বয়স আটকাতে কে না চায়! নারী হোক বা পুরুষ; চেহারায় বয়সের ভাজ পড়বে, এ যেন এক দুঃস্বপ্নের চেয়ে কম কিছু নয়! সিনেমা, মডেলিং বা ফ্যাশন সম্পৃক্তরা এই ব্যাপারে বেশ অনেকটা সতর্ক। তাছাড়া যাদের অনেক টাকা আছে, তারা অনেক অ্যান্টিএজিং চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সেসব কি আর সাধারণ ঘরের মানুষের দ্বারা সম্ভব? তাই বলে তো, কম বয়সেই মুখে কুঁচকানো চামড়া নিয়ে ঘোরা যায় না!
তবে, বুড়িয়ে যাওয়া কোনো দু-এক দিনের ঘটনা নয়। বেশ লম্বা সময়ের ব্যাপার। তাই এই প্রক্রিয়াকে বাধা দিতে চাইলে পদক্ষেপও বেশ আগে থেকেই নিতে হবে। শুধু বয়সের ছাপ পড়াই নয়, জীবনে সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন কিছু অভ্যাস উল্লেখ করা হলো-
১. অসম্পূর্ণ ঘুম: শরীরের ঘাটতি এবং ক্লান্তি দূর করার স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলো ঘুম। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে মানসিক চাপজনিত হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। এতে ত্বকের টান টান ভাব কমে যেতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, চেহারার পেশির টক্সিনের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। চামড়া ঝুলে যাওয়া, চোখের নিচে কালি পড়া, বলিরেখা সহ নানারকম সমস্যার সূত্রপাত হয়। দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর পরিকল্পনা রাখতে হবে।
২. নেশাদ্রব্য: অতিমাত্রায় নেশাজাত দ্রব্য, বিশেষ করে ধূমপান এবং অ্যালকোহলসমৃদ্ধ পানীয় সেবন ত্বকের ঝুলে পড়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। কারণ, অ্যালকোহল সেবনে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যেতে শুরু করে এবং কোলাজেন উৎপাদন হ্রাস করে। এছাড়া ধূমপানের কারণে ইলাস্টিন প্রোটিনের ক্ষতি হয়। এই কারণে ত্বকে বলিরেখা, সূক্ষ্মরেখা এবং ত্বকে নিস্তেজ বর্ণ সৃষ্টি হয়।
৩. পানিশূন্যতা: পর্যাপ্ত মাত্রায় পানি পান করা ত্বক সুন্দর রাখার পূর্বশর্ত। পানিশূন্যতা কেবল ত্বকের নয় অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যেরও বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী, যা অনেক রোগের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে অন্তত ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
৪. ব্যায়ামের ঘাটতি: প্রতিদিন ব্যায়াম করলে শরীরে রক্ত চলাচল বেশ ভালোভাবে হয়। এতে ত্বকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। ব্যায়ামের ঘাটতি দিন দিন ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলে। এছাড়া ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ওজনবৃদ্ধির মতো অনেক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।
৫. সূর্যরশ্মি: অতিবেগুনি রশ্মি অর্থাৎ ইউভি রশ্মি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধ্বংস করার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রতিদিন দীর্ঘক্ষণ সূর্যের আলোতে থাকলে ত্বক জলদি বুড়িয়ে যায়। তাই প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৬. মানসিক চাপ: অনেকে হয়তো জানেন না, বার্ধ্যেকের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ একটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসিক অশান্তির কারণে ত্বকের কোষগুলো অকালে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং জীবনীশক্তি বজায় রাখতে ধ্যান, যোগ ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার ব্যাপারে মনোযোগী হন।
৭. অস্বাস্থ্যকর খাদ্য: আজেবাজে খাদ্যাভাস শুধু শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিই ঘটায় না, বরং শরীরে একগাদা বাজে জিনিসে পূর্ণ করে। যেমন অতিরিক্ত তেলজাতীয় খাবারে মুখে ব্রণ ও পিম্পল হয়। আবার চিনি এবং প্যাকেটজাত খাবারের কারণে শরীরে প্রদাহ হতে পারে। এসব কারণে কম বয়সেই বার্ধক্যজনিত লক্ষণ ফুটে ওঠে। তাই সুষম এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রুটিন তৈরি এবং অনুসরণ করতে হবে।
এইসব অভ্য়াসের কারণে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। অনেক বেশি অনিয়ম হলে খুব কম বয়সেই এইব লক্ষণ দেখা যেতে পারে। তাই সময় থাকতেই এইসব বদঅভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। নিজেকে সুন্দর রাখুন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
তথ্যসূত্র: নিউজ১৮