ফুলের সাথে প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক সুনিবিড়। আর সেই ভালোবাসার সম্পর্কে আলো ছড়ায় ‘গোলাপ ফুল’। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের উদযাপনের শুরুটা হয় গোলাপ দিবস অর্থাৎ ‘রোজ ডে’ দিয়ে।
এদিনে এক গুচ্ছ গোলাপ উপহার দিয়ে ‘তোমাকে ভালোবাসি’ বলে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের সূত্রপাত ঘটে।
গোলাপ মানে যেন লড়াই জেতার গল্পও। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায়ও পাওয়া যায় সেই লড়াইয়ের চিত্র –‘আমারও প্রিয় রং লাল/আমারও প্রিয় ফুল গোলাপ। আমি লড়ছি…….’! ভালোবাসার মানুষটির হাতে গোলাপ তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় লড়াই জেতার সেই গল্প।
উপহার হিসেবে গোলাপের চাহিদা চিরন্তন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে। লাল, হলুদ, সাদা, বেগুনী, গোলাপি বিভিন্ন রঙের সঙ্গেই বদলে যায় গোলাপের ভাষা, আবেদন।
তবে যুগের পর যুগ ধরে প্রেমের সৌন্দর্যের প্রতীকে একছত্র আধিপত্য লাল গোলাপের। কবির কবিতায়, শিল্পীর গানে, গল্পে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে রক্ত রাঙা গোলাপের কথা।
গোলাপ হাতে নিয়ে প্রেমিকের কল্পনায় ভেসে ওঠে– প্রিয়ার কালো কুন্তল, সুদৃশ্য কবরী; হাতে থাকা ফুল তাতে গুঁজে দেওয়ার বাসনা। প্রিয়জনের দেওয়া লাল গোলাপের পাপড়ি কখনও স্থান পায় রুমালের ভাঁজে, এক চিলতে হাসির আভা নিয়ে ঘুমানো বালিশটির পাশে। নারীদের কাছেও ভালোবাসার পরম প্রাপ্তি হলো লাল গোলাপ। ঠিক যেন ললিতা ধর চৌধুরীর গানের সেই সুরের আকুতি, ওই লাল গোলাপটা দাও না আমায়, দাও না/বুকে করে রাখবো তাকে/ছুঁয়ে ছুঁয়ে রাখবো তাকে…..। সব কিছু মিলে বলতেই হয়, প্রেম-ভালোবাসার সব সুন্দর যেন লুকিয়ে ওই গোলাপেই!
তাই তো মুগ্ধ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন ‘আমি চোখ মেললুম আকাশে/ জ্বলে উঠল আলো/ পুবে পশ্চিমে/ গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম সুন্দর/ সুন্দর হল সে’।
ফুলের রাণী গোলাপ শুধু ভালোবাসার আলো ছড়ায় না। সৌন্দর্য সচেতনতায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হচ্ছে গোলাপ। গোলাপ ফুলের তৈরি গোলাপজল, সাবান, স্প্যাম্পু, সুগন্ধি, নারী-পুরুষ সকল মহলের কাছে কাঙ্খিত।
বিশ্বের সব দেশে কম-বেশি গোলাপ উৎপাদন হয়। তবে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ বুলগেরিয়াকে বলা হয় গোলাপের উপত্যকা। প্রতিবছর জুনে দেশটিতে গোলাপ তোলার মৌসুমে ‘গোলাপ উৎসব’ উদযাপিত হয়। বুলগেরিয়ায় ‘কাজালনুক’ নামে একটি গোলাপ চাষ হয়-যার নির্যাস দিয়ে তৈরি সুগন্ধি বেশ মূল্যবান।
বাংলাদেশে যশোরের গদখালী, সাভার বিরুলিয়া গ্রাম, সাদুল্লাহপুরসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ব্যাপক হারে গোলাপের চাষ হয়। তবে হাইব্রিড চাষের কারণে গোলাপে সৌন্দর্য থাকলেও মাতাল করা ও পরিচিত সেই সুঘ্রাণটি হারিয়ে যাচ্ছে। দেশি জাতের ছোট জংলি গোলাপের সুবাস তেমন একটা এখন আর পাওয়া যায় না।
এবার আসি রোজ ডে-তে। জানা যায়, গোলাপ দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালন শুরু করেন ডেনমার্কের রাণী আলেকজান্দ্রা। তার বিবাহবার্ষিকীতে আলেকজান্দ্রা লন্ডনে এলে হাজার হাজার লাল গোলাপ দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাঁকে।
আলেকজান্দ্রা এত গোলাপ দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন, গোলাপ বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিবেন। ওই দিন দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলো গোলাপ। সেই থেকে প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে চালু হয় বিশেষ এই রোজ ডে।
ঝরা পাতার মর্মর শব্দ আর রুক্ষ শীতের অবসান ঘটিয়ে বসন্তের মাসে শুরু হলো প্রেমের সপ্তাহ। যদিও জানি, ভালোবাসা কোন নির্দিষ্ট দিনক্ষণের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়; এরপরও ভালোবাসা উদযাপনের এই সাতটি দিনের একটি দিন না হয় হোক আপনার প্রিয়জনের, পরম কাঙ্ক্ষিত মানুষটির। প্রিয় এই মানুষটি হয়ত সারা বছর জুড়ে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে লাল গোলাপটির সঙ্গে আপনার মনের কথাগুলো শুনবেন বলে অপেক্ষায় রয়েছেন!