সাধারণের যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর প্রবেশদ্বার। রোববার (২৬ জুন) সকাল ৬টায় যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এ সেতুর দ্বার। গৌরবের পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে সহজ হলো ঢাকার সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ।
এর আগে শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যান চলাচলের সঙ্গে খুলে দেওয়া হয় দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট। সবকয়টি গেটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হচ্ছে। নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে থ্রি-হুইলার ছাড়া যেকোনো গাড়ি পার হতে পারছে।
সরকারের নির্ধারণ করা টোল হার অনুযায়ী, ছোট বাসে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ২০০০ টাকা এবং বড় বাসে ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ছোট ট্রাকের টোল ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫৫০০ টাকা। পিকআপের টোল ১২০০ টাকা। কার ও জিপের টোল ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা এছাড়া মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতু নিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তিতে জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার, পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনও ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তিন চাকাবিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা ইত্যাদি), হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনও ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।
এর আগে শনিবার (২৫ জুন) মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় ১২টায় এক বণার্ঢ্য অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকসহ হাজার হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী টোলপ্লাজায় প্রথম টোল দেন এবং তার গাড়িবহর নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেন।
এদিকে জানা গেছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি রুটে বাস পরিচালনা করবে। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৬৫ বাস পরিচালনা করব। এর অধিকাংশই এসি বাস। বর্তমানে শুধু খুলনা ও যশোর রুটে বিআরটিসি বাস চলে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি পরিবহন কোম্পানির এসি ও নন এসি বাসও আগামীকাল সকাল থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করবে।
৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের এ সেতু। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় সম্ভাবনা আর প্রত্যাশার নতুন দিক উন্মোচিত হলো।