এদিকে ক্ষিধে ভাব নিয়েও বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়। তরকারি-ডাল-ভাত কিংবা বার্গার, পিৎজা যাই খাওয় হোক না কেন, কিছুক্ষণ পর থেকেই চোখ আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে আসবে ঘুমের প্রাবল্যে। সে এক ভীষণ বিশ্রী অবস্থা!
দুপুরে খাবার খাওয়ার পর চোখে ঘুম এসে ভর করলে কোনভাবেই সেই ঘুম তাড়ানো সম্ভব হয় না। বাসাতে থাকলে না হয় ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু অফিসে তো তার অবকাশ নেই। হাজার কাজের ব্যস্ততা মাথায় চেপে থাকা পরেও, ঘুম ভাবের জন্য কাজে মনোযোগ দেওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
বিব্রতকর এই সমস্যাটি দেখা দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেছেন ডায়েটেশিয়ান ও স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট রবি ক্লার্ক। তিনি জানান, দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম ভাব দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। এমনটা হওয়ার মূল কারণ হলো খাদ্য পরিপাক হওয়া।
তিনি বলেন, ‘শরীরের কার্যকারিতা ও বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শক্তি প্রয়োজন। এই শক্তি আমরা পরিপাককৃত খাবার থেকেই পাই। খাবার পরিপাক হয়ে গ্লুকোজ ও অন্যান্য ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টে পরিণত হয়। মূলত পরিপাক ক্রিয়া আমাদের শরীরের এই ধরণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে’।
দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম ভাব দেখা দেওয়ার অন্য আরেকটি কারণ হলো, মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ। মিষ্টি খাবার গ্রহণের পর রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফেনকে সরাসরি মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয়। মস্তিষ্কে পৌঁছানোর পর সেরোটোনিন ও মেলাটোনিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। এই দুইটি হরমোন ‘আনন্দ ভাব’ ও ‘ঘুম ভাব’ তৈরির জন্য দায়ী।
আরো একটি কারণ হলো, অনেক সময় আমরা দুপুরে পরিমাণ ও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলি। যা শরীরে অস্বস্তি ও ক্লান্তিভাব এনে দেয়। যে কারণে বলা হয়ে থাকে, পেট কিছুটা খালি রেখে খাবার খাওয়ার জন্য।
বিরক্তিকর এই সমস্যাটি এড়াতে কিছু টিপস জানিয়েছেন রবি ক্লার্ক। চটজলদি দেখে নিন টিপসগুলো।
১. সকালের নাস্তা বাদ দেওয়া যাবে না। সকালে পুষ্টিকর খাবার শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে। পাশাপাশি সকালে খালিপেটে থাকার ফলে দুপুরে বেশি খাওয়া হয়। ফলে দেখা দেয় ঘুম ভাব।
২. সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। একবারে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। রবি পরামর্শ দেন, সবুজ সবজি ও রঙিন ফল বেশি খাওয়ার জন্য।
৩. যদি সম্ভব হয় তবে ঘরে বা অফিসের কক্ষে বসে খাবার খাওয়ার পরিবর্তে খোলা কোন স্থানে বসে খাবার খেতে হবে। এতে মন চনমনে থাকবে। যা ঘুম ভাব তৈরি হতে বাধা দেবে। ঘরের বাইরে খাবার খাওয়া সম্ভব না হলেও, খাবার পর বাইরে থেকে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আসতে হবে। এতে ঘুম ভাব দেখা দিলেও সেটা কেটে যাবে।