কল্যাণ রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক শর্ত হচ্ছে, নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সে বাধ্য থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে এমনসব বিষয়ে হাত দেয়া হচ্ছে যেগুলো খুব স্পর্শকাতর। যেমন মসজিদে এসি চালানো যাবে না! (পরে মসজিদ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশোধন করেছেন প্রতিমন্ত্রী) সারা দিনে একটি মসজিদে সর্বোচ্চ দেড়/দুই ঘণ্টার বেশি এসি চলে না। প্রাথমিকভাবে সরকারের ১১টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার একেকটিতে ২ হাজার টনের বেশি এসি চলে! এর মধ্যে পানি ভবনের কথা আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এই ভবনে টয়লেটই আছে ১১৮টি! এ ধরণের আরো অসংখ্য ভবন রয়েছে। এসব ভবনের এসি নিয়ন্ত্রণ করলেই দেশে ১ সেকেন্ডও লোডশেডিং করা লাগবে না এবং দোকানপাটও রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। মানুষের জীবনস্পন্দন সচল থাকবে।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন সক্ষমতা করা হয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি! ঘোড়ার আগে লাগাম জোগাড়ের এই আইডিয়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানা নেই। ফসিল ফিউল বার্নড বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোল ফায়ার্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি খরুচে। আমরা আমাদের নিজস্ব কয়লার বিশাল মজুদ তুলছি না! বাংলাদেশের কয়লার মান উঁচু, মজুদ এতটাই বিশাল যে তা দিয়ে বর্তমানে চালু কয়ালাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতো বটেই, এমনকি ভবিষ্যতে যে ক’টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসছে সেগুলোও চলবে দীর্ঘদিন। এই জুনে অস্ট্রেলিয়া তাদের কয়লার দাম অনেক কমিয়েছে, সেখান থেকে আমদানিও করছি না। অথচ ডিজেলের দাম বাড়ানোর কথা বলে এই নারকীয় গরমের মধ্যে কষ্ট দিচ্ছি দেশের মানুষকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ১লা মার্চ থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্যে স্যুট পরা বন্ধের নির্দেশ দিন। তালপাকা গরমের মধ্যে স্যুট পরে ডাবল এসি দিয়ে সরকারের উপ সচিব থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত লোকজন বসে থাকে! স্যুট পরিধান বন্ধ হলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এসি ব্যবহারে এলিজেবল্ নন এমন হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এসি ব্যবহার করে চলেছেন। এগুলো বন্ধে এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নিন। ফাইভ স্টার হোটেলগুলোকে নির্দেশ দিন হোটেলের অপ্রয়োজনীয় প্রতিটি অংশে যেন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। ভালো সময় ফিরে এলে হলে নর্মস/কমপ্লায়েন্স এসব আবার দেখা যাবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু’র বক্তব্য থেকে জানা গেছে, গত ১০ বছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মনে হতে পারে এত বড় অংকের টাকা, যা দিয়ে আরো ২টি পদ্মা সেতুর মত জিডিপিতে অবদান রাখায় সক্ষম স্থাপনা নির্মান করা যেত, তা ভর্তুকি গেছে দেশের মানুষের কল্যাণে। আসল ঘটনা মোটেই তা নয় বলে জানা গেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ৭ই ডিসেম্বর ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর তথ্যে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদক কোম্পানিগুলো গত ১০ বছরে নিয়ে গেছে ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা! অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে এই বিপুল অংকের টাকা দেয়া হয়েছে তথাকথিত ‘সার্ভিস চার্জ পরিশোধ’ করার নামে। সত্যিকার স্বাধীন দুদক যদি সঠিক তদন্ত করে তবে এই টাকা কার কার পকেটে গেছে তা বেরিয়ে আসবে।
পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারে তার জন্যে শীত আসার আগ পর্যন্ত লোডশেড না করার ভর্তুকির যোগান দেয়া কোনো ব্যাপার নয়। শীত আসতে বাকী মাত্র ৩ মাস। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমে ১০০ ডলারের নিচে নেমেছে, এমন সময় তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত নাগরিকরা গ্রহণ করছেন না।
রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পারদর্শীতা ও সাফল্য এখন সারা বিশ্বে সমাদৃত ও সম্মানিত। তাঁকে ভুল তথ্য দিয়ে পারিষদবর্গ যদি দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তার জন্যে আখেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই বিব্রত হতে হয়…
লেখক: সৈয়দ রানা মুস্তফী, জাতীয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব