মেজর টি. আই. এম. নূরুন নবী ও মেজর জাহাঙ্গীর তখন রাজউক অ্যানেক্স বিল্ডিং-এ গালফ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তা বছর পয়ত্রিশেক আগে তো বটেই। তখন থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের সখ্য। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে ‘অর্থকথা’ বহু প্রথমের পথিকৃৎ, অর্থকথা কার্যালয়ে ২X৮ লাইনের পিএবিএক্স এক্সচেঞ্জ স্থাপনের কাজটি সহজ করে দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর ভাই। কোনো ম্যাগাজিন অফিসে পিএবিএক্স সিস্টেম সেটিই প্রথম! ৩২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯১ সালের ঘটনা সেটি।
মাঝে দীর্ঘ সময় চলে গেছে। জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হলেও নবী ভাইয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া খুব ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত এই দুই মেজর সাহেবের ব্যবসায়ীক পার্টনারশিপও খুব দীর্ঘ হয়নি। পরবর্তী সময়ে নবী ভাই একক মালিকানায় ব্যবসা গ্রুপ গড়ে তোলেন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে।
হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত ফেসবুকের কল্যাণে নবী ভাইয়ের সাথে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হলো, মাঝে মাঝে কথা শুরু হলো, কথা ছিল এর মধ্যেই হয় উনি আসবেন আমাদের গুলশানের বাসায় অথবা আমি যাবো ওঁদের বারিধারার বাসগৃহে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। হঠাৎ খবর পেলাম নবী ভাই ওপেন হার্ট সার্জারির জন্যে ব্যাংকক যাচ্ছেন। আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে ২০১৫ সালে, তখন থেকেই কারো সিএবিজি’র খবর আমাকে কিছুটা হলেও উচ্চকিত করে, তার উপর এবারকারটা প্রিয় নবী ভাইয়ের!
পরশু খবর পেলাম ব্যাংককে নবী ভাইয়ের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। গতকাল তেমন কোনো আপডেট ছিল না, রুটিন প্রসিডিওর অনুযায়ী ওকে সিসিইউ অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর ছাড়া। ৪ জুলাই সকালে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদটি এলো, নবী ভাই ইন্তেকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজীউন।
জীবনের পরিসমাপ্তি মৃত্যুতে, একথা সর্বজনবিদিত, তারপরও মন মানতে চায় না। মানুষের চলে যাওয়ায় আমরা ব্যথিত হই, কাঁদি, জীবনের সৌন্দর্য সম্ভবতঃ এখানেই। নবী ভাই সবদিক থেকে একজন অভিজাত ব্যক্তি ছিলেন। সেনাবাহিনীর চৌকশ অফিসার থেকে পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ী, সবজায়গায় ছিল নবী ভাইয়ের রূচির ছোঁয়া।
পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানআহু ওয়া তা’আলা নবী ভাইকে জান্নাত নসীব করুন, তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই বেদনাভার বহনের ও ধৈর্য ধারণের শক্তি দিন। আমীন, সুম্মাহ্ আমীন...
লেখক: সৈয়দ রানা মুস্তফী, জাতীয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব