হালকা থেকে মাঝারি ধরনের করোনাভাইরাসের প্রভাবের ক্ষেত্রে প্রথমে গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা লোপ পায় এবং পরবর্তীতে স্বাদের। কোভিড-১৯ এর সবচেয়ে প্রাথমিক ও ব্যতিক্রমী লক্ষণ হল এটা।
সিএনএন’র চিফ মেডিক্যাল করেসপন্ডেন্ট ডঃ সঞ্জয় গুপ্তা বলেন, ‘এটাকে বলা হয় অ্যানোজমিয়া (Anosmia), যার ফলে রোগীদের গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়। যার সাথে খাবারের স্বাদ, ক্ষুধাভাব কমে যাওয়া সম্পর্কিত।’
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষণগুলো হল জ্বর, কাশি, নিঃশ্বাসের সমস্যা। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পরিসংখ্যান থেকে উঠে এসেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্ততপক্ষে ৩০ শতাংশ করোনাভাইরাসের রোগী গন্ধ না পাওয়ার সমস্যায় ভুগেছেন। এছাড়া জার্মানিতে প্রতি তিনজনে দুইজনের মাঝেই অ্যানোজমিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।
অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অব ওটাল্যারিঙ্গওলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি এবং মার্কিন যুক্তরাজ্যের ইএনটি ইউকে জানাচ্ছে, স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়ার সমস্যাটির সাথে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংযোগ থাকতে পারে।
গন্ধ না পাওয়ার বিষয়টি হুট করে চিহ্নিত করা এবং বোঝা সম্ভব হয় না। এই সমস্যাটিকে দ্রুত বুঝতে পারার জন্য ‘জেলিবিন টেস্ট’ নামক একটি পরীক্ষা বের করা হয়েছে। জেলিবিন হল এক ধরনের ফ্লেভার্ড সুগার ক্যান্ডি। তবে পরীক্ষাটি শুধু জেলিবিন নয়, অন্য যেকোন খাবারের সাহায্যেও করা যাবে।
পরীক্ষাটির জন্য একহাতে একটি জেলিবিন নিয়ে অন্য হাতের সাহায্যে শক্তভাবে নাক চেপে ধরে রাখতে হবে। এ অবস্থাতেই জেলিবিন মুখে দিয়ে চিবাতে হবে। জেলিবিনের মিষ্টিভাব পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়লে ধীরে নাক খুলতে হবে। নাক খোলার সাথে সাথেই জেলিবিনের ফ্লেভার ও গন্ধ এসে ধাক্কা দিবে ইন্দ্রিয়তে। তখন বোঝা যাবে যে জেলিবিনটি আসলে কোন ফ্লেভারের ছিল, কারণ তখন তার গন্ধ নাক গ্রহণ করতে পারবে। বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াটির নাম দিয়েছেন রেট্রো নাসাল অলফ্যাকশন।
অবশ্যই সকল ক্ষেত্রে গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা হারানোর সাথে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নয়। সাধারণ ঠান্ডার সমস্যা, সর্দি ও ফ্লু থেকেও এই সমস্যাটি দেখা দেয় এবং কিছুদিনের মাঝে ঠিকও হয়ে যায়। এছাড়া নাসাল পলিপ, টিউমার, ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি অথবা হেড ট্রমা থেকেও এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
তবে যদি কোন কারণ ও সমস্যা ছাড়া হুট করেই গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা লোপ পায়, সেক্ষেত্রে সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। নিউইয়র্কের ল্যাংগন হেলথের স্লিপ ওটাল্যারিঙ্গওলজি বিভাগের ডিরেক্টর এবং নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডঃ এরিক ভয়েজ বলেন, ‘কারণ ব্যতীত গন্ধ না পাওয়ার সমস্যার ক্ষেত্রে রোগীর দ্রুত আইসোলেশনে যেতে হবে এবং অন্যদের কাছ থেকেও দূরে থাকতে হবে। সেই সাথে যত দ্রুত সম্ভব করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করাতে হবে।’