খরস্রোতা বাঙালি নদীর বুকে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য চর। এসব চরে এখন ধান-গম থেকে শুরু করে বিভিন্ন রবি শস্য ফলানো সম্ভব। বর্ষা কালে বাঙালি নদীতে পানি থৈ থৈ করলেও শুষ্ক মৌসুমে থাকে হাটু পানি। এই মৌসুমে মরা নদীতে পরিণত হলেও বর্ষাকালে নদীর রুপ ভিন্ন। প্রতি বছর পার ভেঙে ফসলি জমি আর বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়।
বগুড়া জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, গাবতলী, শেরপুর এবং ধুনট উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বাঙালি ছোট হলেও একসময় নদী ছিল খরস্রোতা। সারা বছর প্রচুর পানি থাকতো নদীতে। বড় বড় পাল তোলা ও মালবাহী নৌকা চলাচল করায় নদী তীরবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি হাটবাজার গড়ে ওঠে অনেক আগেই।
এছাড়াও একসময় নদীতে সারা বছর বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ পাওয়া যেত। অসংখ্য মানুষের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম ছিল এই বাঙালি নদী। সারিয়াকান্দি উপজেলার জোরগাছা গ্রামের বাসিন্দা হাতেম আলী বলেন এই নদী এখন ইতিহাস। আগামী প্রজন্ম হয়ত নদীর উপর নির্মিত বড়-বড় ব্রীজ দেখে মনে করবে এখানে কোন একসময় বড় নদী প্রবাহিত ছিল। গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি তাছের আলী বলেন বাঙালি নদী পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ অঞ্চলের মধ্যে তরনীর হাট ছিল এক সময় অনেক পরিচিত। দূর-দুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা নৌপথে তরনীর হাটে আসতেন। তিনি বলেন এখন বাঙালি নদীর সেই যৌবনও নেই, সেই সাথে তরনীর হাটের এীতহ্য নেই আগের মত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উত্তরের নীলফামারী জেলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাল ও জলাশয় থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়। নদীটি সৈয়দপুর উপজেলার নিম্ন জলাভুমি অতিক্রম করে সাধারণ নদী রুপে রংপুর জেলার পুর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। এরপর গাইবান্ধা জেলা গোবিন্দগঞ্জ কাটাখালী এলাকায় বাঙালি নাম ধারণ করে সাঘাটা উপজেলার দিকে অগ্রসর হয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এরপর বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলায় প্রবেশ করে। নদীটি সোনাতলা উপজেলা থেকে সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রবেশ করে আবারো তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি শাখা গাবতলী উপজেলায় দুর্গা হাঁটা প্রবেশ করে দ্বিত্বীয় শাখাটি সারিয়াকান্দির ফুলবাড়ি হয়ে আবারো গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘীতে প্রবেশ করে এবং তৃতীয় শাখাটি দক্ষিণে শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি হয়ে ধুনট থানার গোসাইবাড়িতে প্রবেশ করে। বাঙালি নদীটি আকাঁ বাকাঁ প্রকৃতির নদী। বগুড়ায় জেলা বিভিন্ন উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বাঙালি নদীর তীরে অসংখ্য জনপদ গড়ে উঠেছে। বগুড়া জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঙালি নদীতে বর্ষা কালে পানিতে পরিপুর্ন থাকলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে নদীটি নাব্যতা হারিয়ে ফেলে।
সোনাতলা উপজেলার চড়পাড়া ও মধুপুর এলাকায় দেখা গেছে নদীতে জেগে ওঠা বিশাল চর জুরে চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, গম ভুট্টা, সরিষা, বাদাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফসল। এই এলাকারা কৃষক আমজাদ, সাহেব আলী ও সামছু মিয়া জানান নদীটির চরে চাষাবাদে খরচ অনেক কম। সেই সাথে ফলনও হয় বাম্পার। এর কারন হিসেবে তারা বলেন বর্ষাকালে শেষে জেগে ওঠা চরের মাটিতে ব্যাপক পলি থাকায় জমি উর্বর হয়। ফলে তাদেরকে অতিরিক্ত সার ব্যবহার করতে হয়না। তার এই অঞ্চলের মানুষ বাঙালি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদী খননের দাবি জানান।