যশোরের ঝিকরগাছায় ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে গিয়ে আগুনে পুড়ে পুতুলরানী দাস (১৬) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটালেও তাকে রক্ষা না করে চুপচাপ ছিলেন মাতাল স্বামী। অবশ্য স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাগের বসে আত্মহত্যা করেছে পুতুল এবং তাকে রক্ষা করতে গিয়ে স্বামী প্রদীপ দাসও (২৫) দগ্ধ হয়েছে।
নিহতের মা পুষ্পরাণী দাস জানান, প্রতিবেশীর সঙ্গে টিউবওয়েলে যাওয়া নিয়ে ঝগড়া হওয়ায় চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা পুতুলকে সেখানে যেতে নিষেধ করেছিল তার স্বামী। কিন্তু পুতুল নিষেধ অমান্য করে যেতে চাওয়ায় তাকে ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানোর কথা বলে প্রদীপ। তার কথায় নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় পুতুল। কিন্তু স্বামী তাকে রক্ষার কোনো চেষ্টাই করেনি।
তিনি জানান, পুতুলের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ঘরের দরজা খুলতে বললেও প্রদীপ ছিল নিশ্চুপ। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখা যায় পুতুল আগুনে জ্বলছে আর প্রদীপ খাটে বসে সিগারেট টানছে। লোকজন পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে প্রদীপও সেই সময় আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। এতে তার হাত পুড়ে যায়।
প্রতিবেশী মৌসুমি দাস বলেন, মঙ্গলবার রাতে প্রদীপ ও তার স্ত্রী পুতুলের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তাদের চিৎকার শুনে বাইরে এসে দেখেন ঘরের মধ্যে আগুন জ্বলছে। এসময় প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে ঝিকরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। পুতুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার করা হয়। সেখান থেকে সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে গোপালগঞ্জে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যেই মারা যান পুতুল।
স্বজনদের অভিযোগ বিয়ের পর থেকেই নির্যাতন করতো প্রদীপ এবং ইচ্ছা করেই তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুতুলের স্বামী প্রদীপ ও তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, রাগের বসে আত্মহত্যা করেছে পুতুল। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রদীপও দগ্ধ হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) জুয়েল ইমরান বলেন, ঘটনা শুনেই আমরা রাতে ঘটনাস্থলে যাই। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। আর অভিযোগ ওঠায় প্রদীপকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রদীপ ও তার পরিবার ১৪ বছর আগে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করেন এবং প্রায় একবছর আগে পুতুল তার স্বামীর সংসার থেকে ফিরিয়ে এনে বিয়ে করে প্রদীপ।