এবছর শেষ হওয়ার দোরগোড়ায়। ২০১৯ সাল ছিল টুইটারের রাজনীতির হটকেক। টুইট করতে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই ভারতের মোদী। কিন্তু আমাদের দেশে টুইটারের রাজনীতি এখনো তেমন জমে ওঠেনি। টুইটারের রাজনীতি যদিও কয়েকবছর আগে শুরু তবু ২৬ ডিসেম্বর মেডিসন জার্নাল জানিয়েছে ২০১৯ সালেই বেশি হয়েছে টুইটারের রাজনীতি। মোদী ও ইমরান কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে ঝাঁঝালো টুইটার যুদ্ধে নেমেছিলেন।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার নিজেদের সাইটে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে গত অক্টোবরে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি এক টুইট বার্তায় এ ঘোষণা দেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের ভুল তথ্য দেওয়া বিষয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখে তারা এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় প্রধান নির্বাহী জ্যাক ডরসি বলেন, “যাচাই না করে বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং একেবারে ভুয়া খবর পরিবেশনের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান সমস্যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।”
একটি নতুন নীতিমালা করার কথা জানিয়ে ডরসি বলেন, “টুইটারের নতুন নীতিমালায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হবে। নীতিমালার বিস্তারিত আগামী মাসে প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু রাজনীতিবিদরা এসবের তোয়াক্কা করলে তো!”
ইন্ডিয়া টুডে টিভির পরামর্শক সম্পাদক রাজদীপ সারদেশাই গত শুক্রবার ভারতের ‘স্ক্রল ডটইনে’ এক প্রতিবেদনে জানান এবছর ভারতে সাধারণ নির্বাচনের আগে ফেসবুক ও টুইটারে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলেন মোদী। ফেসবুকে ভেরিফায়েড ‘নরেন্দ্র মোদী’ নামে তাঁর ব্যক্তিগত পেজে ৪ কোটি ৪৪ লাখ লাইক রয়েছে। টুইটারেও ৫ কোটির ২১ লাখের বেশি অনুসারী নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরেই সবচেয়ে অনুসারী নেতা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মোদী। ইউটিউবে তার ১২০০’র বেশি ভিডিও রয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ইনস্টাগ্রামে ৩ কোটি ফলোয়ার পার হয়েছে।
মোদীর রয়েছে একদল পেশাদার ডিজিটাল মার্কেটিং কর্মী। ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জয়জিত পাল বলছেন, “মোদীর আগে ভারতের কোনো রাজনৈতিক নেতাই স্যোশাল মিডিয়ায় এমন সক্রিয় ছিলেন না। তবে সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে প্রধানমন্ত্রী অফিস।”
এবছর নির্বাচনের আগে ‘হ্যাশট্যাগ ম্যায়ভি চৌকিদার’ পেজ খুলেছিলেন। বিজেপির আইটি ও সোশ্যাল মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অমিত মালব্য বলেন, “২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার সোশ্যাল মিডিয়া স্বেচ্ছাসেবীর একটি টিম দাঁড় করান এবং ৫০ হাজারের বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ও শেয়ারচ্যাট গ্রুপ তৈরি করেন। কয়েক বছর আগে টুইটারে যোগ দেওয়ার পরামর্শ হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আর চলতি বছর বিজেপির নির্বাচনি স্লোগান ‘আব কি বার মোদী সরকার’ ছিল ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় টুইট। ফলাফল এখন সবারই জানা।”
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো, বিশেষ করে টুইটার রাজনীতিবিদ এবং প্রচার মাধ্যমগুলোর কাছে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টুইটার ইনকর্পোরেটেড জানিয়েছে, ভারতে ব্যবহৃত কৌশলগুলো অন্যান্য দেশের নির্বাচনেও কাজে লাগিয়েছে তারা।
সামাজিক যোগাযোগের আরেক জনপ্রিয় সাইট ফেসবুকও এর আগে একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল। ভারতে টুইটারের মার্কেট ডাইরেক্টর ঋষি জেটলি বলেন, “টুইটার কতটা ‘ভ্যালু অ্যাড’ করতে পারে তা দেখার জন্য নির্বাচন সবচেয়ে ভালো সময়। ভারতীয় নির্বাচনে আমরা যা শিখেছি, তা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই।” ব্রাজিলের আইন প্রণেতাদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ার সম্ভাবনা আর গুরুত্ব তুলে ধরতে ল্যাটিন অ্যামেরিকার এই দেশটিতে উড়াল দিয়েছেন টুইটারের ‘শীর্ষ রাজনৈতিক কৌশলবিদ’। ভারতের মতো ব্রাজিলেও এবার রাজনীতিবিদরা ভোটের লড়াইয়ে ব্যবহার করেছেন ৬ সেকেন্ডের ভিডিও অ্যাপ ‘ভাইন’।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভারতের মতোই ‘টুইট টু রিমেম্বার’ ফিচারটি ব্যবহার করেছেন ভোটাররা। এই ফিচারের মাধ্যমে একটি টুইট করলেই ব্যবহারকারীদের মোবাইল ফোনের ক্যালেন্ডারে ভোটের তারিখটি যুক্ত হয়ে যাবে। রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে টুইটার প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়। এরপর আরব বসন্ত হিসাবে পরিচিতি পাওয়া গণজাগরণের দিনগুলোতে টুইটার ব্যবহার হয় আন্দোলন সংগঠিত করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে।
নির্বাচনে জেতার সাত মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সমাবেশে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি আর টুইটার ব্যবহার করবেন না। কেন? ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বলেছিলেন, “এটা প্রেসিডেন্ট-সুলভ নয়।” মি. ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেমে নেই। কিন্তু হোয়াইট হাউজে প্রবেশের পর তিনি যে শুধু টুইটার ব্যবহার করা অব্যাহত রেখেছেন তা নয়, বরং তিনি এই কাজে প্রচুর সময় দিচ্ছেন। দেখা যাচ্ছে, এবছরে তিনি ২,৬০৮টি টুইট করেছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে সাতটিরও বেশি টুইট করেছেন তিনি। তার কোনো কোনো টুইট খুবই সাধারণ আবার কিছু কিছু বিস্ফোরক ধরনের। পরে তিনি তার টুইটার ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, “এটা আধুনিক কালের প্রেসিডেন্ট-সুলভ।” আর এই কথাটাও তিনি বলেছেন টুইট করেই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতগুলো টুইট করেছেন সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৩২ শতাংশই তিনি করেছেন সকাল ছ’টা থেকে ন’টার মধ্যে। এই সময়েই তিনি টেলিভিশন দেখেন বেশি। কাকতালীয়ভাবে তার জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘ফক্স এন্ড ফ্রেন্ডস’ সকালেই প্রচারিত হয়। ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সাত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন সম্পর্কে মাত্র একবার টুইট করেছেন। এবং সেই টুইটে তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতার প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু তার একমাস পরেই কিম জং আনকে তিনি ‘ম্যাডম্যান’ বা ‘উন্মাদ’ এবং ‘বেটে ও মোটা’ বলে টুইট করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটারে সাবেক অভিনেতা এবং ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সাবেক গভর্নর আর্নল্ড সোয়ার্জনেগারের সাথে বিবাদে লিপ্ত হন। আক্রমণ করেন লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকেও।
বিশ্ব রাজনীতিতে আমাদের দেশেও টুইটারের রাজনীতি চলছে। এক্ষেত্রে এগিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি এবছর ২০০টির কাছাকাছি টুইট করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুইটারের রাজনীতিতে নেই। নেই বিএনপিও। এদিক থেকে টুইটারের রাজনীতিতে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।