ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস ৪ এপ্রিল

, ফিচার

কামরুল হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, হবিগঞ্জ | 2024-04-04 15:22:24

৪ এপ্রিল, ১৯৭১। এদিন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল চূড়ান্ত করার প্রথম বৈঠক। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন ২৭ সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই বৈঠকেই রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে ভাগ করা হয়।

এ ছাড়া নেওয়া হয়েছিল কালজয়ী নানান সিদ্ধান্ত। তবে ঐতিহাসিক বাংলোটি এখন চা কোম্পানির সীমানা প্রাচীরে প্রায় অবরুদ্ধ। দীর্ঘদিনেও গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানের স্মৃতি সংরক্ষণেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।

সর্বশেষ, একযুগ আগে নেওয়া এলজিইডির ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স’-এ কাজ শুরু হয়নি আজও। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের দাবি, বাংলোটিকে দ্রুত জাদুঘর করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সব মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ১০০ একর জমিতে সেখানে কমপ্লেক্স তৈরি করার বিভিন্ন ভাস্কর্য করার কথা ছিল কিন্তু কিছুই করা হয়নি। সেখানে স্মৃতিসৌধটি অবহেলিতভাবে পড়ে আছে। বছরে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ছাড়া সেখানে যাওয়া থাকে না কোনো কার্যক্রম।

এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে এবারও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। তবে রমজানের কারণে সীমিত আকারে পালিত হবে এসব অনুষ্ঠান।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল (অব.) আতাউল গণি ওসমানী, তৎকালীন মেজর সিআর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল এমএ রব, রব্বানী, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, এমপিএ মৌলানা আসাদ আলী, লে. সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কেএম শফিউল্লাহ প্রমুখ।

কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানীর নেতৃত্বে নেওয়া হয়, যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি। ওই সভায় ১০ এপ্রিল দ্বিতীয় বৈঠক ও সরকার গঠনের প্রস্তাবও করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।

শপথবাক্য পাঠ করানোর পর নিজের পিস্তল থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন এমএজি ওসমানী।

পরে ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম শফিউল্লাহ তার হেডকোয়ার্টার স্থাপন করেন তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে ওঠে। কর্নেল (অব.) এমএজি ওসমানীসহ কয়েকটি সেক্টরের কমান্ডাররা বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনানায়কদের পদচারণায় মুখরিত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২, ৩ ও ৪ নম্বর সেক্টরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তেলিয়াপাড়া চা বাগান ম্যানেজার বাংলোর পাশে নির্মিত হয় বুলেট আকৃতির মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এ স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ, বীর উত্তম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল জানান, দিবসটি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর