পরিচিত বিভিন্ন ধরনের বাদামের মাঝে পেস্তা বাদাম অন্যতম। তবে পেস্তা আদতে একটি ফল, যার বীজগুলোকে খেয়ে থাকি আমরা। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, আঁশ, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই বাদামটি স্বাস্থ্য উপকারিতা ও সুস্বাদের জন্য বেশ পরিচিত। অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি চোখ ও হৃদযন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হওয়ায় চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে পেস্তা বাদাম রাখার জন্য।
দ্রবণীয় আঁশের চমৎকার উৎস হলো পেস্তা বাদাম। এ কারণে পেস্তা বাদাম গ্রহণে পাকস্থলিস্থ খাদ্য ভালোভাবে পরিপাক হতে পারে এবং এতে করে কোলন সুস্থ থাকে। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার থাকলে বাওয়েল মুভমেন্ট ঠিকভাবে হয়। যেহেতু পেস্তা বাদাম থেকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ পাওয়া যায়, বাওয়েল মুভমেন্টের জন্য এই বাদাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
প্রাকৃতিক সকল বাদামই উপকারী ও স্বাস্থ্যকর। তবে শুধুমাত্র পেস্তা বাদাম থেকেইই পাওয়া যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যারোটেনয়েডস (Carotenoids) যা Zeaxanthin ও Lutein নামে পরিচিত। দ্রবণীয় ক্যারোটেনয়েডস অন্যান্য শারীরিক উপকারিতার সাথে চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনে।
Zeaxanthin ও Lutein নামক ক্যারোটেনয়েডস চোখের লেন্স ও রেটিনায় উপস্থিত থাকে। এ কারণে এপিডেমিওলোজিক্যাল স্টাডিস এর ফলাফল থেকে জানানো হয় যে, ক্যারোটেনয়েডস সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান বয়সজনিত চোখের সমস্যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে স্লথ ক্লরে দেয়।
খুব দারুনভাবেই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে পেস্তা বাদাম। মূলত উপকারী এই বাদামটি গ্লাইকেশন (Glycation) প্রক্রিয়ার হারকে কমিয়ে আনে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
বেটা-ক্যারোটিন, লুটিন ও গামা-টকোফেরলসহ চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস হল পেস্তা বাদাম। বেটা-ক্যারোটিন ও গামা-টকোফেরল যথাক্রমে ভিটামিন- এ ও ই এর অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। এদিকে ভিটামিন-এ ও ই উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ত হিসেবে কাজ করে এবং অক্সিডেটিভ ড্যামেজের বিরুদ্ধে কাজ করে।
সঠিক পরিমাণ পেস্তা বাদাম গ্রহণ হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের অন্যতম উৎস হওয়ার দরুন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা কমাতে কাজ করে পেস্তা বাদাম। এই খারাপ কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক থেকে শুরু করে যাবতীয় হৃদরোগ দেখা দেওয়ার অন্যতম বড় একটি কারণ।
অবশ্যই শুধুমাত্র পেস্তা বাদাম নিয়মিত খাওয়ার ফলে হৃদরোগ দূরে থাকবে, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে দৈনিক খাদ্যাভ্যাসে উপকারী খাদ্য উপাদানের সাথে পেস্তা বাদাম রাখতে পারলে উপকার পাওয়া যাবে অনেকখানি।
বেশ কিছু গবেষণার ফল জানাচ্ছে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই বাদাম খুব ভালো কাজ করে। ফলে হৃদরোগে আক্রান্তদের নিয়মিত ৬-৭টি পেস্তা বাদাম গ্রহণের পরামর্শ দেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ পেস্তা বাদাম গ্রহণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মূলত এতে থাকা ভিটামিন-বি৬ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দৃঢ় করতে ও সঠিকভাবে কার্যকর করতে কাজ করে। এছাড়া উপকারী এই বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর।