সেই আদিকাল থেকেই খাবারের স্বাদ বাড়াতে নানা ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে হলুদ, মরিচ, রসুন, ধনে ও আদা। এসব মসলা নিয়ে সাম্প্রতিককালে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব মসলা স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী। একারণে এগুলো এখন আর শুধু রান্নাঘরের মধ্যেই সীমিত নেই, পৌঁছে গেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও। মসলার মধ্যে যেসব রাসায়নিক উপাদান আছে সেগুলো নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে সাহায্য করে থাকে। মসলা থেকে এসব উপাদান সংগ্রহ করে সেগুলো এখন বিকল্প ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীনকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্ডিয়ান অনেক মসলা অনেক বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এসব মসলাতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী যেসব উপাদান আছে সম্প্রতি সেগুলো মসলা থেকে আলাদা করে নিয়ে বিকল্প ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, এবং উন্নত দেশে ওভার দ্য কাউন্টার এগুলো কিনতে পাওয়া যায়।
পুষ্টি বিজ্ঞানী নাজমা শাহীন বলেছেন, আমাদের অনেকেরই ধারণা স্পাইসি খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু আমাদের প্রতিদিনের খাবারে যেসব মসলা ব্যবহার করা হয়, সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার করতে পারে। অনেক মসলা আমাদের হজমে সহায়তা করে।
প্রতিদিনের রান্নায় আমরা যেসব মসলা ব্যবহার করি তার মধ্যে রয়েছে লাল মরিচ, হলুদ, রসুন, ধনে এবং আদা।
লাল মরিচ: এর মধ্যে আছে ক্যাপসাইসিন নামের একটি বায়োঅ্যাকটিভ কম্পাউন্ড। এটি লিভারে ও রক্তে কোলেস্টোরেলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এর প্রধান কাজ দেহের চর্বি বার্ন করা। মানুষের দীর্ঘায়ুর পেছনে এই ক্যাপসাইসিনের ভূমিকা রয়েছে। শরীরে চর্বির অংশ কমায় লাল মরিচ। এছাড়াও রক্ত এবং রক্তনালীতে চর্বিজনিত প্লাক তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা দেয় ক্যাপসাইসিন। এছাড়াও এটি লিভারকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে সেখানে কোলেস্টেরল সিনথেসিস কম হয়।
হলুদ: হলুদের চিকিৎসাগুণ অভাবনীয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় হলুদকে বলা হয় হার্টের টনিক। এটি রক্তকে পাতলা রাখে। লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। হার্টকেও শক্তিশালী করে। রক্তনালীতে প্লাক জমে যাতে সেখানে ব্লক তৈরি না হয় তাতেও ভূমিকা রাখে এই মসলাটি। শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বড়ায় এই হলুদ। হলুদের মধ্যে যে কারকুমিন উপাদান আছে তার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভূমিকা রয়েছে।
রসুন: হৃদরোগের জন্য রসুন অত্যন্ত উপকারী। হার্টের অসুখ প্রতিরোধে অনেকেই কাঁচা রসুন খেয়ে থাকেন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও রসুন ব্যবহার করা হয়। এটি কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। রক্ত জমাট-বাঁধা প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে আছে একটি অ্যামাইনো এসিড যা আমাদের পাকস্থলীকে ব্যাকটেরিয়ারজনিত ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। রসুনের অ্যামাইনো এসিড ক্যান্সার হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
ধনে: কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এই মসলা। এর মধ্যেও রয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী গুণ। এটি রক্তে সুগার কমাতে সাহায্য করে। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা কমাতেও এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এলার্জি ও হজমের ক্ষেত্রেও এর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
আদা: এতে যেসব উপাদান আছে সেগুলোর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভূমিকা। কোলন ক্যান্সারের সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে এর জিঞ্জারল উপাদান। এছাড়াও এর রয়েছে প্রদাহ নিরাময়ের ক্ষমতা। শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এই আদা। কাশি, বমি বমি ভাব ও বদহজম কমাতেও এটি সাহায্য করে।
পুষ্টি বিজ্ঞানী নাজমা শাহীন বলেন, যে কোনো খাবারই, যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি খেলে, ক্ষতি হবেই। যত পুষ্টিকর খাবারই হোক সব খাবারই খাওয়ার একটা পরিমাণ আছে। আমরা তো মাত্রার অতিরিক্ত কোনোটাই খেতে পারি না। দুধ ও ডিম এত পুষ্টিকর খাবার কিন্তু সেটাও তো আমি যত খুশি তত খেতে পারব না। মসলার ক্ষেত্রেও তাই।
তিনি বলেন, ইদানিংকালের অনেক গবেষণায় মসলায় নানা ধরনের উপাদান পাওয়া গেছে যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পরীক্ষাগারে রাসায়নিক বিশ্লেষণ, প্রাণীর দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এবং পরে জনস্বাস্থ্যের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে এসব উপকারিতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।