করোনা: এই শহরের মানুষ জানে বেঁচে থাকার মানে

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 22:57:14

বাংলাদেশের সব শহরের পরিস্থিতিই করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত। মহামারির আঘাত আর বেঁচে থাকার লড়াই যুগপৎভাবে চলছে সর্বত্র। বিশ্বের মাথা উঁচু বড় বড় নিরাপদ শহরের চিত্রও অভিন্ন। খোদ নিউইয়র্কের মতো বিশ্বসেরা শহরও মৃত্যুর করাল গ্রাসে আক্রান্ত।

চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সর্বশেষ গতি, প্রকৃতি ও বিস্তার এখন কোন দিকে, তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। ভারতের আক্রান্ত ও মৃত্যের পরিসংখ্যান বিশ্ব তালিকার শীর্ষের দিকে চলেছে। পাকিস্তানেরও একই অবস্থা। বাংলাদেশের প্রতিদিনের পরিসংখ্যান ক্রমবর্ধমান। করোনা যে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভয়াল থাবা বিস্তার করছে, তা বলাই বাহুল্য।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, পেশা, অঞ্চল নির্বিশেষে ছড়াচ্ছে। শহর বা গ্রামকে বাছ-বিচার করছেনা। তবু স্বাভাবিকভাবেই শহরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বেশি হওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থা কাজ করে। কিন্তু সেই ভরসাও ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা, চট্টগ্রাম ইত্যাদি প্রধান শহরে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার যে বেহাল চিত্র দেখা যাচ্ছে, তা বেদনাদায়ক ও আতঙ্কজনক। হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটে আক্রান্ত মানুষ পথে মারা যাচ্ছে। একটি সিট পাওয়ার জন্য কাতরাচ্ছে। অক্সিজেনের অভাবে নাভিশ্বাস উঠছে শত সহস্র মানুষের।

মানুষ এক ঘোরতর শঙ্কা নিয়ে ঘরে ঘরে ঘরবন্দী। যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের সঙ্গে ভীতির স্রোত। কখন কে আক্রান্ত হবে, কেউ জানেনা! 

ডিসেম্বরে সুদূর চীনে শুরু হওয়া করোনা মহামারি সামলানোর কিছুটা সময় পাওয়া গিয়েছিল। সামাজিক দূরত্বের মাধ্যমে প্রতিরোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করার সুযোগ ছিল। সময় ও সুযোগকে কতটুকু কাজে লাগানো হয়েছে, সে প্রশ্ন সবার। সবার প্রত্যাশা ও দাবি, যা হয়েছে তো হয়েছেই, এখন থেকে কালবিলম্ব না করে যুদ্ধ পরিস্থিতির ক্ষিপ্রতায় করোনার বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া হোক। এজন্য ব্যক্তিগত, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যা করণীয়, তা কঠোরভাবে প্রতিপালন করা হোক।

কারণ করোনা এখন বিস্তারের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এবং তা এখন দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের দরজার সামনে। প্রতিদিন হিংস্র রূপ পরিগ্রহ করছে করোনা নামক প্রাণঘাতী বিপদ। আমাদের প্রতিটি শহরের মানুষ জানে বেঁচে থাকার মানে কতো কঠিন, নির্মম, অমানবিক ও ভীতিকর।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিদ্যমান পরিস্থিতির  চিত্র মিডিয়ার বরাতে সবার জানা। বসবাসকারী নাগরিকগণ আরো বেশি ও প্রত্যক্ষভাবে জানেন প্রতিক্ষণের ধাবমান বিপদের সর্বাত্মক বিভীষিকা সম্পর্কে। চারপাশে আক্রান্তের আহাজারি। শোকাবহ সংবাদ। দমবন্ধ, গুমোট আতঙ্কের দিনলিপি লেখা হচ্ছে প্রতিদিন।

এই ভয়াবহতার কাছে সংগ্রামী মানুষ আত্মসমর্পণ করতে চায় না। তারা নূন্যতম স্বাস্থ্যসেবা ও সুযোগ চায়। চায় লড়াইয়ের সম্মিলিত সুযোগ।

কিন্তু হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সেভাবে তৈরি নয়। সেবা ও সহযোগিতামূলক নয় মোটেই। সরকারি হাসপাতালের একাকী লড়াইয়ের সময় ঝাঁ-চকচকে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। করোনার চিকিৎসা সুবিধা সামান্য। অন্যান্য রোগিদের জন্যেও নেই চিকিৎসার সুযোগ।

চিকিৎসক ও চিকিৎসা সুযোগের স্বল্পতার সঙ্গে সঙ্গে বেড, অক্সিজেন, নিবিড় পরিচর্যার সুযোগ অতি সীমিত। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিরাজমান এই হাহাকারজনক পরিস্থিতি মানুষকে চরমভাবে উদ্বিগ্ন ও মানসিকভাবে দুর্বল করছে। করোনার আঘাত এহেন নাজুক অবস্থায় আরো তীব্র ও মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে।

পাশাপাশি করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব ও জরুরি স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে চরম শৈথিল্য ও উদাসীনতা। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে করোনার পরিস্থিতিতে  মানুষকে শৃঙ্খলার মধ্যে স্বাভাবিক কাজ করার দীক্ষা দেওয়ারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এসব কাজে আর একমুহূর্তের বিলম্ব ভয়ঙ্কর ক্ষতি ডেকে আনবে।

করোনাভাইরাস কালকেই চলে যাবে বা পরশু থেকে কমে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। পরিস্থিতি আরো শোচনীয়ও হতে পারে। করোনাকে আয়ত্তে নিয়ে আমাদের চলতে হবে, এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ  ও ব্যক্তিগত-সামাজিক বিধি পালনে একনিষ্ঠতা অপরিহার্য। সরকারি, বেসরকারি, সামাজিক, ব্যক্তিগত ইত্যাদি যাবতীয় শক্তি ও সম্পদ এসব ক্ষেত্রে নিয়োজিত করেই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে হবে।      

মানুষ বেঁচে থাকার নিত্যদিনের আতঙ্ককে দেখতে দেখতে যেন ম্রিয়মান হয়ে মুষড়ে না যায়। তাকে লড়াইয়ের মধ্যে রাখতে হবে উপযুক্ত উপকরণ, সাহস ও সহযোগিতা দিয়ে। তাহলেই বেঁচে থাকার মহত্তম সংগ্রামের দীপ্তিতে আতঙ্কের ঘোর কেটে গিয়ে উদ্ভাসিত হবে জীবন সৌন্দর্যময় আলোকোজ্জ্বল দিগন্ত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর