মানব শরীরে খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো প্রদাহ। তবে এই প্রদাহ গুরুতর হয়ে উঠলে শারীরিক সমস্যা ও ব্যথা দেখা দেয়। যা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ ধরনের প্রদাহ শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বারবার প্রদাহ দেখা দেয়া স্বাভাবিক কোনো লক্ষণ নয়। এতে হৃদরোগ, ডিএনএ ড্যামেজ, ডায়াবেটিস, আরথাইটিস এমনকি ক্যান্সারের মতো রোগের সম্ভবনাও দেখা দেয়।
জীবনযাত্রার ধরণ ও খাদ্যাভাস পাল্টে প্রদাহ ও শরীরের ব্যথা দূর করা সম্ভব। প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমানো সম্ভব।
শরীরে প্রদাহজনিত ব্যথা উপশমে যা খাবেন—
আদা-পুদিনা পাতার শরবত
আদায় জিনজেরল থাকে, যা প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো উপাদান। আর পুদিনা পাতা হজমজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। আদা ও পুদিনা পাতা যেকোনো ধরনের প্রদাহের ক্ষেত্রে প্রশান্তিদায়ক। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আদা খেলে প্রোস্ট্যাগ্ল্যান্ডিন ও লিউকোট্রিনি উৎপন্ন হয়। যা শারীরিক প্রদাহ প্রতিরোধ করে।
লেবু ও হলুদের শরবত
হলুদে আছে কারকিউমেন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেট। যা হাড়ের জোড়ার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। অপরদিকে লেবুতে আছে ভিটামিন-সি ও সাইট্রিক অ্যাসিড। যার উপকারিতা অতুলনীয়। চমৎকার এ দুটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে শরবত তৈরি করলে সেটা শরীরের প্রদাহ কমাতে, শরীর ডিটক্সিফাই করতে ও পানিশূন্যতার সমস্যা দূর করতে কাজ করে।
পানীয়টি তৈরির জন্য একটি পাত্রে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ আদা কুঁচি ও এক চা চামচ হলুদ গুঁড়া নিয়ে জ্বাল করতে হবে, তবে ফোটানো যাবে না। এরপর মিশ্রণটি ছেঁকে এতে দুই চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। প্রদাহ ও ব্যথা বেশি হলে প্রতিদিন তিনবার পানীয়টি পান করতে হবে।
বিটের স্মুদি
বিটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, পটাসিয়াম, আয়রন, ম্যাংগানিজ, ভিটামিন-বি৯, আঁশ ও প্রভৃতি। বিট খেলে প্রদাহ কমার পাশাপাশি অক্সিজেন ইনটেকের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও উচ্চরক্ত চাপের সমস্যা কমে।
বিটের স্মুদি তৈরির জন্য মাঝারি আকারের একটি বিট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। সাথে ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া, আধা চা চামচ আদা কুঁচি, অর্ধেকটি কমলালেবুর রস ও আধা কাপ পরিমাণ নারিকেলের পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিতে হবে।
পানীয়টি তৈরির জন্য এক মুঠো পুদিনা পাতা, ছোট একটি আদা, একটি লেবুর রস, একটি ছোট শসা ও একটি সবুজ আপেল একসাথে ব্লেন্ড করতে হবে। টানা এক মাস প্রতিদিন এই পানীয়টি পানে গুরুত্বর সমস্যা কমে যাবে অনেকটা।
গাজরের স্মুদি
চোখ ও ত্বকের জন্য উপকারি ভিটামিন-এ তে পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান গাজর। তাছাড়া চোখ ও ত্বকের পাশাপাশি প্রদাহের সমস্যা কমাতেও কার্যকরি গাজর।
গাজরের স্মুদি তৈরির জন্য দুটি ছোট গাজর টুকরো, একটি আপেল টুকরো, অর্ধেক লেবুর রস, এক চা চামচ আদা কুঁচি ও এক চা চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগার একসাথে ব্লেন্ড করতে হবে। স্বাদের উপর ভিত্তি করে পানি কিংবা দুধ যোগ করা যেতে পারে।
আনারসের শরবত
পিৎজার সাথে আনারস মানানসই হোক কিংবা না হোক, প্রদাহ ও ব্যথা কমানোর জন্য আনারস অনবদ্য। জিভে জল আনা স্বাদু এই ফলে আছে প্রদাহ-বিরোধী ও পরিপাকের সমস্যা দূরীকরণ এনজাইম ব্রোমেলাইন। অপারেশন পরবর্তী সময়ে ব্রোমেলাইন খুবই জরুরি শরীরের জন্য।
আনারসের শরবত কিংবা স্মুদির জন্য খুব বেশি কিছু যোগ করার প্রয়োজন নেই। অর্ধেক আনারস টুকরো করে কাটা, কিছু পরিমাণ ধনিয়ার পাতা, লবণ, বিটলবণ একসাথে ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু আনারসের পানীয়।