অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ওজন ঠিকঠাক থাকলেও পেটের মেদ যেন মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষত আমাদের দেশে পেটের মেদ বা ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার সমস্যাটি দেখা দেয় তুলনামূলক বেশি।
কিছু অনিয়ম ও অজ্ঞতার ফলেই মূলত বিব্রতকর এই সমস্যাটি দেখা দেয়। আজকের ফিচারে এমন কয়েকটি পয়েন্ট সম্পর্কে আলোচনা করা হলো যা পেটের মেদকে বাড়িয়ে দিচ্ছে আপনার অজান্তে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য আস্ত ফল খাওয়ার বদলে যদি ফলের রস পান করেন, তবে সেটা উপকারিতার বদলে ক্ষতির কারণ হিসেবেই দেখা দিবে। ফল খাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য হলো এতে থাকা আঁশ। যা রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে দ্রুত চিনি মিশ্রিত হতে বাঁধা দান করে। অন্যদিকে ফলের রস কিংবা জ্যুসে চিনি গলিত অবস্থায় থাকে। যা সহজেই রক্তের সঙ্গে মিশে যায়, শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করে। বাড়তি এই চিনি ও ক্যালোরি ইনফ্ল্যামেশন ও পেটের বাড়তি মেদ তৈরি করে।
প্রতিবেলার খাবারের পাশাপাশি স্ন্যাক্স খাওয়ার অভ্যাসটি সবসময়ই শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের ইউনিভার্সিটি প্রিভেনশন সেন্টারের এন্ডক্রিনোলোজিস্ট রাসা কাযলাসকাইতে জানান, স্ন্যাক্স খাওয়ার অভ্যাসটি খুব সহজেই শরীরে বাড়তি ক্যালোরি যোগ করে। কারণ স্ন্যাক্স হিসেবে সকলেই মুখরোচক ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ভালোবাসে। বাড়তি ক্যালোরি অতি দ্রুত তলপেটে ও পেটের উপরের অংশে যোগ হয়। যা থেকে পরবর্তীতে মেদ তৈরি হয়।
প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার শুধুমাত্র পাকস্থলিকে সুস্থ রাখতেই নয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও পেটের মেদ কমাতেও কাজ করে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে দই ও অন্যান্য প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার, ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার মাঝে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে এবং এই সকল ব্যাকটেরিয়ার মাঝে কিছু ব্যাকটেরিয়ার ওবেসিটি সমস্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এছাড়া পাকস্থলিস্থ কিছু ব্যাকটেরিয়া ক্ষুধাভাবকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
অন্যান্য যেকোন খাবারের তুলনায় তেলেভাজা খাবারের নেতিবাচক প্রভাবটি শরীরের উপরে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয়। পেট ও কোমরের অংশ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় তেলেভাজা খাবার খাওয়াকে। এই সকল খাবারে থাকে ট্রান্স ফ্যাট। যা সরাসরি রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। যা ওজন ও মেদকে বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিদিনের খাবারের প্লেটে অন্তত পক্ষে অর্ধেক অংশ জুড়ে বিভিন্ন ধরণের সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়। ডাঃ কাযলাসকাইতে জানান, খাদ্যাভাসে সবজি থাকলে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ গ্রহণ করা হয়। যা ওজনকে ও রক্তে চিনির মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে।
এই পয়েন্টটি উল্লেখ না করলেই নয়। চিনিযুক্ত কোমল পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ তো বটেই, কোমল পানীয় পানের সঙ্গে ওবেসিটির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। মাত্র এক ক্যান কোমল পানীয়তে রয়েছে ১০ চা চামচ চিনি ও ১৫০ ক্যালোরি। সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ বিহীন এই পানীয়টি ওজন বৃদ্ধি ও পেটের মেদ বৃদ্ধির জন্য অনেকখানি অবদান রাখে।
একটানা লম্বা সময় ডেস্কে বসে থাকার ফলে খুব সহজেই তলপেটে মেদ জমা হয়। যে কারনে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, নির্দিষ্ট সময় পরপর ডেস্ক ছেড়ে হাঁটাহাটি করার জন্য। এতে করে ক্যালোরি বার্ন হবে এবং পেটে মেদ জমতে পারবে না।
আরও পড়ুন: পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর এই খাবারগুলো
আরও পড়ুন: খাদ্যাভাসের যে পাঁচ বদভ্যাসে কমছে না ওজন