আল্লাহর ঘর কাবা শরীফের আদবসমূহ

, ইসলাম

মুফতি মো. আবদুল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 21:17:56

আল্লাহতায়ালার ঘর ‘কাবা শরীফ’ যেহেতু জগতের সর্বপ্রথম, মধ্যবর্তী ও কেন্দ্রস্থল। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার নুর ও তাজাল্লির উৎসস্থল এবং ইসলামের পরিচয়জ্ঞাপক অন্যতম নিদর্শন। তাই এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন মানে বাস্তবে আল্লাহতায়ালার প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর।

বায়তুল্লাহ শরীফে পাপাচারণ ও বেআদবি করা অন্যান্য স্থানের তুলনায় মারাত্মক ও জঘন্য অপরাধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যে ইচ্ছাপূর্বক তাতে পাপ-সীমা লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে, তাকে আমি মর্মন্তুদ শাস্তি আস্বাদন করাবো।’ –সূরা আল হজ: ২৫

তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনা মতে, এ আয়াতে বর্ণিত ‘ইলহাদ’ মানে কবিরা গুনাহ। হজরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) যখন হজে যেতেন তখন দু’টি তাঁবু বানাতেন। একটি হারামের ভেতরে, অন্যটি হারামের বাইরে। কখনও যখন নিজ পরিবার-পরিজন বা খাদেমদের এবং নিজের সঙ্গে সম্পর্কিত কাউকে কোনো বিষয়ে কোনোরূপ বকাঝকা করতে ইচ্ছা করতেন তখন হারামের বাইরের তাঁবুতে চলে গিয়ে করতেন। লোকজন তাকে দু’টি তাঁবু স্থাপনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে, তিনি জবাবে বললেন, মানুষ ভর্ৎসনা ও অসন্তোষের সময়- আল্লাহর শপথ! কখনো নয়, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! এমন সব কড়া কথা বলে থাকে। আর এগুলোও তো হারাম সীমার মধ্যে ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত।

হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.) বলেন, ‘হারাম এরিয়ার বাইরে অন্যান্য স্থানে, পাপের ইচ্ছা করলেই পাপ লেখা হয় না- যতক্ষণ না পাপ সংঘটন করে। কিন্তু হারাম এরিয়ায় কোনো পাপের পাকা নিয়ত করলেই পাপ লেখা হয়ে যায়।’

বায়তুল্লাহ শরীফে বেআদবির বিভিন্ন পন্থা ও প্রক্রিয়া। যেগুলো থেকে হজযাত্রীদের বেঁচে থাকা আবশ্যক।

হারাম সীমার মধ্যে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া বা গাল-মন্দ করা।

হারামের সীমার ভেতরে ব্যভিচার করা বা খারাপ নিয়তে গায়রে মাহরামদের প্রতি তাকানো।

রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেয়ে হারামের সীমানায় প্রবেশ করা।

তামাক বা সিগারেট ইত্যাদি পান করার পর ভালোভাবে কুলি না করে হারামের সীমায় প্রবেশ করা।

ঘামের দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় পরিধান করে হারাম এরিয়ায় প্রবেশ করা।

কোনো ভাগ্যবান ব্যক্তির যদি কাবা শরীফের ভেতরে প্রবেশ করার সৌভাগ্য হয়, তাহলে তার জন্য কাবার ছাদের দিকে তাকানো বে-আদবি।

কোনো গ্রহণযোগ্য প্রয়োজন ছাড়া বায়তুল্লাহ শরীফের ছাদে আরোহণ করা।

হারাম শরীফের উদ্দেশ্যে যাওয়া লোকজনকে কষ্ট দেওয়া।

জাগতিক কোনো উদ্দেশ্যে বা স্বার্থকে কেন্দ্র করে মক্কা শরীফ যাওয়া অথচ সম্মানিত কাবার জিয়ারত না করা।

প্রস্রাব-পায়খানাকালীন বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করা।

কোনো নারী যদি ছোট বাচ্চাকে পেশাব করানোর সময় কিবলামুখী করায়, তা হলে তার এ বেআদবির পাপ নিজের ওপর বর্তাবে।

বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে মুখ করে থু থু ফেলা।

বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে পা মেলে বসা বা শোয়া।

তাওয়াফরত অবস্থায় অকারণে বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে তাকানো।

অজুবিহীন অবস্থায় বায়তুল্লাহ শরীফের ভেতরে প্রবেশ করা।

মসজিদে হারামে প্রবেশ করে জাগতিক বাক্যালাপে মশগুল হওয়া।

মসজিদে হারামে প্রবেশ করে শোরগোল বা চিৎকার করা।

মসজিদে হারামে বসে বায়ূ ত্যাগ করা।

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

** শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত

** নারীদের ওপর কখন হজ ফরজ?

** যেসব পদ্ধতিতে হজ আদায় করা যায়

** বদলি হজের লোক বাছাইয়ে সর্তক থাকুন

** পবিত্র হজ ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে

** জেনে নিন হজে উচ্চারিত কিছু আরবি পরিভাষার অর্থ

** ৫১ সদস্যের হজ প্রশাসনিক দল গঠন

এ সম্পর্কিত আরও খবর