ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই চারপাশ জুড়ে বিরাজ করে সাজ সাজ রবে উৎসবের আমেজ। এই আমেজের পেছনের মূল উপলক্ষ হলো, বাঙালির অন্যতম বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে লাল পেড়ে সাদা শাড়ির পাশাপাশি বর্তমান সময়ে আরামদায়ক পোশাকের দিকেও ঝুঁকছেন নারীরা।
কুর্তি, সালোয়ার-কামিজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করায় এমন ধরনের আরামদায়ক পোশাকের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তোরত্তর। তারই ধারাবাহিকতায় পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে একেবারেই ভিন্ন মোটিফ ও ডিজাইনের কুর্তি, সালোয়ার-কামিজ ও শাড়ি নিয়ে এসেছে বেশ কিছু অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।
অনলাইন ও অফলাইন জগতে রুচিশীল ক্রেতাদের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠা ‘ওয়্যারহাউজ’, ‘শরদিন্দু’ ও ‘শুকশারী’র বৈশাখের সংগ্রহ নিয়ে আজকের বার্তা লাইফস্টাইলের পাতায় থাকছে বিশেষ আয়োজন। ফিচারে চোখ বুলিয়ে জেনে নিতে পারেন তিনটি ভিন্ন ব্র্যান্ডের ভিন্ন মোটিফের আয়োজন সম্পর্কে।
রঙ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন বলে, তাসনিম ফেরদৌসের কাছে সবচেয়ে প্রিয় সময়টা হলো বৈশাখ। কারণ এ সময়ে মনের খেয়াল খুশি মতো রঙ নিয়ে কাজ করা যায়। এমন নয় যে অন্য সময় নকশা তৈরিতে ইচ্ছামতো রঙের ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু এ সময়টাতে যেন রঙের ব্যবহারে কোন নির্দিষ্ট গন্ডি থাকে না।
সে কারণে এ বছরের ওয়্যারহাউজের বৈশাখের সংগ্রহে প্রাধান্য পেয়েছে প্রায় সকল ধরণের রঙ। এমনটাই জানালেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা, কর্ণধার ও নকশাকার তাসনিম ফেরদৌস।
সাধারণত পিওর খাদি ও সুতি তন্তু নিয়ে কাজ করা হলেও জর্জেট ও লিলেনের উপরেও কাজ করা হয়েছে বৈশাখের সংগ্রহে। নকশা ও মোটিফের ক্ষেত্রে চিরপরিচিত ‘হাতপাখা’, ‘ঘোড়া’, ‘মুখোশ’ এর পাশাপাশি গরমে প্রশান্তির আমেজ আনতে ‘ললি পপসিকল’ আইসক্রিমের আদলেও নকশা থাকছে ওয়্যারহাউজে। কুর্তি, কোটি, লঙ ড্রেস, শ্রাগের পাশাপাশি শাড়িও থাকবে তাদের সংগ্রহে। কুর্তি ও কোটির মূল্য হবে ১০০০-২১০০ টাকার মধ্যে। ১৫০০-২৫০০ টাকার মাঝে পাওয়া যাবে ওয়্যারহাউজের শাড়িগুলো। ক্রেতাদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে বলে জানান তাসনিম।
ক্রেতাদের কাছে ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান শরদিন্দুর বৈশাখের সংগ্রহে থাকছে বেশ ভালো চমক। বেশ কয়েকটি ভিন্ন মোটিফ নিয়ে নকশা করা হয়েছে বৈশাখের পোশাক ও শাড়ির। ‘পোশাক নকশার সময় মাথায় রাখি, আমার নকশা করা পোশাক যেন একটি গল্প বলে। হতে পারে কোন ফিকশনের গল্প, কোন প্রাচীন পুঁথির গল্প অথবা গ্রামীণ কোন চিত্রগাথার গল্প’, বলেছেন শরদিন্দুর প্রতিষ্ঠাতা, কর্ণধার ও নকশাকার হাবিবা আক্তার সুরভী।
সেই ধারাবাহিকতায় শরদিন্দুর বৈশাখের সংগ্রহে প্রাচীন তিব্বতের মন্ত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু জামা নকশা করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামীণ পটচিত্র, লোকচিত্র, দক্ষিনের মাধুবানী আর্ট, জয়পুরের হাওয়া মহল, মুঘল মিনিয়েচার আর্ট পদ্মপুরাণের বেহুলা লক্ষিন্দরের দৃশ্যপটও ফুটে উঠেছে শরদিন্দুর নকশায়।
গরমের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সুতি কাপড় প্রাধান্য পেলে জমকালো অনুষ্ঠানের জন্য সিল্ক, জর্জেটের পোশাকও থাকছে। এছাড়া সংযোজন হিসেবে শরদিন্দু এনেছে তাতীর হাতে বোনা শাড়িতে স্ক্রিনপ্রিন্টের নকশা।
সুরভী জানান, পোশাকের মূল্য নির্ধারণের সময় নিজেকে ক্রেতার স্থানে ভেবেই মূল্য নির্ধারণ করেন তিনি। তাই বেশ সুলভমূল্যেই পাওয়া যাবে ব্যতিক্রমী বৈশাখী সংগ্রহ। সুতির পোশাকগুলো ১০০০-২২০০ টাকা, সিল্ক ও জর্জেটের পোশাক ১৪০০-২৫০০ টাকা এবং শাড়ি পাওয়া যাবে ১৫০০-২৫০০ টাকার মাঝে।
দুই বন্ধু আনন্দময়ী প্রমা ও মিথিলা কবির এর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শুকশারী। পোশাকের নকশা করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনপ্রিন্ট ও ডিজিটাল প্রিন্টের উপরেই বেশি কাজ করা হয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রমা।
শুকশারীতে পোশাকের তন্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্রেতার আরামের বিষয়টি সবসময় গুরুত্ব দেওয়া বলে সুতি ও লিলেনের উপরেই বেশি কাজ করা হয়। মূলত একটি নির্দিষ্ট থিম বা গল্পকে কেন্দ্র করেই পোশাকের নকশা করা হয়। তাই বৈশাখের জন্য একটু ভিন্ন মোটিফ নিয়ে কাজ করার চেষ্টায় শুকশারী নিয়ে এসেছে ‘রবী-পত্র’। যেখানে পোশাক জুড়ে বিশ্বকবীর হাতে লেখা চিঠিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাথে রয়েছে বিখ্যাত ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চলচিত্রের পোস্টারে নিয়ে তৈরি করা নশকাদার পোশাক।
এছাড়াও দেশীয় মোটিফের ছিমছাম নকশা ও হালকা ঘরানার রঙের কাজও রয়েছে শুকশারীর বৈশাখের সংগ্রহে। এখানে সিংগেল কুর্তি ১২৫০-১৪০০ টাকা ও থ্রি-পিস ১৭০০-২৪৫০ টাকার মাঝেই পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: সাজ-পোশাকে দ্যুতি ছড়াচ্ছে ‘দেবী’
আরও পড়ুন: শারদ সাজে থাকুক হাতে তৈরি নান্দনিক টিপ