ডিপ্রেশন। ছোট এই শব্দটির ওজন অনেক বেশি। যে ওজন অনেকের জন্য জীবনের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতাকে যতটা তাচ্ছিল্য কিংবা ছোট করে দেখা হয়, মানসিক এই সমস্যাটি ততখানি বড় ও নেতিবাচক প্রভাব রাখে মানুষের জীবনে।
একজন বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষ মাত্রই জানেন, এটা শুধুমাত্র হালকা মন খারাপ ভাব নয়। কখনো মন ভালো থাকা, কখনো খারাপ- স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু প্রতিদিনের জীবনের অনেক বড় একটি অংশ যখন মন খারাপের কালো চাদরে ঢেকে যায়, তখনই দেখা দেয় বিষণ্ণতা।
বিষণ্ণতা থেকে বের হওয়ার জন্য প্রফেশনাল সাইক্রিয়াটিস্টের কাছ থেকে পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা, থেরাপি ও ওষুধ খাওয়ার নিয়ম গ্রহণ করে সবকিছু সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। কিন্তু এখানে একটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন খুব বেশি- বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষটির আশেপাশের মানুষদের ব্যবহার ও আচরণ। এখনও আমাদের সমাজে মানসিক সমস্যাকে হালকাভাবে, মজাচ্ছলে দেখা হয়। অথচ আত্মহত্যার ৫০ শতাংশ মানুষই বিষণ্ণতায় ভোগেন। একজন বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের কাছের মানুষগুলোর তার প্রতি আচরণ কেমন হওয়া প্রয়োজন? সেটাই তুলে আনা হয়েছে এই ফিচারে।
শুধু বিষণ্ণতা নয়, যেকোন অসুস্থ মানুষের প্রতি আচরণে সহানুভূতিশীল হতে হবে। শারীরিক কিংবা মানসিক, অসুস্থতা একজন মানুষকে দুর্বল করে দেয়। এ সময়ে তার কাছের মানুষদের কাছ থেকে সমবেদনামূলক আচরণ দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তিকে অনেকখানি মানসিক শান্তি ও শক্তি যোগাতে কাজ করে। চিকিৎসা বা থেরাপি যতখানি জরুরি, কাছের মানুষদের ভালবাসা ও অনুভূতিপ্রবণ আচরণও ঠিক ততখানিই গুরুত্বপূর্ণ।
বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষের আচরণে পরিবর্তন চলে আসে। তার মাঝে বিরক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাবে। হুট কিরে রেগে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেবে। এমনকি সময়ে সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণও প্রকাশ পাবে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়গুলোকে ভুল দৃষ্টিতে দেখা হয়, বিষণ্ণতায় ভোগা মানুষকে ভুল বোঝা যায়। যা তার জন্য আরও বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তাকে বোঝার চেষ্টা করা, তার সাথে কথা বলা, তার সঙ্গে হুটহাট মন-মেজাজ পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করলে অনেকখানি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়।
বিষণ্ণ ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ও তাকে বোঝার জন্য প্রচুর ধৈর্য প্রয়োজন। ডিপ্রেশন জ্বর নয় যে দুই-তিন দিনের মাঝেই ভালো হয়ে যাবে। সঠিক চিকিৎসা, থেরাপি ও ওষুধ গ্রহণের পরেও কয়েক মাস সময় প্রয়োজন হয় বিষণ্ণতাকে পেছনে ফেলে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য। তার পরিবর্তনের সময় পাশে থাকা, তাকে বোঝা এবং সাহস দেওয়া চিকিৎসার মতই প্রয়োজনীয় বিষয়। সময়ে সময়ে মনে হবে ধৈর্য ধরে রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়টিকে যথাসম্ভব মাথা থেকে দূরে রেখে বিষণ্ণ ব্যক্তির পাশে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
ডিপ্রেশনের পেছনে বহু কারণ, ঘটনা থাকে। যার বেশিরভাগই থেকে যায় অনুচ্চারিত। না বলা কথাগুলোই প্রবলভাবে বিষণ্ণতাকে বাড়িয়ে দেয়। বিষণ্ণ ব্যক্তির সাথে কথা বলা চাইতেও বেশি জরুরি তাদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা ও বোঝা। তাদের সব কথা যুক্তিসম্মত কিংবা আপনার মনমতো হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্ত্য তাদের কথাগুলো শুনে তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করাও অনেকটা ইতিবাচক প্রভাব রাখে।