মেয়েরা এখন অনেক স্বাস্থ্যসচেতন—এমন কথা এখন মুখে মুখে শোনা যায়। অথচ বাস্তবে সচেতন মেয়েরাও পিরিয়ডের সময় ব্যায়াম করা যাবে কি-না, তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্বেই থাকেন। তবে পিরিয়ডকালীন ব্যায়াম করা যাবে না—এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিরিয়ডের আগে ও পরে নিয়ম মেনে ব্যায়াম করতে পারলে শারীরিক ব্যথা কিছুটা কমে। এসময়ে ব্যায়াম শরীরে অ্যান্ডোরফিন (ইতিবাচক হরমোন) উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। তবে কারও শরীরে সায় না দিলে অর্থাৎ দুর্বল থাকলে পিরিয়ডের সময়ে ব্যায়াম না করা উত্তম।
পিরিয়ডকালীন ব্যায়ামের সুবিধা
পিরিয়ডের সময়ে ব্যায়াম নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারনা রয়েছে, সেগুলোকে পাত্তা না দিয়ে শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়াম করলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধান হয়। যেমন—
১. পেট ও কোমরের ব্যথা কমে
২. শরীরের ফোলাভাব কমে
৩. মানসিক বিষণ্ণতা দূর হয়
৪. মেজাজ খিটখিটে হয় না। ফলে অল্পতেই বিরক্তি আসে না
৫. মানসিক ক্লান্তি দূর হয়
৬. বমি বমি ভাব দূর হয়
পিরিয়ডকালে সেরা ব্যায়াম
চিকিৎসকরা পিরিয়ডকালে শরীরে সহনীয় ব্যায়াম করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বয়স ও শরীরের ওজন অনুযায়ী যা পছন্দ করেন আপনি সেই ব্যায়ামই করতে পারেন। তবে অনেক সময় পিরিয়ডের প্রথম দুদিন ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকারও প্রয়োজন হতে পারে।
>পিরিয়ডের সময় হাঁটা ও সাইকেলিং করা যেতে পারে। তবে দৌঁড়ানো উচিত নয়।
>অল্প ওজনের ডাম্বল দিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন, যা এক হাতের সাহায্যে সহজেই তোলা সম্ভব। যেকোনো স্থানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে একটি ডাম্বলের সাহায্যেই ধীরে ধীরে হাত, কোমর ও পিঠের ব্যায়াম করা যেতে পারে।
>ইয়োগা এসময়ে বেশ উপকারি ও স্বাস্থ্যসম্মত। যারা পিরিয়ডকালীন এক স্থানে বসে শরীরচর্চা করতে চান, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো উপায়।
>সাঁতার কাটতেও পারেন। পিরিয়ডের সময়ে খুব স্বাভাবিক নিয়মে সাঁতার সম্ভব। এসময় সাঁতার সবচেয়ে বেশি উপকারি শরীরচর্চা। এতে শরীর ভালো থাকবে এবং পিরিয়ডকালীন সমস্যা কমবে।
পিরিয়ড হলে এড়িয়ে চলবেন যেসব ব্যায়াম
>পিরিয়ড হওয়ার সময় দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম শরীরের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, পিরিয়ডের সময় ৬০ মিনিটের মাঝারি থেকে তীব্র ব্যায়াম প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
>ইনভার্সন-টাইপ যোগভঙ্গি জরায়ু ভালো রাখে। তবে এই যোগাসন পিরিয়ডকালে জরায়ুর বিস্তৃত লিগামেন্টগুলো প্রসারিত করতে এবং শিরাগুলোকে সংকুচিত করতে পারে যা জরায়ু থেকে রক্ত বহন করে। তাই এই ধরনের যোগাসন এড়িয়ে যেতে পারেন।
>ব্যায়ামের সময় যদি অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্তি, বমি বমি ভাব ও ব্যথা-অস্বস্তি বেড়ে যায়, তবে যে ব্যায়াম করছেন তা দ্রুত বন্ধ করুন এবং বিশ্রাম নিন। এ লক্ষণগুলো ব্যায়াম করাকালীন সময় নিয়মিত চলতে থাকলে, সম্পূর্ণরূপে ব্যায়াম করা বন্ধ করুন। ‘কোন ব্যথা নেই, লাভ নেই’—এ কথাটি উপেক্ষা করুন। সবার আগে শরীরের কথা শুনুন।
পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যবিধি
১. নিয়মিত গোসল করা।
২. সময়মত অন্তর্বাস পরিবর্তন একই প্যাড বার বার ব্যবহার না করা।
৩. প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অন্তর প্যাড পরিবর্তন করা।
৪. ওয়ার্কআউটের পর জামা-কাপড় দ্রুত পরিবর্তন এবং পরিষ্কার করা।
তথ্যসূত্র: ফ্লো হেল্থ