশের তৈরি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে মিশু খাতুন। সংসার চালান ও প্রতি মাসে তার পেছনে ৫ হাজার টাকা খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে। কখন যে কলেজ যাওয়াই বন্ধ হয়ে যায় মিশুর।
মেধাবী ছাত্রী মিশু বলেন, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করেছি, তাই আজ পড়াশুনার পাশাপাশি বাঁশের তৈরি ছাদ, বেড়া, বিছানার পাটি,ধান রাখার বেড়,টেপা,পোলহি, খোলহি, পাখা, দরজা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরিকৃত পণ্য বাবাকে বানিয়ে দেই।
এসব উপকরণ বাজারে বিক্রি করে সংসার চালানই কষ্টকর তাই নিয়মিত কলেজ যাওয়া হচ্ছে না মিশুর। মিশুর পিতা মিনু ব্যাপারী বলেন, ভবিষ্যতে তার মেয়ে ডাক্তার হতে চায় তাকে পড়ানোর সামর্থ্য আমার নেই। এনিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছি কি করব, মেয়ের ভাল পোশাক থেকে শুরু করে পড়াশুনা যাবতীয় খরচের যখন টাকা চায় তখন বুক ফেটে কান্না চলে আসে যে, আজ মেয়ে কে জন্ম দিয়ে তার পড়াশুনার খরচ চালাতে পারছি না, আমি এক হতভাগা বাবা।
দিনমজুর পিতার একমাত্র মেয়ে মিশু খাতুন। শিশুকাল থেকে অদম্য ইচ্ছা ও আন্তরিক চেষ্টায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তার স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাধা এখন দারিদ্রতা।
পরিবাররা জানান, ছোট বেলা থেকেই মিশু খাতুন পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী। ২০১৮ সালে স্থানীয় বিষ্ণুপুর এসএনবি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে গ্রেড পয়েন্ট ৪.৮৩ পেয়ে পাশ করে। কলেজ ছাত্রী মিশু খাতুন বলেন, আমি ডাক্তার হতে চাই। এজন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।