২ মার্চ: জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-03-02 14:38:50

পতাকা একটি দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতীক। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার পরিচয়। প্রতিটি স্বাধীন দেশের একটি করে জাতীয় পতাকা থাকে। সেই দেশের মানুষ, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় পতাকা। সোনার বাংলার প্রকৃতি ফুটে উঠেছে লাল-সবুজ রঙের পাতাকায়। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর অর্জিত স্বাধীন দেশের রক্তিম সূর্য সবুজ প্রকৃতির মাঝে উদিত হয়েছে পতাকার লাল বৃত্তের মাধ্যমে। তার সঙ্গে সুজলা-সুফলা বাংলার মাটিতে ফলা সবুজ প্রকাশ করে চির-নবীন বাংলা। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয় ১৯৭১ সালের ২ মার্চ।     

প্রথম পতাকা উত্তোলনের ঘটনাকে স্মরণ করে ২ মার্চ বাঙালিরা ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ উদযাপন করেন। দিনটিকে 'পতাকা উত্তোলন দিবস'ও বলা হয়ে থাকে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের কথা সগৌরবে জানিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হওয়ার কারণে বাঙালিরা আন্দোলনে নামে। শান্তিপ্রিয় বাঙালি জাতি স্বাধীনতার স্পৃহায় হয়ে ওঠে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো দৃঢ়।

নিজেদের সেই চেতনা ফুটিয়ে তুলতে এবং সমগ্র বাঙালি জাতিকে জাগ্রত করতে তরুণ ছাত্রনেতারা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের পরিচয় হিসেবে পতাকা উত্তোলনের। ২ মার্চের পতাকা আমাদের মুক্তির প্রতীক হয়ে মুক্তিযুদ্ধের লড়াই শুরুর দিকনির্দেশনা হয়ে ওঠে পরাধীন পাকিস্তানের শাসনামলে।

স্বাধীন বাংলার পতাকা

১৯৭১ সালের ২ মার্চ সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেত হন ছাত্র নেতারা। সবার দৃষ্টিগোচর করার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কলাভবনের দক্ষিণ-পশ্চিমের গাড়ি বারান্দা থেকে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন ডাকসু‘র তৎকালীন সভাপতি আ.স.ম. আবদুর রব। এছাড়াও ডাকসু’র তখনকার জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগ প্রধান নূর-এ-আলম সিদ্দিকী এবং ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান সিরাজসহ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যান্য নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।  

পতাকাটি তৈরি করেছিলেন প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমান বুয়েট)-এর ছাত্ররা। বঙ্গবন্ধুকে জানিয়ে ১৯৭০ সাল থেকেই এই পতাকা বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল। সিরাজুল আলম খান, কাজী আরেফ আহমেদ, শিবনারায়ণ দাসসহ আরো কিছু ছাত্রদের সমন্বয়ে একটি দল গঠন করা হয়। তাদের নেতৃত্বেই পতাকা তৈরি এবং উত্তোলনের সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়। (বিবিসি বাংলার তথ্যমতে)   

মুক্তিযদ্ধের আগেই উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা
 

মূল পতাকার রূপকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেই দলের অন্যতম সদস্য শিব নারায়ণকে। ৬ জুন রাতে বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে শিবনারায়ণ দাসসহ অন্যান্যরা পতাকার ডিজাইন করার উদ্দেশ্যে বসেন। তথ্যমতে, ২২ জন সদস্যের সেই দল রাত ১১টার পর এই নকশার কাজ শেষ করেন।    

২ মার্চ পতাকা উত্তোলনের পর থেকে স্বাধীনচেতা বাঙালিদের কাছে প্রায়ই দেখা যেতো পতাকা। বিভিন্ন আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পুরোটা সময় বাঙালির মুক্তিলাভের অনুপ্রেরণা হয়েছিল স্বাধীন বাংলার পতাকা। বাঙালিদের রুখতে বরাবরই মরিয়া হয়ে ছিল পাকিস্তান সরকার। ১৯৫২ সালে শহীদ মিনার ভাঙা বা বাংলা নববর্ষে আলপনা আঁকায় বিধিনিষেধ থেকে শুরু করে, বাংলার ঐতিহ্য রক্ষাকারী এবং স্বাধীনতা প্রত্যাশী বাঙালির সব পদক্ষেপেই বাধা দিয়েছে পাকিস্তানি সরকার। সেই দাসত্ব থেকে মুক্তি পায়নি জাতীয় পতাকাও।

২৩ মার্চ, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু প্রথমবার নিজ হাতে পতাকা উত্তোলন করেন

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা ভবনে হামলা চালানো হয়। 'অপারেশন সার্চলাইট' বাস্তবায়ন এবং গ্রেফতার হওয়ার দু’দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজহাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ২৩ মার্চ।   

এরপর ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর আচমকা হামলার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। জাতীয় পতাকা বুকে নিয়ে লাখ রাখ বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে স্বীকৃতি পায়।   

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার শিল্পী কামরুল হাসানকে পতাকার নকশা সংস্করণের কাজ দেন। পতাকার মানচিত্র বাদ দিয়ে সূক্ষ্ম এবং সঠিক মাপসহ নকশা  করেন কামরুল হাসান। সবুজ জমিনে টকটকে লাল রক্তিম সূর্য রাঙা পতাকা সেই বছরের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। অর্ধশতাধিক বছর ধরে বাঙালির ত্যাগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বয়ে চলেছে আমাদের এই- জাতীয় পতাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর