অহরহ হার্ট অ্যাটাক কিংবা হার্ট ফেইল্যুরের খবর শোনা যাচ্ছে। হার্টে ব্লক ধরা পড়ার খবরটি যেন একেবারেই ডাল-ভাত হয়ে গিয়েছে। অথচ প্রতিটি হৃদরোগের পরিণতি ভীষণ ভয়ানক হয়ে থাকে।
হৃদরোগের শুরু থেকেই শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। অজানা থাকার ফলে এই লক্ষণগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। অথচ জানা থাকলে লক্ষণ প্রকাশের সময় থেকেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে চূড়ান্ত ও বাজে পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া যায়। এমন কয়েকটি নীরব লক্ষণ আজকের ফিচারে তুলে ধরা হলো।
জন হপকিন্স স্কুল ও মেডিসিন এর প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর এরিন মিকোস, এমডি জানান, আগে যে কাজটি কোনরকম শারীরিক ক্লান্তি ছাড়াই করা যেত, সেই একই কাজ করতে গেলেই প্রচন্ড ক্লান্তু এসে ভর করলে বুঝতে হবে হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে রক্ত হৃদপিণ্ডে সরবরাহ করতে পারছে না।
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাটির ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হৃদরোগের সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে খুব সহজেই হার্টে ব্লক তৈরি হয়, যা রক্তের স্বাভাবিক চলাচলে বাধাদান করে।
ঠাণ্ডাজনিত কাশির সমস্যাটি খুবই সাধারণ এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝেই সমস্যাটি ভালোও হয়ে যায়। তবে একেবারেই অকারণে ও হুট করে জেদি কাশির সমস্যা দেখা দেওয়ার পেছনে গুরুত্বর কারণ লুকিয়ে থাকে। ডাঃ মিকোস জানান, হৃদরোগের প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে ফুসফুসে তরল জমা হয়, যার ফলে ঘনঘন কাশি দেখা দেয়। এই সমস্যাটি ক্ষেত্র বিশেষে শ্বাসকষ্ট কিংবা ফুসফুসে সমস্যা প্রতিফলন করে। তবে আদতে এই সকল সমস্যার পেছনে মূল সমস্যাটি লুকায়িত থাকে, যেটা হলো হৃদরোগ।
ঘুমের মাঝে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার ফলে ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যাটিকে বলা হয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’। এই সমস্যাটির সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলিয়েশন, হার্ট অ্যারেথমিয়া ও অন্যান্য হৃদরোগ দেখা দেওয়ার সমস্যাটি সম্পর্কিত। যেহেতু স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীদের ঘুমের মাঝে অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা অনেক কমে যায়, তা সরাসরি হৃযদন্ত্রের উপরে প্রভাব ফেলে দেয়।
হুট করেই সকালে জুতা পরতে গিয়ে দেখলেন জুতা পরতে সমস্যা হচ্ছে। এরপর খেয়াল করে দেখলেন পা ও পায়ের পাতা বেশ খানিকটা ফুলে গেছে। এই সমস্যাটি দেখা দেওয়ার মাধ্যমে হৃদরোগের সম্ভবনা দেখা দেয়। হৃদযন্ত্র সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হল, শিরা থেকে বাড়তি তরল শরীরের টিস্যুতে এসে জমা হয়। যার ফলে শরীরের নিচের অংশের অঙ্গে পানি এসে জমে এবং পা ফুলে যায়। পায়ে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে ডিম্পলের মতো গর্ত তৈরি হলে বুঝতে হবে পায়ে পানি এসেছে। এই সমস্যাটি ধারাবাহিকভাবে দেখা দেওয়া শুরু করে তবে খুব দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
আমরা প্রায় সকলেই জানি যে, বুকে ব্যথাভাব দেখা দেওয়ার মানে হলো হৃদরোগের লক্ষণ প্রকাশ হওয়া। অথচ হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় শরীরের অন্য অঙ্গে ব্যথাভাব দেখা দেওয়ার মাধ্যমে। ডাঃ মিকোস জানান, পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের সমস্যার বিষয়টি শরীরের অপরিচিত স্থানে ব্যথাভাবে মাধ্যমে বেশি দেখা দেয়’। এই ব্যথাটি দেখা দেয় ঘাড় ও চোয়ালের দিকে, যখন হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের সাপ্লাইয়ে ঘাটতি দেখা দেয়।
হালকা দৌড়ানো কিংবা সিঁড়ি বাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুক্ষণের মধ্যে নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেওয়া তথা ‘শর্ট ব্রেথ’ এর সমস্যাটি প্রকট হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার কার্ডিওলজি ল্যাবরেটরির অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর লরেন্স ফিলিপ জানান, শর্ট ব্রেথের সমস্যাটি সবচেয়ে বড় লক্ষণ যার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে হৃদরোগের প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি ধরা পড়ে।
হার্ট বিট কিংবা প্যালপিটিশান একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় হওয়া সুস্থ ও স্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতার লক্ষণ। তবে হৃদরোগের সমস্যায় প্রায়শ এই হার্ট বিট মিস হয়, যেটাকে বলা হয় ‘অফ বিট’।
আরও পড়ুন: আট ঘণ্টার বেশি ঘুমানো কতটা ক্ষতিকর?
আরও পড়ুন: ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার ডে: ক্যান্সার দূরে রাখবে সঠিক নিয়ম