বাংলাদেশি হজযাত্রীদের প্লেন ভাড়া তুলনামূলকভাবে অন্যদেশ থেকে অনেক বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারত হজযাত্রী পরিবহনে আগ্রহী এয়ারলাইনসসমূহ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন প্লেন ভাড়া নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে এমন পদ্ধতি অনুসরণের দাবি উঠেছে। দরপত্রের মাধ্যমে প্লেন ভাড়া যেমন যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব, তেমনই সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব বলে দাবি করেছে হাব (হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)। ২০২০ সালে হজযাত্রীদের প্লেন ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রস্তাবিত বর্ধিত ভাড়া অযৌক্তিক ও অনৈতিক বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) হাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। এ সময় সংগঠনের মহাসচিবসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হাব সভাপতি বলেন, ‘২০২০ সালে কোনোভাবেই প্লেন ভাড়া বাড়ানো যৌক্তিকতা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজ ব্যবস্থাপনার প্রতিটি বিষয় নিজে প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধান করেন। এ কারণেই বর্তমান সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনাকে কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলার জালে জড়ানো সমীচীন হবে না। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার গোচরে আনতেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছরের বিমান ভাড়া ছিলো এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। এ বছর নতুন কোনো খাতে ব্যয় বাড়েনি। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সরকার নতুন করে কোনো ধরনের ট্যাক্স বাড়ায়নি। জ্বালানি তেলের মূল্যও বাড়েনি। উল্টো জ্বালানি তেলের দাম লিটার প্রতি ১২ সেন্ট কমে ৫৯ সেন্ট হয়েছে। সরকার হজ প্যাকেজের প্লেন ভাড়া নির্ধারণ করে ডেডিকেটেড ফ্লাইটের জন্য। কিন্তু এয়ারলাইনসগুলো একই ভাড়ায় রেগুলার ফ্লাইটেও হজযাত্রী নেয়। বছরের অন্য সময়ে সৌদি আরবের ভাড়া ৪৪ হাজার টাকা থেকে ৫৭ হাজার টাকার মধ্যে থাকে। আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে ৮৮ হাজার থেকে এক লাখ ১৪ হাজার টাকা। হজের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি প্লেন ভাড়া হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্লেন এক পথ খালি থাকার কারণে ক্যাটারিং, ব্যাগেজ হ্যান্ডেলিং, ট্যাক্স ও ইনফ্লাইট সার্ভিস ইত্যাদি খাতে কোনো ব্যয় হয় না। অধিকন্তু ফ্লাইট খালি থাকার কারণে জ্বালানি তেল খরচ কম হয়। আর উমরার ফ্লাইটসহ অন্যান্য ফ্লাইটে যাত্রী কখনও শতভাগ হয় না ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকে। কিন্তু হজ ফ্লাইটে শতভাগ যাত্রীর নিশ্চয়তা থাকে। হজ টিকিটের জন্য মার্কেটিং খাতে কোনো খরচ নেই, বরং অগ্রীম ক্যাশ টাকা পাওয়া যায়। তারপরও প্লেন টিকিট বাড়ানো দুঃখজনক।
হাব দাবি করেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি সবারই মমত্ববোধ ও দায়িত্ব রয়েছে। সেই সঙ্গে আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীদের প্রতি যাতে অযৌক্তিক বাড়তি প্লেন ভাড়ার চাপ না পড়ে সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখা নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। হজ একটি স্পর্শকাতর বহু কাঙ্খিত ধর্মীয় অনুশাসন ও ইবাদত। হজ সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটি অদম্য স্পৃহা কাজ করে। এ মুহূর্তে হজযাত্রীদের প্লেন ভাড়া অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হলে হজ ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
২০১৯ সালের প্লেন ভাড়া ছিলো এক লাখ ২৮ হাজার টাকা। এবার বাড়িয়ে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি সকালে সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছে হাব।
আরও পড়ুন: হজে প্লেন টিকিটের মূল্য বাড়াতে সক্রিয় সিন্ডিকেট
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমন সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হচ্ছে সবাইকে। বিমান যে দর নির্ধারণ করবে একই ধরে অর্ধেক যাত্রীর পকেট কাটবে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সও। এখানে বিমান যদি মুনাফালোভি মানসিকতা এড়তে পারে তাহলে রাষ্ট্রীয়ভাবেই আমরা লাভবান হতে পারি। কিন্তু বিমান এই ইকোনমিটা বুঝতে চাইছে না। টিকেটের দর ১২ হাজার টাকা বাড়লে সাউদিয়ার পকেটে বাড়তি যাবে ৮২ কোটি ৩১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছর হজযাত্রীর কোটা ১০ হাজার বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন নির্ধারণ করা হয়েছে।