তবে বেশি ঘুমালে কি ধরণের শারীরিক সমস্যা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয় সে সম্পর্কে ধারণা নেই অনেকেরই। কম ঘুমানো যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, একইভাবে প্রয়োজনের চাইতে বেশি ঘুম স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়। জেনে রাখুন কেন অতিরিক্ত ঘুমের অভ্যাস ত্যাগ করা প্রয়োজন।
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য ৭-৯ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট। তবে এর চাইতে অনেক বেশি সময় নিয়ে ঘুমালে তা হৃদযন্ত্রের সমস্যার লক্ষণ প্রকাশ করে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার এর স্লিপ এন্ড এপিলেপ্সি বিভাগের ডিরেক্টর কার্ল বাযিল জানান, অনেকেই প্রয়োজনের চাইতে বেশি সময় ঘুমান কোন সমস্যা ছাড়াই। তবে অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় ঘুমানোর পেছনে হৃদযন্ত্রের সমস্যা লুকায়িত থাকে। দীর্ঘ সময় যারা ঘুমান, তাদের মাঝে ৩৮ শতাংশ মানুষের হৃদযন্ত্র বড় থাকে। এছাড়া ৪৬ শতাংশ মানুষের স্ট্রোকের সম্ভবনা থাকে।
রাত ভর যদি ভালোভাবে ঘুম হয় তবে ৭-৮ ঘন্টার ঘুমই যথেষ্ট। কিন্তু ঘুম ভালো না হলেই দীর্ঘ সময়ের ঘুমের প্রয়োজন হয়। দ্য স্লিপ ডক্টর হিসেবে পরিচিত ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজিস্ট মাইকেল জে. ব্রুস জানান, দীর্ঘ সময় ঘুমের কারন হলো রাতে ঘুম ভালোমতো না হওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা আমরা ঘুম বলে মনে করি, আসলে সেটা ঘুমের মতোই বিশ্রাম। সহজ ভাষায় হালকা ঘরানার ঘুম। একে স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়ে থাকে। এই সমস্যাটি থাকলে লম্বা সময় ঘুমালেও ঘুম পূর্ণ হয় না।
বাড়তি ঘুমের সঙ্গে বাড়তি ওজন যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানসিক বিষণ্ণতা, নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা ও দীর্ঘ সময় ঘুমের ফলে ওজন বাড়ার প্রবণতা বেড়ে যায় অনেকটা। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক এলিজাবেথ ম্যাকডেভিট জানান, লম্বা সময় ঘুমের জন্য বিছানায় থাকতে হয় প্রয়োজনের চাইতে অনেক বেশি সময়। ফলে সারাদিনে যতটুকু ক্যালোরি বার্ন করা প্রয়োজন, তার চাইতে কম ক্যালোরি বার্ন হয়। বাড়তি ক্যালোরি সহজেই শরীরে জমে ফ্যাট তৈরি করে।
খুব একটা অবাক হবার মতো কোন বিষয় নয় এটা। স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি ঘুম ও বাড়তি ওজনের সঙ্গে ডায়বেটিস দেখা দেবার সম্ভবনা থাকবেই। কিন্তু গবেষকরা জানাচ্ছেন, ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকলে, বাড়তি ঘুমের জন্য ডায়বেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় দ্বিগুণ। বডির মাস ইনডেক্সের উপর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার অসামঞ্জস্যতা এবং কাজের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে এই ঝুঁকি বেড়ে যায়।
দীর্ঘ সময় ঘুমানোর ফলে অনেকের মাথাব্যথা দেখা দেয়। যেখানে বেশ সময় ঘুম মানে বেশি সময় বিশ্রাম, সেখানে মাথাব্যথা দেখা দেওয়াটা একটু অবাক হবার মতো। তবে অনেকেই দীর্ঘ ঘুমের পর ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরার সমস্যায় ভুগে থাকেন। এমনটা হওয়ার কারণ হিসেবে এলিজাবেথ জানান, দীর্ঘ সময় ঘুমের কারনে শরীর সঠিক সময়ে পানি ও অন্যান্য খাবার পায় না। শরীরে পুষ্টি ও চিনির অভাব এবং পানিস্বল্পতার ফলে মাথাব্যথা শুরু হয়।
দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকার ফলে শারীরিক কার্যকলাপ একদম না হওয়ার ফলে শরীরের পেশি ও হাড় একই অবস্থায় থাকে। যা থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথাভাব দেখা দেয় বলে জানান কার্ল বাযিল।