উচ্ছিষ্ট কাগজে তৈরি হয় নতুন কাগজ

বিবিধ, ফিচার

সিদ্দিকুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বরিশাল, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 09:56:24

ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট কাগজ মেশিনের মাধ্যমে মন্ড বানিয়ে তৈরি করা হয় চৌকোণা আকৃতির মোটা কাগজ। মিষ্টি ও জুতার বাক্স থেকে বই বা খাতার মলাট হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এ কাগজ। কাগজ তৈরি কাজে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে না, পাশাপাশি কিছু মানুষের জীবিকার চাহিদাও পূরণ হচ্ছে।

বরিশাল নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের হরিপাশা এলাকায় ‘আর বি বোর্ড মিল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে তৈরি হচ্ছে এ কাগজ।

রোববার (৬ জানুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখা গেছে, টিনের একটি ঘরে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন কর্মচারী বিভিন্ন ভাগে কাজ করছে। তবে এদের মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। কাগজ মন্ড করা থেকে শুরু করে শুকানো পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছে।

তবে পুরো কাজটিই মেশিনে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর পাশেই খোলা মাঠে সারি সারি করে শুকানো হয় এসব কাগজ। এতে স্থানীয়দের কাছে কাগজের বিল নামেই পরিচিত পেতে শুরু করেছে।

কারখানার নারী শ্রমিক দেলোয়ারা বেগম (৫০) বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত কাগজ তৈরির কাজ করছি। তবে এ কারখানায় এক বছর ধরে আছি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে ২ হাজার ২০০ টাকা বেতনে চাকরি করলেও এখন এর দ্বিগুণ পাচ্ছি। আর এই টাকা দিয়েই ছয় থেকে সাতজনের সংসারে অর্থ যোগান দিচ্ছি।’

শুধু দেলোয়ারাই নয় নিলুফা বেগমসহ আরও অনেকেই এ কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেউ কেউ ছোট সন্তানকে সাথে নিয়েও কাজ করছেন এখানে।

আর বি বোর্ড মিলের দায়িত্বে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান (২৫) বলেন, ‘কিছু ভ্রাম্যমাল ছেলেপুলে (টোকাই) শহরের ময়লা কাগজগুলো সংগ্রহ করে এক জায়গায় করে রাখে। ওদের কাছ থেকে সেগুলো আমরা ক্রয় করে নিয়ে আসি। পুনরায় এই মোটা কাগজ তৈরি করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করে থাকি ‘

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি কেজি কাগজ ১৩ থেকে ১৪ টাকা দরে কিনে থাকি। এছাড়া এ কাগজ তৈরিতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং উচ্ছিষ্ট কাগজ থেকে নতুন কাগজ তৈরিতে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।’

উচ্ছিষ্ট কাগজ থেকে নতুন কাগজ তৈরির প্রধান কারিগর বাবুল মিয়া (৪৫) বলেন, ‘কাগজের ব্যবসা আগের মতো নেই। কাগজ কিনে সেটা প্রসেসিং করে নতুনভাবে তৈরিতে যা খরচ হয়, বিক্রি করে তাতে লাভ থাকে সীমিত। কোনো কোনো সময় লোকসানও হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আবহাওয়ার কারণে তেমন উৎপাদনও করতে পারি না। প্রতিদিন সর্বোচ্চ একটনের মতো উৎপাদন করতে পারি। তৈরির পর কাগজগুলো শুকানো হয় পাশের মাঠে। আর শুকানোর পরপরই কাগজগুলো ২৫ কেজির বান্ডিল করা হয়। ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হয় টন হিসেবে। মানভেদে প্রতি টন বিক্রি হয় ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর