হেমন্তে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, বকফুল, ছাতিমের গন্ধ যেমন কাছে টানে। তেমনি সকালের হালকা কুয়াশায় শিশির ভেজা ঘাসে মন জুড়ায় হেমন্তে। ভোরের পাখির কিচির মিছির শব্দে নীল আকাশের রং ও রোদের মিতালী জানান দেয় হেমন্তের। সব মোহ বাদ দিয়ে প্রকৃতিতেই হারাতে চায় মানুষ। সঙ্গে সোনালি ধান, কৃষকের ধান ঘরে তোলা আর কৃষক-কৃষাণির আনন্দ সবই হেমন্তের রূপের অনুষঙ্গ।
হেমন্তের শহর খুব একটা লোভনীয় না হলেও গ্রাম রূপ নেয় স্বর্গে। সাদামাটা মানুষের সাথে প্রকৃতির মিলনের এক মধু ঋতু এটি।
শিশির ভেজা সকালের ঘাসের ডগায় পা ফেলে কাজে যায় কৃষক। সাথে শিশুরা রোদ মাখে গায়।
হেমন্তের অপেক্ষায় থাকে ‘বাল্য’ দলেরা। এই হেমন্তে চাষিরা ঘরে তোলে সোনালি ধান। হাট থেকে মাছ-মাংস কিনে নতুন ধানের চাল দিয়ে হয় নবান্নের উৎসব। যার অপেক্ষায়ই মূলত মুখিয়ে থাকে পাড়া মহল্লার কিশোর কিশোরীর দল। কলা পাতা বা নানা পাতে গরম ভাতের ধোয়ায় ফুঁ দিয়ে মুখে ভাত তুলে বলে 'দাদি আর একটু ভাত আর ঝোল হবে'
হেমন্তের সকালের আবেশ যেমন মন কাড়ে প্রকৃতি প্রেমীদের, তেমনি শ্রমিকদের মুখে ফুটে সোনালি হাসি। নতুন ধান কাটা মারার কাজে তাদের পাততে উঠে মাছ ভাত, সাথে শীতের সবজির লাবড়া যেন হেমন্তে গ্রামের প্রিয় খাবার।
তবে আগের কার দিনে ধান ঘরে তোলার আনুষ্ঠানিকতার বেশ আমেজ থাকলেও এখন আর নেই। মেশিনেই হারিয়েছে ঐতিহ্য তবে বদলায়নি রীতি। ধান কাটার দল এখন ধান আধুনিক মেশিনে মাড়ালেও খড়ের গাদার চিত্র মন জুড়াবে এটাই স্বাভাবিক।
মেশিনও বেশ জব্বর, 'এক মেশিনে ধান মারা এক মেশিনে সব' আধুনিক স্লোগানের মিল ও আছে বটে। গেরস্ত বাড়ির সম্মান রক্ষার্থে বেশ পটু এই মেশিন। উঁচু নলের মধ্য দিয়ে খড় উঠে যায় পলার স্থানে। সেখানেই গেরস্ত হেঁটে হেঁটে আকার দেয় যেমন গাদা চাই। সে দৃশ্যও তো মন কাড়া।
হেমন্তের বিকেল যেন সাজে নিজের মত করে। বিশেষ করে পাকা ধানে সূর্যের হেলে আসা কিরণ নতুন রূপ দেয় প্রকৃতির। গাছে পাতায় ঝিল মিল রোদের ঝলকানিতে পায় ছন্দ৷
শীতের পিঠাপুলির নানা গল্প শুনলেও গ্রামের ভাপা পিঠা ওয়ালীর বাড়িতে ফজরের আজানের সাথে জ্বলে চুলো। সেখানে ধান, চাল, টাকা নিয়ে জমা হয় গ্রামীণ বধূরা। সেই পিঠা এনে বেশ আমেজ করেই খায় গেরস্ত বাড়ির লোকজন।
কালের বিবর্তনে গ্রাম্য ঢেঁকির শব্দ হারিয়ে গেলেও হারায়নি মোরগের ডাক। আর হেমন্তের অমৃত খেঁজুরের রসের মোহ আছে থাকুক বহুকাল বহু বছর।