হুট করেই বেড়ে গেছে ফ্লু ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা ও জ্বরের প্রকোপ। স্বাভাবিকভাবে জ্বরের ধাক্কায় সহজেই শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে অল্প কিছুদিনের মাঝেই। কারণ এ সময়ে খাবারে রুচি থাকে না একদম। যে কারণে জ্বর ও জ্বর পরবর্তী সময়টাতে খাদ্যাভ্যাসের উপর নজর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।
এ সময়টাতে এমন কিছু খাবার গ্রহণ করতে হবে, যা একইসাথে শরীরকে সবল রাখতে, শরীরে পানির মাত্রা ধরে রাখতে এবং দ্রুত সুস্থতার দিকে নিয়ে যেতে কাজ করবে। পরিচিত ও সহজলভ্য এমন কিছু খাদ্য উপাদান থাকছে এই তালিকায়।
অসুস্থতার সময়ে শরীর নাজুক হয়ে পড়ার দরুন যথাসম্ভব পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহণ করা জরুরি। সেক্ষেত্রে সবুজ শাক সবচেয়ে উপকারী উৎস। বিশেষত কচুশাক ও লেটুস থেকে পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-এ, সি, কে, মিনারেল, ফলেট ও আঁশ। সেই সাথে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহকে প্রতিরোধ করতে কার্যকর হওয়ায় ঠান্ডার সমস্যায় যেকোন ধরনের প্রদাহকে কমাতে উপকারী ভূমিকা রাখে।
অসুস্থতার সময়ে শরীরে পানির ঘাটতি হয় সবচেয়ে বেশি। বিশেষত জ্বরের সময়ে নানা কারণে দেখা দেয় পানিশূন্যতার সমস্যাটি। জ্বরের উত্তাপ, ঘাম, বমি, পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গগুলো সহজেই শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানিকে বের করে দেয়। এতে করে শুধু আর্দ্রতার হার নয়, কমে যায় ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রাও।
পানি এ সময়ে আবশ্যক উপাদান হলেও, এর সাথে কচি ডাবের পানিকেও সাথে রাখতে হবে মনে করে। ডাবের পানিতে দ্রবণীয় উপকারী মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সতেজ রাখবে। এছাড়া ডাবের পানি পেট ফাপাভাব কমাতেও কাজ করে, যা জ্বরের অন্যতম একটি প্রাদুর্ভাব।
শরীর অসুস্থ থাকলে এবং জ্বরের মুখে কোন খাবারই খেতে রুচি হয় না একদম। তবে এ সময়ে তরল মুরগির স্যুপ খাওয়া যাবে সহজেই। খাওয়ার সুবিধা তো আছেই, সাথে রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতাও। ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন ও আঁশ সমৃদ্ধ মুরগির মাংসের স্যুপ বলদায়ক একটি খাবার। এছাড়া বেশ কয়েকটি পরীক্ষার ফল থেকে দেখা গেছে, অন্যান্য যেকোন তরলের চাইতে গরম মুরগির স্যুপ পানে বন্ধ নাকের সমস্যা দ্রুত ভালো হয়।
তবে ডাক্তাররা অসুস্থতার সময়ে মুরগির স্যুপ পানের পরামর্শ দেন এর অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাবের জন্য।
প্রাকৃতিক এই একটি উপদান থেকেই প্রায় সকল ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা একসাথে পাওয়া সম্ভব। শত বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্মূলের জন্য অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিফাংগাল প্রভাব সমৃদ্ধ মেডিসিনাল এই উদ্ভিজ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় করায় রসুন চমৎকার এক উপাদান। এদিকে বেশ কিছু হিউম্যান স্টাডিজ থেকে দেখা গেছে, রসুন সাধারণ ঠান্ডা, জ্বর ও ফ্লুয়ের সমস্যা কমাতে লক্ষণীয় ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
ঠান্ডা-জ্বরের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেখা দেয় গরম চায়ের। অসুস্থতার সময়ে ধোঁয়াওঠা এক মগ চা যেন প্রশান্তি এনে দেয় অনেকখানি। মুরগির স্যুপের মত গরম চা পানেও বন্ধ নাকের সমস্যা কমে যায়। সেই সাথে সাইনাসের সমস্যা কমাতেও চা বিশেষ উপকারী। অনেকে চা পানের ব্যাপারে সতর্ক থাকেন এতে উপস্থিত ক্যাফেইনের জন্য। তবে চায়ে ক্যাফেইন থাকে খুবই স্বল্প পরিমাণে, ফলে পানিশূন্যতার সমস্যাটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
চায়ে থাকা ট্যানিন হল এক প্রকারের পলিফেলন। যা একইসাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান হিসেবে কাজ করে। ঠান্ডা-জ্বরের ক্ষেত্রে রঙ চা, লেবু চা, আদা চা সবচেয়ে উপকারী।