হজে প্লেন টিকিটের মূল্য বাড়াতে সক্রিয় সিন্ডিকেট
হজ মৌসুম ঘিরে প্রতি বছরই প্লেন টিকেট নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে একটি সিন্ডিকেট। নানা ছুঁতোয় হজের উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়ানো, লিজ বাণিজ্য ও হজ টিকিট নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ রয়েছে এই চক্রটির বিরুদ্ধে।
চক্রটি কারণ ছাড়াই হজ টিকিটের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিদায়ী বছরের তুলনায় জনপ্রতি প্রায় ২৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। হজ টিকিটের ভাড়া জনপ্রতি প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব উত্থাপন করতে যাচ্ছে।
এর আগে ২০১৯ সালেও হজ টিকিটের ভাড়া ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ ও হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের আপত্তির মুখে হজ টিকেট দশ হাজার টাকা কমিয়ে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এমতাবস্থায় একলাফে ২৭ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব অনেকটাই অযৌক্তিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ভাড়া নির্ধারণসহ ২০২০ সালের হজযাত্রী পরিবহন কার্যক্রম বিষয়ক পরিকল্পনা, হজ টাস্কফোর্স কমিটি ও হজ মনিটরিং কমিটি গঠন বিষয়ে বিশেষ সভা ডাকা হয়েছে। সভাপতিত্ব করবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। ওই সভায় ১৪৪১ হিজরির হজ টিকিটের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব তোলা হতে পারে। একাধিক হজ এজেন্সির মালিক, হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর দায়িত্বশীল ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (হাব) সভাপতি এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব হজ টিকিটের মূল্য যৌক্তিক কারণে জনপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালাবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স উমরা টিকিটের মুল্য (সৌদি আসা-যাওয়া) ট্যাক্সসহ ৫২ হাজার ২০০ টাকা আর সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের উমরা টিকিটের দাম ৪৭ হাজার ১৫২ টাকা। হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে যেহেতু উড়োজাহাজগুলোকে এক পথে খালি আসতে হয় সেজন্য হজযাত্রীদেব ভাড়া সর্বোচ্চ দ্বিগুণ অর্থাৎ ১ লাখ ২০ টাকা হতে পারে। এর বেশি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক হজ এজেন্সির মালিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের হজ টিকিটের চেয়ে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া এমনিতেই দ্বিগুণ। সেখানে আরও ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব হজযাত্রায় প্রভাব ফেলবে। হজযাত্রীদের কষ্ট হবে।
হাব’র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান মুন্সী বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজযাত্রীদের উড়োজাহাজ ভাড়া এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে হজ টিকিটের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ২০১৯ সনে হজ টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হাব সভাপতির প্রচেষ্টায় দশ হাজার টাকা কমিয়ে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, সেখানে আবার ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব কেন?
তিনি বলেন, এমনিতেই এবার হজযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উড়োজাহাজ ভাড়ার কারণেই হজযাত্রীদের প্যাকেজ মূল্য বেড়ে যায়। এমনিতেই সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন চার্জ বাবদ প্রায় ১১শ’ রিয়াল বাড়িয়েছে অন্যবারের তুলনায়। উড়োজাহাজ ভাড়া বাড়ানো হলে হজ প্যাকেজ বেড়ে যাবে ৫০ হাজার টাকা করে।
হাবের একটি সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি না পেলেও বিমান অযৌক্তিভাবে প্রতি বছর হজ টিকিটের মূল্য বাড়াচ্ছে। ২০০১ সালে ৪৩ হাজার ৩৫৮ জন হজযাত্রী হজে যান। তখন হজ টিকিটের নীট ভাড়া ছিল জনপ্রতি ৭৫০ মার্কিন ডলার। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসের হজে ৫২ হাজার ৪৯৭ জন হজযাত্রীর হজ টিকিটের নীট ভাড়া ছিল ১ হাজার ৫০ মার্কিন ডলার। একই বছর ডিসেম্বর মাসের হজের টিকিটের নীট ভাড়া ছিল ১ হাজার ২’শ মার্কিন ডলার। ২০১১ সালে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৭২ জন হজযাত্রীর নীট ভাড়া ছিল ১ হাজার ৪৬৫ মার্কিন ডলার। ২০১২ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৬০ জন হজযাত্রীর হজ টিকিটের নীট ভাড়া ছিল ১ হাজার ৪৭৫ মার্কিন ডলার। ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রীর হজ টিকিটের ভাড়া ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৭২৩ টাকা। ২০১৮ সালে ১ লাখ ২৬ হাজার ১৮৩ জন হজযাত্রীর হজ টিকিটের ভাড়া ছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৯১ টাকা। সর্বশেষ বছরে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন হজযাত্রীর জনপ্রতি টিকিটের ভাড়া ছিল ১লাখ ২৮ হাজার টাকা।
২০১৯ সালে সরকার হজ প্যাকেজ-১ চার লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্যাকেজ-২ তিন লাখ ৪৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল। যা যথাক্রমে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০ হাজার ৫৭১ টাকা এবং ১২ হাজার টাকা বেশি ছিল।
আসন্ন হজ মৌসুমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক হজচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পাদিত হজ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স অর্ধেক অর্ধেক বহন করবে। এখনও হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি। চলছে হজ প্যাকেজ নির্ধারণের আনুষাঙ্গিক কাজ। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন হজপালনে সৌদি আরব যেতে পারবেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২০ সালে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে ১ আগস্ট। হজ ক্যালেন্ডার মতে বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট ২৫ জুন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।