গত কয়েক বছর ধরেই চীনে মানুষের সংখ্যা দ্রুতগতিতে কমছে। চীন সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েও বিষয়টির মোকাবিলা করতে পারছে না। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, করোনা মহামারিসহ নানা কারণে চীনের তরুণ-তরুণীদের মাঝে বিয়ের আগ্রহ কমছে, বিপরীতে আগ্রহ বাড়ছে প্রেমে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায়, চীনে বিয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে তরুণ চীনারা প্রেমকে বেছে নিয়েছে। দেশটিতে ২০১৩ সালে বিয়ের সংখ্যা ছিল ১৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন যা ২০২২ সালে ৬ দশমিক ৮ মিলিয়নে নেমে আসে।
চীনে ভালোবাসা দিবসের মতো একটি উৎসব পালিত হয় যা কিক্সি উৎসব নামে পরিচিত। ঐতিহ্যগতভাবে চীনা দম্পতিদের বিয়ে করার জন্য একটি শুভ সময় বলে বিবেচিত হয়। চীনা চন্দ্র ক্যালেন্ডারে সপ্তম মাসের সপ্তম দিনে এই উৎসব উদযাপিত হয়। কিক্সি হল চীনা পুরাণে তারকা-ক্রসড প্রেমিক ঝিনু এবং নিউলং-এর মধ্যে রোমান্টিক প্রেমের উদযাপন। তাই এই দিনে চীনাদের মাঝে গণহারে বিয়ে হওয়ার প্রচলন আছে।
রোমান্টিক এই দিনটিতে বিয়ে প্রদর্শনের লক্ষ্যে, সিচুয়ান প্রদেশের মিয়ানয়াং শহরের একটি বিবাহ নিবন্ধন অফিস চলতি বছরের উৎসবটিকে বিবাহ নিবন্ধন অনুষ্ঠানগুলোর লাইভস্ট্রিম করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বছর দিনটি ছিল ২২ আগস্ট ৷ তাদের মতে এবারের অনুষ্ঠানে খুব কম দম্পতি বিয়ে করতে এসেছেন। এতে শেষ পর্যন্ত লাইভস্ট্রিম বিঘ্নিত হয়। একটি বড় আড়ম্বড়পূর্ণ বিবাহ নিবন্ধন হলের পরিবর্তে দর্শকদের সেদিন দেখানো হয়েছিলো মিয়ানয়াং শহরের মনোরম দৃশ্য।
আল জাজিরায় প্রকাশিত এক স্থিরচিত্রে দেখা যায়, ২০০৩ সালে সাংহাইতে এমন দিনের রোজ ওয়েডিং নামে পরিচিত এক অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ জন দম্পতির গণবিবাহের জন্য চীনা বধূরা প্রস্তুতি নিচ্ছে, গত ১০ বছরে যা লক্ষ্যণীয় হারে কমেছে ।
বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা বর্তমানে চীনের তরুণদের একটি ট্রেন্ডিং বিষয় হয়ে উঠেছে। এই পরিসংখ্যানও বলছে বিয়েতে চীনা তরুণদের আগ্রহ ক্রমহ্রাসমান এবং অবিবাহিত থাকার প্রবণতা বেশি বাড়ছে।
যার প্রভাব পড়েছে চীনের জনসংখ্যায়। বিশ্বের শীর্ষ জনসংখ্যার দেশটি বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানিয়েছে, ২০২২ সালের শেষে চীনের জনসংখ্যা ১৪১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮ লাখ ৫০ হাজার কম।
এনবিএসের তথ্যমতে, গত বছর চীনে ৯৫ লাখ ৬০ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ ১০ হাজার জনের।