চায়নাকে দায়ী করা শুধু ভয়ানকই না, এটা আসল ঘটনা বুঝতেও অসুবিধা করে

, ফিচার

অ্যান্ড্রু লিউ | 2023-09-01 01:23:14

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম ইউরোপের রাজনীতিবিদেরা কোভিড-১৯ মহামারিতে তাদের অব্যবস্থাপনা ঢাকার ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বস্তুত ‘চায়না’ নামক ধারণাটি তাদের কাছে ‘বলির পাঠা’ হয়েই ধরা দিয়েছে। কিন্তু, তাদের চায়নাকে দোষী করবার আসল ‘বিউটি’টা এই বিষয়ের অস্পষ্টতার মধ্যেই নিহিত আছে। সমালোচকের দল শুধু এই একটা বিষয়েরই কেন নিন্দা করে যাচ্ছে যে, (চায়নার) কমিউনিস্ট পার্টি কিভাবে জানুয়ারির ভয়ঙ্কর সপ্তাহগুলোতে তথ্য গোপন করতে পারল? যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল—ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ—প্রত্যেকেই এই প্রতিরক্ষার ঢাল ব্যবহার করে যাচ্ছেন।

এটা কি সুনিশ্চিত হয়েছে যে, চায়নার নাগরিকেরাই প্রকৃত কালপ্রিট আর তাদের উদ্ভট সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভ্যাসই এই ভাইরাসের জন্য দায়ী? বিষয়টা নাইজেল ফারাজের (ব্রিটিশ পলিয়িশিয়ান) হাতে অর্পণ করলে বোধগম্য হতে পারে—যিনি বোকার মতো দুইদিকেই কথা বলে যাচ্ছেন। দু পার্শ্বই একসঙ্গে দখল করতে চাচ্ছেন। “চায়নার নাগরিকদের বিরুদ্ধে কোনো মন্দ-উচ্চারণ” নয় বটে, কিন্তু সমস্যাটা আসলে “চায়নার বন্যপ্রাণী-বাজারের ভয়ঙ্কর হাইজিন কন্ডিশন”-এর সঙ্গেই জড়িত।

যাহোক, আসল বিষয় হলো, আমরা ইদানীং দেখতে পাচ্ছি, চায়নার সমালোচনা কেমন করে এখানকার চাইনিজ এবং এশিয়ান বসবাসকারীদের ওপর একটি বর্ণবাদী আগ্রাসনে রূপ নিচ্ছে। যেই এশিয়ানরা মূলত যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ এবং ওশেনিয়ার দেশগুলোতে বসবাস করে থাকেন।

আরো পড়ুন করোনাভাইরাস পরবর্তী দুনিয়া

ভিন্ন জাতীয়তাবাদের প্রতি ঘৃণা থেকে তৈরি এসকল আগ্রাসনের বিষয়ে যারা, অর্থাৎ উদারপন্থীরা যেসব নিন্দাবাক্য উচ্চারণ করেন, আমি সেগুলো সমর্থন করি। কিন্তু আবার ভয়ই পাই যে, চায়নার মানুষ এবং সংস্কৃতিকে স্বীকার করে উদারপন্থীদের এই কান্না শেষপর্যন্ত এমন কোনো আগ্রাসনের ছকই তৈরি করবে কিনা, যেই ছকের মধ্যে পড়ে আমরা তর্কের বিষয়-আশয় এবং সেগুলোর মধ্যকার তফাৎ-পার্থক্যগুলোকেই নিশ্চিহ্ন করে দেব। যেই বিষয়গুলো আমরা ইতিহাসের গতি-প্রতিক্রিয়ার মহামূল্য খেসারতের মধ্য দিয়ে পাচ্ছি।

এই মহামারির বিষয়ে চায়নার ভূমিকা বুঝতে গেলে আমাদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, গত কয়েক বছরে বৈশ্বিক বাজারে চায়নার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান কী। মূলত এই বিষয়টাই ভাইরাসের বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, এবং ওইসকল ইউরো-আমেরিকান নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ারও বীজবপন করেছে।

আচ্ছা, এই অভিযোগটি গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই শুরু করা যাক যে, বনরুই খাওয়ার এক অদ্ভুত সংস্কৃতির দোষেই নোভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে। একথা যদিও সঠিক যে চায়নার মূল ভূখণ্ডে বনরুইয়ের আঁশ ও মাংস একটি লোকজ ঔষধ হিসেবে প্রচলিত, কিন্তু পরিসংখ্যান আসল ব্যাপারটা নির্দেশ করছে। এটা (এই বনরুইয়ের উপস্থিত) মূলত আমাদের বৈশ্বিক পুঁজিব্যবস্থাপনারই প্রভাব, এবং যা মূলত চায়নার ব্যবসায়িক শ্রেণির প্রবৃদ্ধি জোগানোতে লিপ্ত ছিল। ১৯৯৪ সালে প্রাণীটির কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ১৪ ডলার, আজকে সেটি দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৬০০ ডলারে। সেইসঙ্গে, অবৈধ পাচারের দায়ে প্রতিদিন এটি দশ টনের বেশি বাজেয়াপ্তই হতো। এই প্রাণিটির ভোক্তারা সাধারণতই এটি অর্ডার করতেন তাদের বিত্তভাবপূর্ণ অবস্থার প্রকাশ করতে, অথবা স্টক মার্কেটের একটি নির্দিষ্ট ভালো দিন উদযাপনের জন্য। সংখ্যায় এই বনরুইয়ের ভোক্তাশ্রেণী চায়নার মূল জনসংখ্যার অনুপাতে নগন্য। এমনিতে, চায়নার বেশিরভাগ নাগরিকই এইসব অনিষিদ্ধ প্রাণী গ্রহণ করবার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকেই সমর্থন করে থাকে।

আরো পড়ুুন করোনাবিরোধী যুদ্ধে মানবজাতি নেতৃত্বহীন

এই পরিসংখ্যান বিবেচনায়, নতুন করে আলাপে আসা বনরুইয়ের ঘটনাটাও শেষপর্যন্ত চায়নার উদারবাদী অর্থনীতির ফলাফল হিসেবেই প্রতিপন্ন হয়—যা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এবং যা সাদামাটা অর্থে চায়নার সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার অংশ না।

ভাইরাসের এই উৎপত্তির বিষয়টি, ওই একই বিষয়—ওই অর্থনৈতিক জোরজবস্তিই যা কিনা ভাইরাসের পৃথিবীব্যাপী বিস্তারেও ভূমিকা পালন করেছে। উহান, যেই শহরে ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে, তা মূলত কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চলের মধ্যকার একটি কেন্দ্রস্থল, যথা ঘুয়াংঝু, সাংহাই। এই শহরটি একটি ‘দ্বিতীয় সারি’র শহর হলেও, উহান, সেইসঙ্গে আজকালকার বিশ্বায়নের জন্য উপযুক্ত এক সর্বাধুনিক স্থান হিসেবেই বিবেচ্য। পুঁজিবাদ যে ধরনের সস্তা মূল্যের জমি আর অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারের অনুবর্তী থাকে, এটি সেরকমেরই একটি জায়গা।

ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের করোনাভাইরাস কেসগুলো বেশ কিছু অর্থনৈতিক লেনদেনের খবরাখবর আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে, যেগুলো দৃষ্টির অনেকটাই বাইরে ছিল। যেমন ইরানের বৃহত্তর শহর কোম-এর পরিকাঠামোতে চায়নার বিনিয়োগ, অথবা, উহানের গাড়ির পার্টস তৈরির ইন্ডাস্ট্রি কারখানাগুলোর সঙ্গে সারবিয়া, সাউথ কোরিয়া অথবা জার্মানির চুক্তি। হয়তো বা, নোভেল করোনাভাইরাস সবার প্রথম চায়নাতেই আবির্ভূত হয়েছে, তা সত্ত্বেও এই মহামারির নিয়ত ক্রিয়াশীল বিস্তার এবং এর চূড়ান্ত পরিণতির জন্য দায়ী কয়েকটি মাত্র বৈশ্বিক সংঘটক, যথা—বাণিজ্য, পর্যটন, এবং পণ্যের সাপ্লাই চেইন। আর এই সংঘটকগুলো মূলত একবিংশ শতকের মহাবিত্তপ্রতিম চাহিদাযজ্ঞের ওপরেই নির্মিত।

চাইনিজ সংস্কৃতির কিছু প্রচ্ছন্ন ধারণার ওপর দোষ দিয়ে আলাপ শেষ করবার সত্যিকার বক্রাঘাতটা হলো, এই মহামারিকে সবচাইতে ভালোভাবে প্রতিহত করেছে কিন্তু চাইনিজ সংস্কৃতিরই সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশ, যেমন তাইওয়ান (৩৮০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু), সিংগাপুর (১৯১০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু), এবং হংকং (৯৭৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু)।

হ্যাঁ, তাদের এই দায়িত্বশীল পরিচালনা অনেকটাই ২০০৩ সালের সার্স প্রাদুর্ভাবের আঘাতের বরাতে প্রাপ্ত, কিন্তু এটি সেইসাথে কিছু সামর্থ্যবান কল্যাণকর রাষ্ট্রের ইতিহাসের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়। যেই রাষ্ট্রগুলো ক্রমাগত স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করেছে এই ধরনের সংকটকাল ভালোভাবে মোকাবেলা করবার উদ্দেশ্যে। ইউরোপ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের দৃশ্য এমনটা নয়।

[আমার] এই চায়না-বিরোধিতাকে প্রতিহত করবার মানে কিন্তু ক্ষমাপ্রার্থনা না, বা [চায়না] রাষ্ট্রের ক্রিয়াকলাপকেও জাস্টিফাই করা না। এটা খুবই পরিষ্কার যে, সেখানকার স্থানীয় দায়িত্বশীলেরা ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াংকে চুপ করিয়ে ভুল করেছে। যিনি এই ভাইরাসের বিষয়ে বন্ধুদেরকে সতর্ক করেছিলেন, ঠিক যতটা আগে তা করা সম্ভব ছিল। এবং এটাও ঠিক যে, চায়না সরকার ধারাবাহিকভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর প্রতুলতার বিষয়টিও দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

কিন্তু একটি স্বেচ্ছাচারী শাসন এবং একটি গণতান্ত্রিক শাসনের মধ্যকার বৈপরিত্য কি এতটাই প্রকট, যেমনটা পশ্চিমের ভাবাদর্শীরা বলে থাকে? বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক এ ব্যাপারে একমত যে, উহানে ঘটমান ওই সময়কার ক্রাইসিস চায়না সরকার প্রথম তিন সপ্তাহ চাপা দিয়ে রেখেছিল, এবং এই নিখোঁজ সময়টাও মূলত ভাইরাসাটির স্থানিক এবং বৈশ্বিক পার্থক্যগুলোকে মীমাংসা করেছে। তথাপি এটাই প্রতীয়মান যে, চায়না ছাড়া অন্যান্য সরকারেরা সেই তুলনায় বরং অনেক দেরিতেই সজাগ হয়েছে। যুক্তরাজ্য একঘেয়ে ভঙ্গিতে ঘটনাটা আট সাপ্তাহ ধরে টেনেছে, আর যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট বিপদসংকেত উপেক্ষা করছে ৭০ দিন পর্যন্ত।

এই নিষ্ক্রিয়তা অংশত ওই পশ্চিমা কৈবল্যেরই একটা ‘প্রোডাক্ট’। যে বিশ্বাস করতে চেয়েছে ভাইরাস এবং মহামারি যা হবার সব ‘ওইখানেই’ হবে, ওইসব গরিব অ-শেতাঙ্গ দেশে।

আরো পড়ুন করোনাভাইরাস : দেশভেদে মৃত্যুহারে ফারাক কেন?

এশিয়াবিরোধী রেসিজমকে চ্যালেঞ্জ করবার পক্ষে এই দিকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইসব ঝগড়াঝাঁটি ও দোষাদোষি খেলা না খেলে—‘জাস্টিস ইজ গ্লোবাল’-এর ডিরেক্টর তবিতা জো যেমনটা বলেছেন—আমাদের উচিত বুঝতে পারা যে, কিভাবে এসব অদূরদর্শী জাতীয়তাবাদী বিষয়-আশয় মারাত্মক রকমের অকার্যকর প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ইতালির খারাপ সাপ্তাহগুলো চলাকালে, সেখানকার দায়িত্বশীলরা স্বীকার করেছেন, তারা প্রথমদিকে উহানের ক্রাইসিসটাকে দেখেছিলেন ‘সায়েন্স ফিকশন মুভি আর এর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রে, ক্যানসাসের এক রাজনীতিবীদ বিবৃতিতে জানিয়েছেন তার এলাকা নিরাপদ, কারণ সেখানে হাতেগোনা কয়কজন চাইনিজ নাগরিকই আছেন। ফিলেডেলফিয়াতে জাতিবিদ্বেষের আরো ভয়ানক মাত্রা দেখা গিয়েছে। সেখানে গুজব ছড়িয়ে গেছে যে, এই ভাইরাস কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের কিছু করবে না। কারণ এটা একটা ‘চাইনিজ ডিজিজ’। এমনসব ভুলভাল তথ্য যে, দায়িত্বশীলরাই এখন ভয় পাচ্ছেন যে এগুলো হয়তো অসাম্যকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।

পরিশেষে, এই মহামারি এবং এর সহগামী এশিয়াবিরোধী নেতিবাচকতা, উভয়েই সক্রিয় আছে—এইসব সংস্কৃতি আর ভিনদেশিকে ঘৃণা করবার প্রশ্নের মধ্য দিয়ে, এবং জীবন-মৃত্যুর গুরুতর পরিণতিকে মাথায় করে। পরোক্ষ অর্থে, এই দুটোই বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে চায়নার বিপুল উত্থানের বাইপ্রোডাক্ট। এই উত্থান শুধুমাত্র ভাইরাসের জন্য দায়ী ‘সাপ্লাই চেইন’ আর ‘পর্যটিন নেটওয়ার্ক’কেই পরিগঠন করে না, বরং ইউরো-আমেরিকার শতবর্ষী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইজ্জতকেও হুমকির মুখে ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যে কিছু জনপ্রিয় দাবির মধ্য দিয়ে এই ধরনের ভয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, চায়না একাই—তাদের নিজ দেশের রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক শ্রেণি নয়—উৎপাদনের কাজ হারাবার কারণে দায়ী ছিল। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ‘হুয়াই’য়ের ফাইভ জি নেটওয়ার্ক প্রোভাইড প্রসঙ্গে নাগরিকদের দুশ্চিন্তা খুব স্পষ্টভাবে সামনে চলে এসেছে, এটাকে গ্লোবাইলাইজেশনের বিরুদ্ধ অবস্থানকৃত একটি গণভোটের ফলস্বরূপও দেখা যেতে পারে। চীনের প্রতি এই ভয় শুধু করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি না, বরঞ্চ এই ভয়ের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত রূপকটাই প্রতিভাত হয়ে যাচ্ছে যে, কিভাবে পৃথিবীব্যাপী অদৃশ্য এক বিপুল ধ্বংসযজ্ঞের আরম্ভ হয়েছে।

এই রূপক সুস্পষ্ট করে যে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেই এই বিপজ্জনক চিন্তাভাবনাগুলা মুহূর্তে হারিয়ে যাবে না, যতক্ষণ না আমরা সহনশীলতার ‘উদারপন্থী’ মনোভাবের চাইতেও বেশি কিছুর চাহিদা অনুভব করব। পশ্চিমের চায়নাবিরোধী নেতিবাচকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা এখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোরজবস্তিগুলোকেও চিহ্নিত করতে হবে, এবং এগুলোকেও সামনে নিয়ে আসতে হবে। এবং এখানকার জাতীয়তাবাদকেও আমাদের বুঝতে হবে, যা আমাদের সমাজ এবং আজকের এই বিশ্বব্যাপ্ত গণস্বাস্থ্যের সংকটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।


দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রবন্ধের রূপান্তর
অনুবাদ: যাকওয়ান সাঈদ

এ সম্পর্কিত আরও খবর