বন্ধ্যাকরণ আইন অসাংবিধানিক: জাপান সুপ্রিম কোর্ট

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-07-03 21:02:21

উত্তরাধিকারসূত্রে প্রতিবন্ধী হওয়ায় সাড়ে ১৬ হাজার প্রতিবন্ধীকে জোর করে বন্ধ্যাকরণ করায় জাপান সরকার। যেই আইনের মাধ্যমে এমন অমানবিক কাজ করা হয়েছিল সেই আইনকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে জাপানের সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে এই ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাদের মামলাগুলো নিম্ন আদালতের রায় শেষে আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষমান ছিল।

বুধবার (৩ জুলাই) যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এ খবর প্রকাশ করে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, যুগান্তকারী এই রায়ের মধ্যে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায়বিচার পেল এবং তাদের এক দশক ধরে চলা আন্দলনের অবসান ঘটলো। এঘটনায় বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীরা বছরের পর বছর মামলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে ২০১৯ সালে করা একটি আইনের মাধ্যমে তারা ক্ষতিপূরণ পেতে যাচ্ছে। যদিও বিতর্কিত এই আইনটি ১৯৯৬ সালে বাতিল করা হয়।

এ সম্পর্কিত মোট পাঁচটি মামলা ছিল। যার মধ্য চারটিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় দেয় নিম্ন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চ আদালতে আপিল করে। পঞ্চম মামলাটির বাদী ছিল দুইজন নারী। নিম্ন আদালত তাদের মামলা খারিজ করে দেয়। এরপর তারাও রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাপান সরকার ২৫ হাজার লোককে চিহ্নিত করে, যারা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রতিবন্ধী। এই সকল লোকদের সন্তানরাও যেন প্রতিবন্ধী না হয় তাই অস্ত্রোপচার করে বন্ধ্যাকরণ করা হয় তাদের। জাপান সরকার স্বীকার করে ১৬ হাজার ৫০০ জন এই অস্ত্রোপচারে সম্মতি দেয়নি। অন্য ৮ হাজার ৫০০ জন এই অস্ত্রোপচারে সম্মত ছিল। তবে আইনজীবীরা বলছেন, তারাও চাপের মুখোমুখি বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচারে সম্মতি দিয়েছেল।

২০১৯ সালের করা আইনে বলা হয়, বন্ধ্যা করার সময় যাদের বয়স ২০ বছরের কম ছিল তারা ক্ষতিপূরণ আওতার বাহিরে থাকবে। তবে বুধবারের রায়ে বলা হয় বন্ধ্যাকৃতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ বছরের সীমাবদ্ধতার আইন প্রয়োগ করা যাবে না। এই আইনের অধীনে বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীরা প্রত্যেকে ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ইয়েন (বাংলাদেশি ২৩ লাখ ২১ হাজার ৯২৪ টাকা) পেতে পারেন।

বাদীদের আইনজীবী ইউটাকা ইয়োশিয়ামা বলেন, ‘সরকার এই ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের দাবিতে কর্ণপাত করছেন না। সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারকে অবশ্যই কঠোর উদ্দ্যােগ নিতে হবে। মামলা করাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পেয়ে মারা গেছেন।’

সেরিব্রাল পালসি (কম্পন) রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইউমি সুজুকি। তাকে ১২ বছর বয়সে জোর করে বন্ধ্যা করা হয়। ২০২১ সালে তিনি বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, 'যখন আমি জানতে পারলাম যে আমি কখনই মা হতে পারব না, তখন আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল।’

বুধবার ১১ বাদীর মধ্যে ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধ বিবিসিকে বলেন, আমি টাকা চাই না। আমার সাথে কি ঘটেছিল মানুষকে জানাতে চাই। আর কোনো প্রতিবন্ধীর সঙ্গে এমন আচরণ না হোক এটা নিশ্চিত করতে চাই। প্রতিবন্ধীরা বস্তু নয়, তারাও মানুষ।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর