ফিরে আসুক তামার পাত্রের ব্যবহার

অনুষঙ্গ, লাইফস্টাইল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল | 2023-09-01 21:14:39

পুরনো সময়ে দেখা যেত তামা কিংবা পিতল-কাঁসার পাত্রে খাবার খেতে, পানি পান করতে।

চকচকে ও ভারি ধাতুতে তৈরি এই পাত্রগুলো তখনকার সময়ে দারুণ আকর্ষণীয় দেখালেও, নতুন নকশায় তৈরি সহজলভ্য ও সস্তা মেলামাইন কিংবা প্লাস্টিকের জিনিস গ্রাস করে নেয় ধাতুর তৈরি পাত্রের স্থান।

অথচ তামার পাত্রের ব্যবহার সুস্বাস্থ্যে এতো অবদান রাখতে পারে, যা রীতিমত বিস্ময়কর। সময়ের পরিবর্তনে এখন কিন্তু পুরনো আমলের জিনিসপত্রের চল আবারো ফিরে আসছে। মাটি কিংবা পাটের তৈরি জিনিসের প্রতি ঝুঁকছে সকলে। ঠিক একইভাবে প্রতিদিনের ব্যবহারে খাবার ও পানি গ্রহণের জন্য অন্য যেকোন উপাদানের বাসনের পরিবর্তে তামায় তৈরি বাসন ব্যবহারের চল ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। যা একইসাথে আভিজাত্যভাব আনবে এবং সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থেও ভূমিকা রাখবে।

তামার পাত্র ব্যবহারের উপকারিতাগুলো কী?

তামার পাত্রে খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পানি ধারণ, সংরক্ষণ ও পানি পানের উপকারিতা চমকে দেওয়ার মতো। এখানে বিশেষ ছয়টি উপকারিতা তুলে ধরা হলো।

তামার পাত্র

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ধর্ম

তামার পাত্রে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত পানি সংরক্ষণ করা হলে তামার মাইক্রোবিয়াল ধর্ম পানিতে থাকা ক্ষতিকর মাইক্রোবসমূহকে মেরে ফেলে। এতে করে উক্ত পানি পানে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় অনেকখানি। ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ক্যারোলিনের তথ্যানুসারে তামাতে রয়েছে পানি বিশুদ্ধিকরণ ধর্ম। যার ফলে এই ধাতু পানিতে থাকা প্রায় ৯৭ শতাংশ জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোবসমূহকে নির্মূল করতে পারে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে

আমাদের মস্তিষ্ক এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে সিন্যাপসিসের সাহায্যে সিগন্যাল পাঠিয়ে থাকে। কপার তথা তামা ফসফোলিপিড (Phospholipids) তৈরি করে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে ম্যালিন শিথস (Myelin Sheaths) এর উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকারী

ওজনকে যারা নিয়ন্ত্রণের ঘরে রাখতে চেষ্টা করছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে, তারা একইসাথে পানি ধারণের ও পানি পানের পাত্রও বদলে ফেলুন। বেশিরভাগ বাড়িতেই প্লাস্টিকের জগে পানি ধারণ করা হয়। এই প্লাস্টিক পার্টিকেল পানির সাহায্যে খুব স্বল্প পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করে ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব তৈরি করে।

অন্যদিকে তামার পাত্রে পানি রাখা হলে পানিতে তামার উপকারিতার অনেকটা যোগ হবে। দেখা গেছে, তামার পাত্রে পানি ধারণের ফলে এবং পানি পান করা হলে, পাকস্থলিস্থ খাদ্য দ্রুত ও ভালোভাবে পরিপাক হয় এবং ফ্যাট শরীর থেকে বের করে দিতে কাজ করে। ফলে শরীরে বাড়তি ফ্যাট জমতে পারে না।

তামার পাত্র

বয়স বৃদ্ধির হার স্লথ করে

তামাকে বলা হয়ে থাকে বলিরেখা দূরীকরণের প্রাকৃতিক উপাদান। বয়সজনিত ও অনিয়মজনিত কারণে ত্বকে বয়সের ছাপকে ধীরে ধীরে মুছে ফেলতে তামার পাত্রে ধারণ করা পানি পানের দিকে নজর দিতে হবে। গবেষণার তথ্য জানাচ্ছে, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এই ধাতু থেকে পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা কোষকে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করবে। এছাড়া এই ধাতু ক্ষতিকর রেডিক্যাল মুক্ত হওয়ায় ত্বক তো বটেই, স্বাস্থ্যের উপরেও কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারবে না।

হাড়ের ব্যথায় উপকারী তামা

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানের পাশাপাশি তামা একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি তথা প্রদাহবিরোধী উপাদানও। ফলে শরীরের যেকোন অংশের প্রদাহজনিত ব্যথার পাশাপাশি আর্থ্রাইটিসজনিত হাড়ের ব্যথাতেও তামার পাত্রে ধারণ করা পানি উপকারী উপাদান হিসেবে বিবেচ্য হবে। বিশেষত হাড়ের ব্যথা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে প্রতিদিন সকালে তামার পাত্র থেকে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে

একদিকে মেলামাইন ও প্লাস্টিকের পাত্র ক্যানসারকে ডেকে আনে, অন্যদিকে তামার পাত্র ক্যানসার থেকে শরীরকে প্রতিরোধে কাজ করে। বিশেষত এই ধাতুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-কারসেনোজেনিক ধর্ম শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে ক্যানসার বাসা বাঁধার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং যাদের শরীরে ক্যানসারের সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ক্যানসার বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে।

কোথায় ও কত দামে পাওয়া যাবে তামার পাত্র?

প্লাস্টিক, মেলামাইন কিংবা কাঁচের পাত্রের ভিড়ে তামার পাত্রের খোঁজ পাওয়াই যায় না। তবে পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেট ও আড়ং এ তামার পাত্রের খোঁজ পাওয়া যাবে। পণ্যের ধরণ (গ্লাস, জগ, প্লেট, বাটি) ভেদে তামার এক একটি পাত্রের দাম পড়বে সর্বনিম্ন ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০০ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: রোদ কিংবা বৃষ্টি, ছাতা হোক সঙ্গী

আরও পড়ুন: পাঁচ উপকারিতায় ল্যাভেন্ডার অয়েল

এ সম্পর্কিত আরও খবর