করোনার পর নতুন আতঙ্ক এমপক্স ভাইরাস

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-08-17 18:02:51

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মোকাবিলার মাত্র চার বছর অতিবাহিত হয়েছে। চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের নাম ছিল এই করোনা । তবে এবার ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এমপক্স নামক আরেকটি ভয়ানক ভাইরাস। আফ্রিকা, ইউরোপের পর এশিয়ার পাকিস্তানেও এই ভাইরাসের রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) এই ছোঁয়াচে ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। এমপক্স নিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশে সংক্রমনের তথ্য প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এদিকে আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজি কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর বরাত দিয়ে বিবিসি উল্লেখ করেছে, ২০২৪ সালের শুরু হতে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে ৪৫০জনের বেশি মারা গেছেন।

এমপক্স কী

করোনা ভাইরাসের মতো এমপক্সও অনেকটা ছোঁয়াচে ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকার ফলেই এমপক্সের সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে এই ভাইরাস অন্যজনের দেহে চলে যায়। এর পাশাপাশি ফাটা চামড়া, নাক, মুখ দিয়ে শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা, পোশাক এবং তোয়ালে সম্পর্শের কারণে হাতের মাধ্যমেও নতুন কেউ সহজেই এমপক্সে আক্রান্ত হয়ে যায়। এছাড় যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ভাইরাসটি বিস্তার করতে পারে। বিবিসি বাংলার তথ্যমতে, এখনো পর্যন্ত এমপক্সের দুইটি ধরন চিহ্নিত হয়েছে। এই দুইটি ধরণকে বিশেষজ্ঞরা ক্লেড-১ ও ক্লেড-২ নামে নামকরণ করেছে। কিন্তু এখন ভাইরাসটির যে ধরণ সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমিত হচ্ছে সেটি ক্লেড-১বি হিসেবে উল্লেখ করলেও এর সম্পর্কে বিশদভাবে তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি বিশেষজ্ঞরা।

এমপক্সের লক্ষণ

করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম লক্ষণ ছিল জ্বর হওয়া। এমপক্সের ক্ষেত্রেও আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বরে ভুগবেন। এর পাশাপাশি হাত-পায়ের তালুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের ফুসকুড়ি উঠবে। এই ফুসকুড়িগুলো হয়তো চুলকাবে, নাহলে প্রচন্ড ব্যাথ্যাযুক্ত হবে।

যাদের ঝুঁকি বেশি

এমপক্স যেহেতু সংক্রামক ভাইরাস সেজন্য আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে যে বা যিনি থাকবেন তারই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য থেকে হাসপাতালে নিয়োজিত স্বাস্থকর্মীরাও ঝুঁকিতে থাকে। তবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যাপ্ত থাকলে অনেকেই ভাইরাসের ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে পারেন। এক্ষেত্রে বিপত্তি বাধে পরিবারের শিশুদের জন্য। কোনো পরিবারের সদস্য যদি এমপক্সের আক্রান্ত থাকে তাহলে সে পরিবারের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কেনান, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। তাই শিশুদের মাঝে দ্রুতই এমপক্স বিস্তার করতে পারে।

যেসকল দেশ এমপক্সে আক্রান্ত

এমপক্সের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত আলোচনায় সবার আগে আসবে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো। ২০২৩ সাল থেকেই দেশটি এই ভাইরাসে সংক্রমিত। এখনো পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২৭ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১হাজার ১০০ জনেরও বেশি মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সিংহভাগই হলো শিশু। তবে কঙ্গো ছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে ও আগস্টের শুরু দিকে সুইডেন একজন, বুরুন্ডিতে ৬১জন, রুয়ান্ডাতে ৪জন, উগান্ডায় ২জন, কেনিয়ায় ১জন ও পাকিস্তানের ৩জনের মাঝে এমপক্স শনাক্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এমপক্সের টীকা

মাঙ্কিপক্স যেহেতু আরো আগে থেকেই পৃথিবীতে বিরাজ করছে সেহেতু এর টীকাও আছে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য ভ্যাকসিনগুলো যেভাবে মানুষ গ্রহণ করতে পেরেছে এমপক্সের টীকাগুলো সেভাবে গ্রহণ করতে পারছেনা আক্রান্ত দেশগুলো। বিবিসি বাংলার তথ্যমতে, সবার কাছে এই টীকা পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নেই। তবে জরুরী প্রয়োজনে এমপক্স মোকাবিলার জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিয়েছে ডব্লিওএইচও।

উল্লেখ্য,এমপক্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে ২০২২ সালের জুলাই মাসে ডব্লিউএইচও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে টিকাদান ও সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ২০২৩ সালে মে মাসে জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছিল।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর