গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

, আইন-আদালত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-08-14 15:59:41

রাজধানীর উত্তরা থেকে নয় বছর আগে ২০১৫ সালে গুম করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।

বুধবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই আবেদন করেছেন ভূক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে আদেশ পরে দিবেন বলে জানিয়েছেন।

বাদী ও ভিকটিম আইনজীবী মো. সোহেল রানা মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অপর আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব বাংলাদেশ পুলিশ এ কে এম শহীদুল হক ও র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। এছাড়া র‌্যাবের আরও ২০-২৫ জন অজ্ঞাত সদস্যকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছে।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ঢাকার উত্তরার ৫নং সেক্টেরের ১নং রোডে স্মাইল গ্যাল্যারির সামনে তার বন্ধু আশরাফুল ইসলাম রিংকুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় স্মার্ট ডিভাইস বহনকারী এক ব্যক্তি বাদীকে সালাম দিয়ে বাদীর নাম ‘অ্যাডভোকেট মো. সোহেল রানা’ কিনা জিজ্ঞাসা করে। বাদী হ্যাঁ বললে একটি ছাই কালারের হাইএস গাড়ি বাদীর সম্মুখে এসে দাঁড়ায় এবং তার বন্ধুসহ তাকে তুলে নিয়ে যায়। 

ভিকটিম গাড়িতে ওঠার সময় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) স্টিকার যুক্ত পোশাকে আরও দুইজনকে গাড়ির ভেতরে দেখেন। এছাড়া আরও ১০-১১ জন বন্ধুকধারী ব্যক্তি গাড়িতে আগে থেকেই ছিল যাদেরকে প্রাথমিক দেখায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বাদী অনুমান করেন।

গাড়িতে তুলেই তাদের দু’জনের চোখ শক্ত করে বেঁধে দেওয়া হয় ও হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হয়। তারা ভিকটিমের প্যান্ট খুলে তার পুরুষাঙ্গে ক্লিপ জাতীয় কিছু লাগিয়ে কারেন্টের শক দিতে থাকে এবং বাদীর আত্মচিৎকার যেন বাইরে থেকে শোনা না যায় সে জন্য গাড়িতে উচ্চ ভলিয়মে ডিজে টাইপের গান চালিয়ে রাখে। একপর্যায়ে কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে গাড়ির গতি কমিয়ে বাদীর বন্ধুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং বলেপেছনে তাকাইলে বাদীর বন্ধুকে গুলি করে মেরে ফেলবে।

পরে একটি বাড়ির আন্ডার গ্রাউন্ডে তাকে নেওয়া হয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সেখানে বাদীর পুরুষাঙ্গে কানের লতিতে লাগানো ক্লিপের মাধ্যমে আরও উচ্চমাত্রার বৈদ্যুতিক শক দেয়। এরপর ভিকটিমের দুই হাত বেঁধে ওপরের দিকে ঝুলিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত লাঠি অথবা শক্ত কোন বস্তু বেধড়ক পেটায়। এ সময় ভিকটিম জ্ঞান হারায়। ভিকটিমের জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারে তখন তার চোখ বাঁধা এবং পিছমোরা করে হাতে হাতকরা লাগানো অবস্থায় মেঝের ওপর পড়ে আছে। তারা তাকে বার বার নির্যাতন করে ও তার নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে আগুন দেয়া হয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করে।

বাদী তার মামলার অভিযোগে বলেন, তার ওপর এমন অমানবিক অত্যাচারের কারণে তার কোমরের নিচের অংশের কোনো স্নায়ু কাজ করছিল না, একপ্রকার অবশ হয়ে গিয়েছিল। তাকে ওইকক্ষে হাতকড়া ও চোখ বাধা অবস্থায় দুই দিন ফেলে রাখা হয়। এ সময় পানি ছাড়া তাকে কোনো খাবার দেওয়া হতো না। তৃতীয় দিন হাতকরা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় অন্য একটি কক্ষে নিয়ে আসলে ভিকটিম চোখ বাঁধা কাপড়ের নিচ দিয়ে দেখতে পান কক্ষটিতে ছোট ছোট অনেকগুলো খুপরি করা ও ওই কক্ষে আরও অনেক বন্দীর উপস্থিতি আছে।

২০১৫ সালের ৬ জুন ভিকটিমসহ আরও কয়েকজন বন্দীকে গাড়িতে করে আনুমানিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার দূরত্বে নিয়ে আসা হয় এবং আগের মতো ভিকটিমের দুই হাত বাঁধা পিছমোরা করে হাতকড়া লাগানো থাকতো।

বাদী আরও উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ১৩ আগস্ট আনুমানিক ভোর ৩/৪ টার দিকে তাকে একটা গাড়িতে তোলা হয় এবং আনুমানিক আধা কি.মি. দূরত্বে নিয়ে এসে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে মাথায়, পিঠে এবং কাঁধে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে বলে বাদী আর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হবে কিনা? ঢাকায় ফেরত যাবে কিনা? আইন পেশায় যুক্ত হবে কিনা? উত্তরে বাদী না বললে তারা বলে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিস শুনলে আবার তুলে নিয়ে আসবে এবং তাকে ও তার পরিবারকে চিরতরে শেষ করে ফেলবে। বাদী যেন বাদীর গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।

দীর্ঘ ৬ মাস ৩ দিন চোখ বাঁধা থাকায় বাদীর চোখ খুলে তাকাতে অসুবিধা হচ্ছিল। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এলাকার স্থানীয় একজন লোক বাদীকে দেখতে পেয়ে সে কোথায় যাবে, জিজ্ঞাসা করে। উত্তরে বাদী ঢাকা যাবে এবং ঢাকা যাওয়ার রাস্তা কোন দিকে জিজ্ঞেস করলে বলে এইটা ভারতে যাওয়ার রাস্তা, বাদীকে ওই রাস্তার বিপরীতে ভ্যান গাড়ি যোগে রাজশাহীর গোদাগাড়ির একটি বাজারে যেতে বলে।

বাদী ঢাকার গাড়িতে করে তার শ্বশুরের বারিধারার বাসায় আসে এবং জানতে পারে বাদীর শোকে বাদীর পিতা ২০১৫ সালের ২৮ মে মারা যান।

বাদীর শ্বশুর আনোয়ারুল ইসলাম ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আদাবর থানায় জি.ডি, বাদীর স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন ১৭ মার্চ তারিখে "আইনজীবী সোহেল রানা ৩৬ দিন ধরে নিখোঁজ" শিরোনামে জাতীয় দৈনিক "প্রথম আলো" পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েও কোনো প্রতিকার পান নাই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর