‘ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো কোনো দিক-নির্দেশনা অথবা বক্তব্য আমি কখনোই দেইনি। সুতরাং এই জাতীয় কোনো কাজের দায়ভার আমার ওপর চাপানোর কোনো সুযোগ নেই।’
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে এ দাবি করেন।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এই নেতা বলেন, ‘আমার বক্তব্যে কখনোই বঙ্গবন্ধু কিংবা কোনো মরহুম জাতীয় নেতার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত নেই। বিশেষত বরাবরই আমি বঙ্গবন্ধুর সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করে কথা বলার চেষ্টা করেছি এবং আলহামদুলিল্লাহ আমার বক্তব্য থেকে এর বিপরীত কোনো প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। বিষয়টি আমি সংবাদ সম্মেলন করেও বলেছি।’
ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো কোনো দিক-নির্দেশনা অথবা বক্তব্য আমি কখনোই দেইনি। সুতরাং এই জাতীয় কোনো কাজের দায়ভার আমার ওপর চাপানোর কোনো সুযোগ নেই।’
কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনা প্রসঙ্গে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনাটি উলামায়ে কেরামের গৃহীত শান্তিপ্রিয় আলোচনার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে। এই অপরিণামদর্শী তৎপরতার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কিংবা সাংগঠনিক কোনো সম্পর্ক নেই।’
ভাস্কর্য নিয়ে আন্দোলন কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাস্কর্য ইস্যুটি আদৌ আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নয়, বরং এটি সারাদেশের সকল আলেমদের সম্মিলিত চিন্তা এবং সিদ্ধান্তের বিষয়। ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ আলেমগণ ভাস্কর্য বিষয়ে সম্মিলিত ফতোয়া প্রদান করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর বেফাক সভাপতি আল্লামা মাহমূদুল হাসান দেশের শীর্ষ আলেমদের মতামত সম্বলিত পত্র প্রেরণ করেছেন। তিনি সম্মিলিত প্রস্তাবনা তৈরি করে শীর্ষ আলেম প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি করা এবং সেখানে শুধু আমাকে মুখ্য প্রতিপক্ষ সাব্যস্ত করা হাস্যকর।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৩ ও ২৭ নভেম্বর, ঢাকার ধোলাইপাড়, বিএমএ মিলনায়তন ও হাটহাজারী মাদরাসায় আসামিরা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন। এতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
আরও পড়ুন:
‘ভাস্কর্য বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়ত সম্মত নয়’
আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়: মাওলানা মামুনুল হক
এর আগে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১২০বি, ১৫৩ ও ১২৪ক ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১৩ নভেম্বর বিএমএ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর শাখার সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গড়তে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে লাশের পর লাশ পড়বে। আবার শাপলা চত্বর হবে।’ সমাবেশে যুব মজলিসের কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।
বাদী অভিযোগ করেন, মাওলানা মামুনুল হকের বক্তব্যের পর একটি শ্রেণি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে একের পর এক বক্তব্য দিচ্ছে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। মাওলানা মামুনুল হকের বক্তব্যের পর রোববার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে। দেশে রায়টের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।