সন্ধ্যা ৭টা। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। হালকা শীত। আড়াই বছরের ছেলে আয়ানকে নিয়ে টিভি দেখছি। একটু পর জরোসরো হয়ে কাছে এসে আয়ান জানতে চায়, বাবা এটা কীসের শব্দ? টিভির শব্দ মিউট করে বুঝতে পারি কান্নার শব্দ। ড্রয়িং রুমের ব্যালকোনিতে গিয়ে দেখি আশপাশের ফ্ল্যাটের মানুষজনও বুঝতে চেষ্টা করছেন কোন বাসা থেকে আসছে শব্দটি। ক্রমেই বাড়ছে কান্নার আওয়াজ! বুক ফাটিয়ে কান্না।
চা হাতে বউ এসে বলে, এ কান্না সাধারণ কান্না নয়, এটি নিশ্চয় স্বজন হারানোর কান্না। দ্রুত নিচে গিয়ে খোঁজ নাও। বউয়ের কথা শুনে বুকটা ধুক করে ওঠে। কার স্বজন চলে গেলো এই বৃষ্টি দিনে! আমার আর চা খাওয়া হয় না। দ্রুত ট্রাউজার পরে রওয়ানা হই। লিফটের ভরসা না করে সিঁড়ি দিয়েই নামতে থাকি।
বিজ্ঞাপন
পাঁচ তলা থেকে চার তলা নামতেই, ক্রমেই কান্না আর দরজা ধাক্কার শব্দ বেড়েই যাচ্ছে। তিন তলা আর দোতলা যেতেই হৈহুল্লোড় আর নিচতলা যেতেই দেখতে পাই মানুষে বোঝাই করিডোর। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক! কি হয়েছে? জানতে চাওয়া মাত্রই কেয়ারটেকার বলেন, ঝুলে রইছে ছেলেটি! মানে? প্রশ্ন করতেই তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন করিডোরের পাশেই একটি জানালার কাছে।
জানালা দিয়ে তাকাতেই আমার বুকের কোথাও চিন চিন করে ওঠে। গ্রিলিরের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে রয়েছে একটি ছেলে। গলায় গামছা; হাত দুটির মুঠো শক্ত করে রাখা। ওই পাশে দরজা খোলার আপ্রাণ চেষ্টা আর গগণ-বিদারি কান্নার শব্দে আমার সম্মিত ফিরে আসে। আমি কেয়ারটেকারকে দ্রুত গ্রিল কাটার মেশিন আনতে বলি।
বিজ্ঞাপন
এই সময়ে কি করা যায়? এদিক সেদিক পায়চারি করে ভাসানটেক থানায় ফোন দিই। কিন্তু ফোনের নম্বরটি বন্ধ পাই। দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ এ ফোন দিই। তাদেরকে লোকেশন ভাসানটেক থানার কথা বলা হলেও তারা আমাকে ক্যান্টনমেন্ট থানায় এড করিয়ে দেন। ঘটনা বলার পর তারা পুলিশ পাঠাচ্ছে বলে জানান।
বাগানবাড়ির এই বাসায় প্রায় দুই বছর ধরে থাকি। এর আগে কি আমি ছেলেটিকে দেখেছি? চেনার চেষ্টা করি। কিন্তু মনে করতে পারি না। করিডোরে পায়চারি করতে থাকা এক ছেলে আমাকে জানান, ছেলেটির নাম মেহেদি। তার ফুপাতো ভাই। ইংলিশ সাবজেক্ট নিয়ে এবার ইউনিভার্সটিতে ভর্তি হয়েছে। এখানে মায়ের সঙ্গে থাকে, তার বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন। বিকেলে কি নিয়ে যেন মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে মেহেদির।
এরই মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট থানার একজন এসআই আমাকে ফোন দেন। আমি তাকে লোকেশনের কথা জানালে তিনি আমাকে ওয়েটিংয়ে রেখেই ওয়্যারলেসে ভাসানটেক থানায় ইনফরম করেন।
এই সিচুয়েশনে আসলে কি করা দরকার? বাগানবাড়ির ইউনাইটেড হোমসে প্রায় ৪০টি ফ্ল্যাট। অনেকেই নিচের করিডোরে চলে এসেছেন; সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আরো পরিচিত অনেকেই। আমি পায়চারি করছি। হালকা শীতের মধ্যেও ঘেমে একাকার হচ্ছি।
মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, উশকো খুশকো চুল, কালো রঙের ফুল স্লিপ টিশার্ট আর ক্যামোফ্লেজ কার্গো প্যান্ট পরা ছেলেটির সেই ঝুলে থাকার দৃশ্যটি মাথা থেকে সরাতে পারছি না। ছেলেটি কি এখনও বেঁচে আছে? তাহলে দরজা খুলতে না পারা কিংবা জানালার গ্রিল কাটতে না পারার জন্য তো আমরা দায়ী? আমি দৌড়াতে থাকি গ্রিল কাটার মেশিনের খোঁজে।
ফ্ল্যাট মালিকদের পরিচিত অনেকেই বলেন, ঘটনা ঘটেছে অনেক আগে। ছেলেটি এতোক্ষণ আর বেঁচে নেই। পুলিশ আসার পরই দরজা খোলা উচিত। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রই। বুকের ভেতর কোথায় যে চিন চিন করছে বুঝতে পারি না। পাঁচতলার সাজ্জাদ ভাই এসে জানতে চান? কি হয়েছে? তাকে কিচ্ছুই বলতে পারি না। পা কাঁপতে থাকে।
এই সময়ে আসলে কি করার আছে? ভাবতে ভাবতেই পুলিশের গাড়ি চলে আসে। মেহেদির সেই ক্যামোফ্লেজের কার্গো প্যান্ট, ফুল হাতায় সাদা স্ট্রেপের টিশার্ট আর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ফাঁকে শক্ত করে ধরে রাখা দুই হাতের মুঠির মধ্যে আসলে কী আছে? রাজ্যের যত রাগ? যত অভিমান? যত ক্ষোভ? যত হতাশা? আমি হিসাব মিলাতে পারি না!
৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এবারের প্রতিপাদ্য ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করি, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি’- যা প্রত্যেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ম্যাসেজের মাধ্যমেও এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া প্রতিবছরই এদিনটিকে ঘিরে সারাদেশেই নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। বাস্তবে কতটা সফল হচ্ছে এসব প্রচেষ্টা। ঠিক এসবের বিপরীত তথ্যই মিলছে গাইবান্ধায়!
বেশি মুনাফার লোভে নিশ্চিত ক্ষতি জেনেও গাইবান্ধায় চাষ করা হচ্ছে তামাক। জেলায় উৎপাদন যোগ্য অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাষাবাদে কম খরচ, তামাক ক্রয়কারী কোম্পানিগুলোর প্রলোভন, উৎপাদিত তামাক পণ্য বিক্রয়ের আগাম নিশ্চয়তা এবং বেশি মুনাফার লোভের কারণে জেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তামাকের আবাদ।
যদিও কৃষি বিভাগেরর দাবি- তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে অন্যান্য ফসল চাষাবাবাদে প্রণোদনা দেওয়ায় দিন দিন কমছে তামাকের আবাদ। তবে বাস্তবে চিত্র ভিন্ন! কমছে তো নয় বরং জেলায় প্রতি বছরেই বাড়ছে বিষবৃক্ষের এই চাষ।
গাইবান্ধা কৃষি বিভাগ, আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) কোম্পানি এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গেল বছর (২০২৩) ১০ হেক্টর অর্থাৎ ৭৫ বিঘা জমিতে চামাকের চাষ হলেও এবছর তার তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৯ হেক্টর অর্থাৎ ২শ ১৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে তামাকের। এর বেশিরভাগ চাষ হয়েছে- গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও সাদুল্লাপুর উপজেলায়।
কৃষি বিভাগ এবং কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে চাষাবাদে বেশি সুবিধা পাওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ কারণে চলমান সরকারি প্রণোদনাও কোনো কাজে আসছে না।
তবে, সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, তামাক চাষ কমিয়ে আনতে এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বেশি প্রচার-প্রচারণা এবং কৃষিখাতে আরো বেশি প্রণোদনা বাড়াতে হবে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণার বরাতে স্বাস্থ্য ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তামাক ক্ষেতে কাজ করার সময় একজন তামাক চাষী অজ্ঞাতভাবে দিনে প্রায় ৫০টি সিগারেটের সমপরিমাণ নিকোটিন শোষণ করে থাকেন। এর ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ।
দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলো চাষীদের স্বল্পমেয়াদে কিছু নগদ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে, দীর্ঘমেয়াদে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এছাড়া, অন্যান্য ফসলের তুলনায় তামাকগাছ মাটি থেকে প্রায় আড়াইগুণ বেশি নাইট্রোজেন, সাতগুণ বেশি ফসফরাস এবং আটগুণ বেশি পটাসিয়াম শোষণ করে। এর ফলে তামাক চাষের জমির মাটি থেকে দ্রুত পুষ্টি নিঃশেষ হয়ে মাটিকে অনুর্বর করে তোলে।
তামাক চাষীরা জানিয়েছেন, কোম্পানিগুলো তাদের তামাকের বীজ সরবরাহ, তামাকের বীজবপন এবং তামাকপাতা তোলা পর্যন্ত এমনকী সংরক্ষণ প্রক্রিয়া পর্যন্ত বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে। চাষাবাদে নিয়মিত খোঁজখবর নেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া তামাক চাষে তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি পরিশ্রম হলেও কম সময়ে উৎপাদন এবং এর লাভ (মুনাফা) অন্যান্য ফসলের থেকে অন্তত ৮-১০ গুণ বেশি আর তামাক পাতার ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণেই তামাকের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
তারা জানান, অগ্রহায়ণে তামাকগাছ রোপন করে পাঁচ মাসেই এর পাতা তোলা শুরু হয়। প্রতি বিঘা জমিতে তামাক উৎপাদন হয় কমপক্ষে আট বেল (এক বেল সমান পঞ্চাশ কেজি)। এক বেল তামাকের দাম ৬-৭ হাজার টাকা। সে হিসাবে বিঘাপ্রতি উৎপাদিত তামাকের মূল্য ৫০-৬০ হাজার টাকা, যা উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা।
সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের একবারপুর গ্রামের অনেক পুরাতন তামাক চাষী মুসা মিয়া (৬৫)। গত ছয়-সাত বছর আগে ওই এলাকায় প্রথম তামাক চাষ শুরু করেছেন তিনি।
মুছা মিয়া বলেন, এই এলাকায় আমিই প্রথম তামাক চাষ শুরু করি। তামাকের বীজ কোম্পানি দেয়। বলা যায়, চাষাবাদে বেশিরভাগ খরচই তারা বহন করে। পরে আমরা তামাক পাতা দিয়ে হিসাব করি।
তিনি বলেন, চাষাবাদে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, এজন্য কোম্পানি থেকে আমাকে চশমা, শরীরে পরিধানের জন্য পোশাক ও হাতের গ্লাভস দেওয়া হয়েছে।
মুসা মিয়া জানান, তার এসব সুবিধা পাওয়া দেখে এখন এলাকার অনেকেই তামাক চাষ করছেন। লাভবানও হচ্ছেন। একবিঘা জমিতে ৫/৬ হাজার টাকা খরচ করে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ বাদে আয় হয়।
একই ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে তামাক চাষের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন ওই এলাকার একাধিক চাষী। তাদের মধ্যে একজন আব্দুল মজিদ মিয়া। ওই এলাকায় গেল মওসুমে তিনি প্রথম তামাকের আবাদ শুরু করেন।
মজিদ মিয়া বলেন, গেল মওসুমে প্রথম আমি দুই বিঘা জমিতে তামাক লাগাই। ধানচাষে খরচ বাদে লাভ কিছুই থাকে না। তামাক চাষে ধানের থেকে কয়েকগুণ লাভ বেশি হয়েছে।
তামাকের ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মজিদ বলেন, ‘আমি জানি, তামাক খেলে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়। মানুষ মারা যায়। আমি নেশা বা বিড়ি-সিগারেট খাই না।কিন্তু এটা চাষ লাভজনক, তাই চাষ শুরু করছি’।
তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এক গবেষণার রিপোর্টের বরাতে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুব হোসেন মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তামাকপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে, বাজারজাতকরণ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় একটি সিগারেটের শলাকা মোট ১৪ গ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশে নির্গত হয়। এর ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ! তামাক মূলত হৃৎপিণ্ড, লিভার ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ধূমপানের ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হয়ে থাকে। তামাকের ব্যবহারে ফুসফুস প্যানক্রিয়াস, ল্যারিংস ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি হয়’।
এ সময় তিনি তামাক সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন বাস্তবায়নের প্রতি জোর তাগিদ দেন।
‘পরিবেশ আন্দোলন’ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো তামাক চাষে চাষীদের অগ্রিম টাকাসহ বিভিন্ন সুবিধা দিচ্ছে আর এসব প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা। অনেক কৃষকই এর ক্ষতির দিকটা জানেন না।আবার অনেক সচেতন কৃষক জেনেশুনেও অতিরিক্ত লাভের কারণে এটি চাষ করছেন’।
তিনি বলেন, ‘যে সব চাষী তামাকের নিয়মিত চাষ করে থাকেন, তামাকপাতা চাষের কুফল সম্পর্কে সচেতন করে ধান, পাট, আখ, গম, কলাই, সরিষা ও ভুট্টার মতো ফসল উৎপাদনে তাদের বেশি বেশি প্রণোদনা দিলে এটির চাষাবাদ কমিয়ে আনা যেতে পারে’।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধার উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম সেলফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘তামাক চাষে কৃষকদের কখোনই উদ্বুদ্ধ করা হয় না। তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে ভুট্টা, গম, ধান, পাট, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে’।
এ সময় এত সবের পরেও কেন জেলায় তামাকের আবাদ বাড়ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বেশি সুবিধা বিশেষ করে বীজ, কীটনাশক, পরামর্শ ও চাষাবাদের বিভিন্ন উপকরণসহ বিক্রয়ের নিশ্চয়তা পেয়ে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে, আমরা কমিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি) কোম্পানির পলাশবাড়ির (গাইবান্ধা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হক সেলফোন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অন্যান্য জেলার তুলনায় গাইবান্ধায় তামাকের আবাদ অনেক কম হয়। তবে এখন দিন দিন বাড়ছে’।
তামাক চাষাবাদে চাষীদের কী ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এ প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষকদের লাভবান করতে তাদের স্বল্পমূল্যে বীজসহ নিয়মিত তামাক ক্ষেত পরিদর্শন, তামাক পাতার গুণগত মান ঠিক আছে কি না, সেসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা হয় এবং চাষাবাদে ব্যত্যয় ঘটলে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়া তামাক চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকদের যাতে কোনো শারীরিক ক্ষতি না হয়, এজন্য পরিচর্যার জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কৃষকদের পোশাক, হ্যান্ডগ্লোভস ও চোখের চশমা দেওয়া হয়।
কৃষি ফসলেও এমন সুবিধা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু তার পরেও তামাক চাষী বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে রহস্য কী, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে চাষীরা এই তামাক পণ্য বিক্রয়ের অগ্রিম নিশ্চয়তা পান। চাষাবাদে সব ধরনের উপকরণ এবং সুবিধা আমরা দিয়ে থাকি। শুধু তাই নয়, কৃষকরা আর্থিকভাবে এবং শারীরিকভাবে যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এজন্য তাদের শতভাগ নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) দেওয়া হয়’।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ১৭ জন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলি করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে এ বদলির ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব প্রশাসন-১ মোহাম্মদ ওসমান হায়দার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের এসব সদস্যকে ১১ ডিসেম্বর বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব অর্পণ করে অবিলম্বে বদলি করা কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হলো। এ ছাড়া উল্লিখিত ক্রমিক ৪ ও ৬ নম্বরের বর্ণিত বিচারককে দেওয়ানি অবকাশ শেষে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি বদলি করা কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
যাদের বদলি করা হলো:
১. কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শাবনী সুলতানা পলিকে মেহেরপুরের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
২. কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট মো. জুয়েল রানাকে একই পদে মেহেরপুরের বদলি করা হয়েছে।
৩. নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদকে বদলি করে পঞ্চগড়ের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার করা হয়েছে।
৪. নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীনকে শেরপুরের একই পদে বদলি করা হয়েছে।
৫. লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মোছাম্মৎ নুসরাত জামানকে সিনিয়ার সহকারী জজ হিসেবে ঢাকার আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
৬. লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারেক আজিজকে হবিগঞ্জের সিনিয়ার সহকারী জজ হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
৭. মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমীনকে সহকারী সচিব (সহকারী জজ) হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বদলি করা হয়েছে।
৮. পাবনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল ইসলামকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একই পদে বদলি করা হয়েছে।
৯. নেত্রকোনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেনকে ময়মনসিংহের একই পদে বদলি করা হয়েছে।
১০. হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে মো. জাকির হোসাইন নোয়াখালীতে একই পদে বদলি করা হয়েছে।
১১. খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনাব নয়ন বিশ্বাসকে সাতক্ষীরায় একই পদে বদলি করা হয়েছে।
১২. শেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম খানকে একই পদে রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে।
কল্যাণ রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক শর্ত হচ্ছে, নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সে বাধ্য থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে এমনসব বিষয়ে হাত দেয়া হচ্ছে যেগুলো খুব স্পর্শকাতর। যেমন মসজিদে এসি চালানো যাবে না! (পরে মসজিদ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশোধন করেছেন প্রতিমন্ত্রী) সারা দিনে একটি মসজিদে সর্বোচ্চ দেড়/দুই ঘণ্টার বেশি এসি চলে না। প্রাথমিকভাবে সরকারের ১১টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার একেকটিতে ২ হাজার টনের বেশি এসি চলে! এর মধ্যে পানি ভবনের কথা আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এই ভবনে টয়লেটই আছে ১১৮টি! এ ধরণের আরো অসংখ্য ভবন রয়েছে। এসব ভবনের এসি নিয়ন্ত্রণ করলেই দেশে ১ সেকেন্ডও লোডশেডিং করা লাগবে না এবং দোকানপাটও রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। মানুষের জীবনস্পন্দন সচল থাকবে।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন সক্ষমতা করা হয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি! ঘোড়ার আগে লাগাম জোগাড়ের এই আইডিয়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানা নেই। ফসিল ফিউল বার্নড বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোল ফায়ার্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি খরুচে। আমরা আমাদের নিজস্ব কয়লার বিশাল মজুদ তুলছি না! বাংলাদেশের কয়লার মান উঁচু, মজুদ এতটাই বিশাল যে তা দিয়ে বর্তমানে চালু কয়ালাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতো বটেই, এমনকি ভবিষ্যতে যে ক’টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসছে সেগুলোও চলবে দীর্ঘদিন। এই জুনে অস্ট্রেলিয়া তাদের কয়লার দাম অনেক কমিয়েছে, সেখান থেকে আমদানিও করছি না। অথচ ডিজেলের দাম বাড়ানোর কথা বলে এই নারকীয় গরমের মধ্যে কষ্ট দিচ্ছি দেশের মানুষকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ১লা মার্চ থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্যে স্যুট পরা বন্ধের নির্দেশ দিন। তালপাকা গরমের মধ্যে স্যুট পরে ডাবল এসি দিয়ে সরকারের উপ সচিব থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত লোকজন বসে থাকে! স্যুট পরিধান বন্ধ হলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এসি ব্যবহারে এলিজেবল্ নন এমন হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এসি ব্যবহার করে চলেছেন। এগুলো বন্ধে এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নিন। ফাইভ স্টার হোটেলগুলোকে নির্দেশ দিন হোটেলের অপ্রয়োজনীয় প্রতিটি অংশে যেন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। ভালো সময় ফিরে এলে হলে নর্মস/কমপ্লায়েন্স এসব আবার দেখা যাবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু’র বক্তব্য থেকে জানা গেছে, গত ১০ বছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মনে হতে পারে এত বড় অংকের টাকা, যা দিয়ে আরো ২টি পদ্মা সেতুর মত জিডিপিতে অবদান রাখায় সক্ষম স্থাপনা নির্মান করা যেত, তা ভর্তুকি গেছে দেশের মানুষের কল্যাণে। আসল ঘটনা মোটেই তা নয় বলে জানা গেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ৭ই ডিসেম্বর ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর তথ্যে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদক কোম্পানিগুলো গত ১০ বছরে নিয়ে গেছে ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা! অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে এই বিপুল অংকের টাকা দেয়া হয়েছে তথাকথিত ‘সার্ভিস চার্জ পরিশোধ’ করার নামে। সত্যিকার স্বাধীন দুদক যদি সঠিক তদন্ত করে তবে এই টাকা কার কার পকেটে গেছে তা বেরিয়ে আসবে।
পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারে তার জন্যে শীত আসার আগ পর্যন্ত লোডশেড না করার ভর্তুকির যোগান দেয়া কোনো ব্যাপার নয়। শীত আসতে বাকী মাত্র ৩ মাস। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমে ১০০ ডলারের নিচে নেমেছে, এমন সময় তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত নাগরিকরা গ্রহণ করছেন না।
রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পারদর্শীতা ও সাফল্য এখন সারা বিশ্বে সমাদৃত ও সম্মানিত। তাঁকে ভুল তথ্য দিয়ে পারিষদবর্গ যদি দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তার জন্যে আখেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই বিব্রত হতে হয়…
মেজর টি. আই. এম. নূরুন নবী ও মেজর জাহাঙ্গীর তখন রাজউক অ্যানেক্স বিল্ডিং-এ গালফ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তা বছর পয়ত্রিশেক আগে তো বটেই। তখন থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের সখ্য। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে ‘অর্থকথা’ বহু প্রথমের পথিকৃৎ, অর্থকথা কার্যালয়ে ২X৮ লাইনের পিএবিএক্স এক্সচেঞ্জ স্থাপনের কাজটি সহজ করে দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর ভাই। কোনো ম্যাগাজিন অফিসে পিএবিএক্স সিস্টেম সেটিই প্রথম! ৩২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯১ সালের ঘটনা সেটি।
মাঝে দীর্ঘ সময় চলে গেছে। জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হলেও নবী ভাইয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া খুব ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত এই দুই মেজর সাহেবের ব্যবসায়ীক পার্টনারশিপও খুব দীর্ঘ হয়নি। পরবর্তী সময়ে নবী ভাই একক মালিকানায় ব্যবসা গ্রুপ গড়ে তোলেন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে।
হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত ফেসবুকের কল্যাণে নবী ভাইয়ের সাথে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হলো, মাঝে মাঝে কথা শুরু হলো, কথা ছিল এর মধ্যেই হয় উনি আসবেন আমাদের গুলশানের বাসায় অথবা আমি যাবো ওঁদের বারিধারার বাসগৃহে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। হঠাৎ খবর পেলাম নবী ভাই ওপেন হার্ট সার্জারির জন্যে ব্যাংকক যাচ্ছেন। আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে ২০১৫ সালে, তখন থেকেই কারো সিএবিজি’র খবর আমাকে কিছুটা হলেও উচ্চকিত করে, তার উপর এবারকারটা প্রিয় নবী ভাইয়ের!
পরশু খবর পেলাম ব্যাংককে নবী ভাইয়ের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। গতকাল তেমন কোনো আপডেট ছিল না, রুটিন প্রসিডিওর অনুযায়ী ওকে সিসিইউ অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর ছাড়া। ৪ জুলাই সকালে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদটি এলো, নবী ভাই ইন্তেকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজীউন।
জীবনের পরিসমাপ্তি মৃত্যুতে, একথা সর্বজনবিদিত, তারপরও মন মানতে চায় না। মানুষের চলে যাওয়ায় আমরা ব্যথিত হই, কাঁদি, জীবনের সৌন্দর্য সম্ভবতঃ এখানেই। নবী ভাই সবদিক থেকে একজন অভিজাত ব্যক্তি ছিলেন। সেনাবাহিনীর চৌকশ অফিসার থেকে পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ী, সবজায়গায় ছিল নবী ভাইয়ের রূচির ছোঁয়া।
পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানআহু ওয়া তা’আলা নবী ভাইকে জান্নাত নসীব করুন, তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই বেদনাভার বহনের ও ধৈর্য ধারণের শক্তি দিন। আমীন, সুম্মাহ্ আমীন...