বাগান যখন ভালো থাকার চাবিকাঠি!

পরামর্শ, লাইফস্টাইল

ফাওজিয়া ফারহাত অনীকা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, লাইফস্টাইল | 2023-08-31 06:09:30

শহুরে এলাকায় বাগান করার মতো জায়গা কোথায়! এই আফসোসের তোয়াক্কা না করে ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দা ও বাসার ছাদেই নিজের শখের বাগান গড়ে তুলছেন এখন সকলে। সবুজ সতেজতা নিজের কাছে রাখা সত্যিই প্রশান্তিদায়ক। কিন্তু বাগান করার মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, সেটা কি আলাদাভাবে বলা হয়েছে? যদি বলা না হয়ে থাকে তবে জেনে রাখুন, আপনার এই প্রিয় কাজটিই সাহায্য করবে আপনাকে সুস্থ রাখতে। ঠিক কোন কারণে বলা হচ্ছে বাগান সুস্থতার পেছনে অবদান রাখে, সেটা জানতে পড়ে নিন এই ফিচারটি।

জন্মাবে সবজির প্রতি ভালোবাসা

সবজি খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু নিজের হাতে লাগানো গাছে বেড়ে ওঠা সবজির প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ ও ভালোবাসা জন্মাবে। যিনি টমেটো খেতে পছন্দ করেন না, বাগানের গাছে ধরা সতেজ টমেটো দেখে ঠিকই তার খেতে ইচ্ছা করবে। শুধু টমেটো নয়, এভাবে লেবু, শসা, লেটুস, স্প্রিং অনিয়নসহ বহু সবজি ও শাক চাষ করা যাবে নিজের হাতে গড়ে তোলা ছোট বাগানে।

ওজন কমাতে সাহায্য করবে

ওজন কমানোর জন্য কত নিয়ম, কসরত, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়। অথচ নিজের শখের বাগান গড়ে তুললেই ওজনের চিন্তাকে বিদায় জানানো সম্ভব। অ্যামেরিকান জার্নাল অব পাবলিক হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্যানুসারে যারা বাগান করেন ও বাগানে নিয়মিত কাজ করেন, তাদের বডি-মাস-ইনডেক্স কম থাকে এবং ওজন থাকে নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া আরও বড় তথ্যাটি হলো, নিয়মিত বাগানে কাজ করা নারীরা গড়ে ১১ পাউন্ড ও পুরুষরা গড়ে ১৬ পাউন্ড ওজন কমাতে পারেন।

garden

বাগানে কাজ করাই তো ওয়ার্কআউট

ওয়ার্কআউট করা হয়নি? অথবা আলসেমির জন্য ওয়ার্কআউট করা হচ্ছে না? তাহলে পছন্দসই গাছ নিয়ে বাগান করে ফেলুন। বাগানের পেছনে সময় দিলেই ওয়ার্কআউট করা হয়ে যাবে। মাটি ও সারের বস্তা টানাটানি করা, টব টানাটানি করা, মাটি কোপানো, মাটি ও সার মেশানো, গাছ লাগানো, গাছের গোড়ার মাটি আলগা করা, গাছসহ টব এক স্থান থেকে সরিয়ে অন্য স্থানে রাখা, পানি দেওয়া, ওষুধ স্প্রে করার মতো কাজগুলো নিয়মিত যদি করা হয়, তাহলে আলাদা করে ওয়ার্কআউটের প্রয়োজন হবে না।

আত্মার খোরাক

বিদেশীরা আদর করে বাগান করার প্রশান্তিকে বলছে ‘গার্ডেনিং গ্লো’। অর্থাৎ যারা বাগান করেন, বাগানের পেছনে সময় দেন, তাদের মানসিক অশান্তি, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা এগুলো অনেক কমে যায়। এতে করে খুব সহজেই চেহারায় প্রাণোচ্ছলতা ফুটে ওঠে। চেহারায় ভালো থাকার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠাকেই বলা হচ্ছে গার্ডেনিং গ্লো। পাশাপাশি বাগানে দীর্ঘদিন পরিশ্রমের পর কাঙ্ক্ষিত ফল, ফুল, সবজির দেখা মিললে যে ভালোলাগা কাজ করে, তার প্রতিফলন শুধু চেহারাতেই নয়, মন শরীরে কাজ করে।

garden

কমে যায় হৃদরোগের ঝুঁকি

যদিও বাগান করা খুব বেশি পরিশ্রমের কাজ নয়, তবে এটাও হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে দারুণ কাজ করে। এমনকি ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিন এর তথ্যানুসারে নিয়মিত বাগানে কাজ করার ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায় অন্তত ৩০ শতাংশ। তবে এর মাত্রা আরও বাড়ানো সম্ভব বাগানে কাজ করার পাশাপাশি দৈনিক ৩০ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করার মাধ্যমে।

বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

বাগান করার ফলে হাতে, নখের ভেতরে মাটি, সার, ময়লা প্রবেশ করবেই। এটাকে সাধারণ দৃষ্টিতে অস্বাস্থ্যকর মনে হলেও বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছে, এটাই সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে কাজ করবে। বাগানে নিয়মিত কাজ করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়, ঠান্ডা ও ইনফেকশনের সমস্যা কম দেখা দেয়। ইউনিভার্সিটি অব কোপেনহেগেনের গবেষক দল আরও বলছে, এতে করে অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাবও কমে আসে অনেকটা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর