স্বামী শ্রমিক হিসাবে কাজ করে দৈনিক ২/৩শ টাকা আয় করেন। যা দিয়ে দুই মেয়ের পড়াশুনা ও সংসার খরচ চালানো সম্ভব হয় না। তাই প্রতি বছর জমি বর্গা নিয়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেন কণিকা রানী। চাষাবাদের কাজ তিনি নিজেই করেন।
এভাবেই নিজের কথাগুলো বার্তা২৪ এর কাছে তুলে ধরেছিলেন কৃষাণী কণিকা রানী। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের তালুক হরিদাস গ্রামের দিনমজুর খগেন্দ্র নাথের স্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, হামার জমিত হামরা কাজ করি লজ্জা কিসের? হামরাতো চুরি করি খাই না, কাজ করি খাই। হামার দেশত প্রধানমন্ত্রীও নারী হামরাও নারী। হামার প্রধানমন্ত্রী যদি দেশ চালার পায় হামার (আমাদের) সংসার চালার পামো না। দুইজনে (স্বামী-স্ত্রী) না খাটলে (পরিশ্রম) সংসার চলে না ভাই। নিজের জমির ধান নিজেই খাইতে মজা। এ্যালা ভ্যানে নিয়ে এসব গো-খাদ্য হিসাবে বাজারে বিক্রি করমো।
ধানসহ উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে চলে দুই মেয়ের পড়াশুনার খরচ। বড় মেয়ে হরিপ্রিয়া রানী স্থানীয় হরিদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীতে ও ছোট মেয়ে মণিকা রানী হরিদাস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে বড় পদে চাকুরী পাইয়ে দিতেই তাদের এ সংগ্রাম যোগ করেন কণিকা রানী।
কণিকা রানী আরও জানান, নারীরা মাঠে কৃষি কাজ করলে কেউ কিছু বলে না। তবে তাকে ভ্যান গাড়ি টেনে নিতে দেখলে অনেকেই অবাক চোখে দাঁড়িয়ে দেখে। গ্রামের লোকজন তাকে পরিশ্রমী নারী হিসেবেই জানেন। এ ভাবে কৃষি কাজ করেই সংসারের সচ্ছলতা ফিরেয়ে এনেছেন কণিকা রানী। প্রতি বছর ফসল বিক্রি করেই বন্দক নিয়মে ফসলী জমিও কিনেছেন তিনি।
ওই এলাকার কৃষ্ণ কুমার বার্তা২৪কে বলেন, কনিকা অনেক পরিশ্রমী নারী। কনিকা নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করেন। আমরা গ্রামের লোক তার কাজ দেখে অবাক হই । নারী হয়ে এত কাজ একাই করে যা কিনা আমরাও পারি না। কনিকার স্বামী দিনমজুর খগেন্দ্র নাথ খুব পরিশ্রমী। তাদের একটাই স্বপ্ন তাদের দুই ছেলে মেয়েকে বড় করবে। তারা যেন লেখাপড়া করে তাদের মত শিখতে পারে পরিশ্রম করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
ওই গ্রামের কলেজ ছাত্র আব্দুল সোবাহান মিয়া বার্তা২৪কে জানান, কণিকা রানী একজন পরিশ্রমী নারী। কখনো অলস সময় পাড় করেন না। রান্না ঘর থেকে ফসলের মাঠ, সব খানেই কাজ করেন তিনি। তাই তার সংসারে কোন অভাব নেই।