আধুনিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে তাঁত শিল্প

বিবিধ, ফিচার

নিয়াজ আহমেদ সিপন,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, লালমনিরহাট, বার্তা২৪ | 2023-09-01 23:28:00

ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁত শিল্পের আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধ করেও বর্তমানে এর অবস্থা খুবই করুণ। যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে টিকতে না পেরে বিলুপ্তির পথে এখন প্রাচীন এই শিল্পটি।

লালমনিরহাট জেলা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা তাঁত শিল্পের গ্রাম হিসেবে বেশ পরিচিত। যে কয়েকজন এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন, তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে উচ্চমূল্যের কাঁচামাল আর কমতির দিকে থাকা চাহিদার সঙ্গে। এসব কারণে অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছেন পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া এই পেশাটি।

যারা এখনো টিকে আছেন, মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের। যেকোন সময় তারাও এই পেশাটিকে চিরতরে বিদায় জানাতে পারেন।

এক সময় কাকিনায় ৩/৪শত তাঁত পরিবার ছিল। বর্তমানে তা কমতে কমতে অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তাঁত-সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে কাকিনার পরিচিতি ও সুনাম ছিল দেশজুড়ে। কাকিনার তৈরি তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, বিছানার চাদর সরবরাহ হতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এমন কি দেশের বাহিরেও রফতানি করা হতো।

জানা গেছে, তাঁতিপাড়ার ৩শ পরিবারের গড়ে ওঠা তাঁত শিল্পকেন্দ্রিক কাকিনার কলেজ মোড়ে বাজারে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার কাপড় কেনাবেচা হতো। স্থানীয় তাঁতি ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে নৌ ও রেলপথে আসা তাঁতের কাপড়ের পাইকারি ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকতো হাটবাজারগুলোয়।

পরবর্তীতে সুতা, রঙসহ তাঁত শিল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাঁচামালের উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি ও দিন দিন বাজারে তাঁতের কাপড়ের চাহিদা কমে আসায় লোকসানের মুখে পড়তে থাকেন তাঁতিরা। অব্যাহত লোকসানের মুখে অনেকে বাধ্য হয়েছেন পেশা পরিবর্তন করতে। কেউ বা আবার নেশায় পড়ে এ পেশা ধরে রেখেছেন।

সরজমিনে জানা গেছে, তাঁতিদের পেশাগত উন্নয়নের লক্ষ্যে দিনাজপুরে একটি তাঁত প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড। এখান থেকে তাঁতিদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেয়ার কথা থাকলেও তারা এখন পর্যন্ত অনেকেই এ ঋণ থেকে বঞ্চিত। প্রান্তিক পর্যায়ের তাঁতিরা এ ইনস্টিটিউট থেকে তেমন সুবিধা পান না।

তাঁতিদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাকিনার তাঁতি আলিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেকটা নিরুপায় হয়েই বাপ-দাদার এ পেশায় আঁকড়ে রয়েছি। বাজারে সুতা ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বেশি। সে তুলনায় উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা নেই। বেশি দামে কাঁচামাল কিনে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।’

একই গ্রামের তাঁতি সরিফা খাতুন বলেন, ‘যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হচ্ছে। যন্ত্রচালিত তাঁতে কম সময়ে বেশি পরিমাণ কাপড় বানানো যায়। সেগুলোর বুননও বেশ শক্তিশালী। এ কারণে অনেকেই হস্তচালিত তাঁতে উৎপাদিত কাপড় কম পছন্দ করছেন। বাজারে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় আমাদের টিকে থাকা বেশ কঠিন।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, দফায় দফায় সুতার মূল্যবৃদ্ধি ও পাওয়ারলুম (যন্ত্রচালিত তাঁত) শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে তাঁত শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের বিভিন্ন উপকারসহ তাঁত শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন থেকে তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সব সময় তাদের সহযোগিতা করে আসছে এবং ঋণ প্রদান কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর