বৈশ্বিক মহামারী বলতে এক নামেই সবাই জানেন করোনাভাইরাসের কথা। পুরো বিশ্বকে স্থবির করে দেওয়া বায়ু ও ভাইরাসবাহিত ছোঁয়াচে এই রোগটি ধস নামাচ্ছে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেও। কালে কালে বহু মহামারী এসেছে, চলেও গেছে। কিন্তু অন্যান্য মহামারীকালীন সময়ের চেয়ে করোনাকালীন সময় ও তার প্রভাব বেশ কিছু বিষয়ে ব্যতিক্রম। এই বিষয়টিকেই তুলে আনা হয়েছে আজকের ফিচারে।
সাধারণত যেকোন এপিডেমিক তথা মহামারীকে কার্ভ ও ওয়েভ এই দুইটি টার্মের মাধ্যমে ব্যাখা করা হয়। ভারতের চিকিৎসক ও প্রাক্তন এপিডেমিলজিস্ট ন্যাভাল আসিজা বলেন, ‘যে মহামারী কয়েকটি ওয়েভের পর থেমে যায় তাতে মানুষ আক্রান্ত হয় এবং এরপর নিজ থেকে তার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। ফলে এর বিস্তার বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রতিটি ভাইরাসেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট রয়েছে। যা মানুষের লিঙ্গ, বয়স, দেশের আবহাওয়া ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সেদিক থেকে বর্তমানে আমরা সবাই করোনাভাইরাস মহামারীর ভেতরে অবস্থান করছি। ফলে নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না এই ভাইরাসটির বিস্তার কতদিন পর্যন্ত বহাল থাকবে।’
করোনাভাইরাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান বৈশিষ্টটি হল, দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কোনভাবেই বুঝতে না পারা যে কোন ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। এপিডেমিলজিস্ট ডিমিট্যার ম্যারিনভ, এমডি, পিএইচডি জানাচ্ছেন, মূলত এ কারণেই দেশের পর দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর ইনকিউবেশন (রোগজীবাণুর উন্মেষপর্ব) অন্যান্য যেকোন মহামারীর চাইতে অনেক বেশি। সাধারণত ৫-৭ দিন হলেও তা ১৪ দিন পর্যন্তও গড়াতে পারে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝে ওঠার আগেই অন্যদেরকে আক্রান্ত করে ফেলে এবং এভাবেই প্রবল হারে বিস্তার পাচ্ছে করোনা।’
এখনও বহু দেশে বিস্তার পাচ্ছে করোনাভাইরাস এবং এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসকালীন সময় পার হয়নি। এ সময়ের ভেতর দিয়েই এখন সবাইকে যেতে হচ্ছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নতুন মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিন। ফলে এ মুহূর্তে মৃত্যুর সংখ্যা বা হারের মাত্রা নির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সোয়াইন ফ্লুয়ের চাইতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার বেশি। তবে যে মহামারিতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল সেটা ছিল ১৯১৮ সালের ফ্লু, যাকে স্প্যানিশ ফ্লুও বলা হয়ে থাকে। এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৫০০ মিলিয়ন মানুষ।
মার্কেট ও সাপ্লাই চেইনের পর্যবেক্ষন অনুসারে, অন্যান্য যেকোন মহামারীর চাইতে করোনাভাইরাস মহামারীতে তথ্য ছড়িয়েছে সবচেয়ে দ্রুত। এই তথ্যের ভেতর সঠিক তথ্য ও ভ্রান্ত তথ্যের মিশ্রণ রয়েছে সমানভাবে। যার ফলে ভাইরাসটি নিয়ে তৈরি হয়ে ও বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক।
বয়স ভেদে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে কোভিড-১৯ ভাইরাসে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ও তার প্রভাবে মাত্রা সবচেয়ে বেশি। তবে যখনই অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগের সাথে তুলনায় আসা হয়, তখনই বোঝা যায় যে করোনাভাইরাস ব্যতিক্রম। ধরা যাক ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা। শিশু ও বয়স্কের মাঝে আক্রান্তের মাত্রা বেশি হলেও, তরুণদের মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা খুবই নগণ্য। যার মূল কারণ শরীরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সেদিক থেকে করোনাভাইরাসের সাথে মানুষের পরিচিতি ঘটেছে একেবারেই সাম্প্রতিক সময়ে। এতে করে কোন নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের মাঝেই এর বিরুদ্ধে কাজ করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেই সাথে এখনও পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য বের হয় করোনা প্রতিরোধে কাজ করার মত ভ্যাকসিন। এই দুইটি বিষয় ভাইরাসটির দ্রুত বিস্তারে সহায়ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।